বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ০১:১৮:৩৪

হাসনাতের মোবাইল থ্রিমা ব্যবহার করে জঙ্গিরা

হাসনাতের মোবাইল থ্রিমা ব্যবহার করে জঙ্গিরা

জামিউল আহসান সিপু: গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলাকারীরা ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের বাইরে যোগাযোগ করেনি। রেস্টুরেন্টটি অবরুদ্ধ রাখার সময় সপিরবারে অবস্থানকারী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে জঙ্গিরা। হাসনাতের মোবাইল ফোনে তারা থ্রিমা অ্যাপস্ ডাউনলোড করে ঘটনার বীভত্সতার চিত্র পাঠায়।

গুলশানের হামলার ঘটনার তদন্তকারী ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান এসব তথ্য। তিনি বলেন, জঙ্গিরা থ্রিমা অ্যাপস্ ব্যবহার করে হামলার তথ্য ও চিত্র পাঠিয়েছে। তারা হাসনাত রেজা করিমের মোবাইল ফোন থেকে অ্যাপসটি ডাউনলোড করে। থ্রিমা ব্যবহার করায় জঙ্গিরা কাদের কাছে তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছে সে বিষয়টি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

গুগলে থ্রিমা অ্যাপস্ সম্পর্কে সন্ধান করে জানা গেছে, ২০১২ সালে সুজারল্যান্ডের জুরিখে জার্মান বংশোদ্ভূত ম্যানুয়েল ক্যাসপার এই অ্যাপসিট তৈরি করেন। ২০১৩ সালে এটি এন্ড্রয়েড অ্যাপস্ হিসাবে চালু হয়। এটি জার্মান অ্যাপস হিসাবে সারা  বিশ্বে পরিচিত। এখন পর্যন্ত এই অ্যাপসিট ঘন্টায় সারাবিশ্বে ২ লাখ বার ব্যবহার হয়। থ্রিমা অ্যাপস্ ব্যবহার করতে কোন ই-মেইল বা মোবাইল ফোন নম্বরের প্রয়োজন হয় না।

এটি কিউআর (কুইক রেসপন্স কোড) কোড দিলে অন্য মোবাইল ফোনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। এই অ্যাপস্ ব্যবহারকারী দুইটি মোবাইল ফোনের মধ্যে তৃতীয় কোন ব্যক্তি কখনই প্রবেশ করতে পারবে না। ই-মেইল নম্বর বা মোবাইল ফোন নম্বরের প্রয়োজন হয় না বলে কার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে-সেটিও শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।

ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীরা মোবাইল ব্যবহারের প্রযুক্তিগত দিক থেকে দক্ষ ছিল। তারা এমন অ্যাপস ব্যবহার করেছে যে পরবর্তীতে সেটি যেন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে শনাক্ত করতে না পারে। হলি আর্টিজানে হামলার পর সেখানে নিহত ও যাদের জিম্মি  করা হয়েছে তাদের ব্যবহূত ৩০ টি মোবাইল ফোন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের জন্য জব্দ করেছে। এসব মোবাইল ফোনের আইটি ফরেনসিক রিপোর্ট প্রস্তুত করছে সিআইডি।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ওই কর্মকর্তা জানান, হামলাকারীরা যার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ওই ব্যক্তি দেশে বা দেশের বাইরে অবস্থান করেছিল-সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিআইডি’র আইটি ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে তিনি ধারণা করছেন, জঙ্গিরা দেশের বাইরে অন্য কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। হাসনাত রেজা করিম জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন যে, হামলাকারীরা তার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করে। তারা মোবাইল ফোন দিয়ে জঙ্গিরা থ্রিমা অ্যাপস লোড করে বীভত্সতার চিত্র ধারণ করে এবং ঘটনার ভিডিও করে। মোবাইল ফোন দিয়ে কথোপথন হয়নি।

উল্লেখ্য, হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করার সময় হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে। এই অভিযোগে ২০১২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি করেছে, হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে হিযবুত তাহরীরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমান হয়নি। তিনি ওই সময় স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন।

হাসনাত রেজা করিমের সঙ্গে গুলশানে নিহত ৫ জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে-এমন সন্দেহ থেকেই ডিবি পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আটকের ৬ দিন পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হাসনাত রেজা করিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার বাবা রেজাউল করিম দাবি করেছেন, ছেলে এখনও বাসায় ফিরেনি।-ইত্তেফাক

১৪ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে