বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৫০:১৫

দুর্ধর্ষ কয়েক বড় ভাই গোয়েন্দা জালে

দুর্ধর্ষ কয়েক বড় ভাই গোয়েন্দা জালে

আতাউর রহমান: গুলশান আর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর বসে নেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। একের পর এক জঙ্গি হামলা পরিকল্পনা নস্যাৎ করার পাশাপাশি দেশ থেকে জঙ্গিদের মূল উৎপাটনে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গোয়েন্দারা। জঙ্গিদের চিহ্নিত কয়েক 'বড় ভাই'কে গ্রেফতারে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। এরই মধ্যে অন্তত ১০ থেকে ১২ দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জালে ফেলা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। তারা সবাই নিষিদ্ধ জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের (এবিটি) সদস্য। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারে এসব জঙ্গি। গোয়েন্দা সূত্রে মিলেছে এসব তথ্য।


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় মূল হামলাকারী জঙ্গিরা কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়। তবে তাদের পেছনে সহযোগী হিসেবে আরও একটি জঙ্গি গ্রুপ ছিল। ওই গ্রুপটির বেশ কয়েক সদস্যকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়েছে। বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা নজরে রয়েছে। সব মিলিয়ে ঘৃণ্য ও নৃশংস ওই হামলার ঘটনাটির তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, চিহ্নিত আরও কয়েক জঙ্গি সদস্যকে আইনের আওতায় নিতে পারলেই গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার সব কিছু পরিষ্কার হবে। বেরিয়ে আসবে নাশকতার নেপথ্য কারিগর থেকে শুরু করে পরিকল্পনাকারী এবং অর্থদাতাদের নামও। পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন সে চেষ্টাই করছে।

দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় হাতেনাতে গ্রেফতার জঙ্গি শরিফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম সাম্প্রতিক হামলা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। ভবিষ্যতে কয়েকটি হামলা সম্পর্কেও তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে আপাতত এসব হামলা আগাম মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া গুলশান হামলায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই ঘটনার আড়ালে থাকা জঙ্গিদের বিষয়েও ধারণা পাওয়া গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, গুলশানে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় বিদেশিদের জিম্মি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি আছে। ওই ঘটনায় নেপথ্যে থাকা বেশ কয়েক দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে গোয়েন্দা জালে নেওয়া হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, গুলশান হামলার পর এখন পর্যন্ত হাইপ্রোফাইল অন্তত ৬ জঙ্গিকে গোয়েন্দা জালে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও অন্তত চারজনকে আটক করা হয়েছে। যাদের সবাই কোনো না কোনোভাবে গুলশান হামলা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে জড়িত।

ওই কর্মকর্তা বলেন, মাঠ পর্যায়ে থাকা জঙ্গিদের গ্রেফতারের পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনগুলোর মূল উৎপাটনে এবার কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য অভিযান ও তদন্ত কার্যক্রমেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি আরও কয়েকটি বড় হামলা আগাম মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাগুলোতে অন্যতম মাস্টার মাইন্ড হিসেবে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া। তাকে আইনের আওতায় নেওয়া গেলে হয়তো জঙ্গি হামলার সবকিছুই বেরিয়ে আসবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগে কয়েক দফায় তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালালেও এখন পর্যন্ত তাকে আইনের আওতায় নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যার পরিকল্পনাকারী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা, তার সহযোগী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জুন্নুন শিকদারকেও খুঁজছে গোয়েন্দারা।

গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি নিবরাস ইসলাম ও শোলাকিয়া হামলায় জড়িত আবীর রহমানও নর্থ সাউথের সাবেক ছাত্র। এ জন্যই গোয়েন্দারা সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে পলাতক রানা ও জুন্নুন শিকদারের যোগসূত্র খুঁজছে। পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির ১১ দুর্ধর্ষ জঙ্গি এখনও পলাতক। ধারণা করা হচ্ছে, পুরনো এসব জঙ্গি নেতাই সম্প্রতি দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বড় ধরনের চেষ্টা করে আসছে।

তাদের মধ্যে ঢাকার হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, বরিশালের মাওলানা আবু বক্কর ওরফে সেলিম হাওলাদার, কিশোরগঞ্জের মুফতি শফিকুর রহমান, কুমিল্লার মুফতি আব্দুল হাই, ঝিনাইদহের রবজেল হোসেন, আজিজুর রহমান, ইউনুস আলী ও আজিম উদ্দিন, গাইবান্ধার আবু তালেব আনসারী ও মতিন মেহেদী এবং খুলনার তরিকুল ইসলাম অন্যতম। ওই সূত্রটি জানায়, দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি উত্থানের পর পলাতক এসব জঙ্গি নেতার অবস্থান শনাক্তের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।-সমকাল

১৪ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে