বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ০৪:১৭:২২

বিএনপির নয়া পরিকল্পনা!

বিএনপির নয়া পরিকল্পনা!

নজরুল ইসলাম: গুলশান ও শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এসব ঘটনা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে দলটির হাইকমান্ড। পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়তে কাজ শুরু করেছেন নীতিনির্ধারকরা। এরই অংশ হিসেবে আজ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে তাদের পরামর্শ নেয়া হবে। তবে কৌশলগত কারণে এ প্রক্রিয়ায় স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতকে এড়িয়ে চলবে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।


সূত্র জানায়, গুলশান ও শোলাকিয়ায় নৃশংস জঙ্গি হামলার পর সরকার, আইনশৃংখলা বাহিনী, প্রতিবেশী ভারতসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ভূমিকার ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলীয়ভাবে এসব ঘটনার প্রকৃত তথ্যসংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনার পর নেতাকর্মীদের সতর্কভাবে চলাফেরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৩ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সব ভেদাভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। খালেদা জিয়ার এমন আহ্বানের পর আবারও আলোচনায় চলে আসে জামায়াত। স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সম্ভব নয় বলে সবাই মনে করছেন। ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতারাও জাতীয় ঐক্যের আগে জামায়াত ছাড়তে বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ঐক্য চাইলে আগে তাকে জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।

কিন্তু এর আগে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এক পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষ থেকেই বৃহত্তর ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানায় দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। আরও জানা গেছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর করণীয় নিয়ে দলের সিনিয়র কয়েক নেতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

তার বাসায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ওই নেতারা চলমান পরিস্থিতিতে কী করা উচিত সে ব্যাপারে একগুচ্ছ লিখিত পরিকল্পনা চেয়ারপারসনের হাতে তুলে দেন। ওই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে দলের স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতা ও জোটের সঙ্গে বৈঠক, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, ওলামা-মাশায়েক, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মালিক ও সম্পাদকসহ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়।

এছাড়া খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫টি এবং বৃহত্তর ১৯ জেলায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ করার প্রস্তাব দেন তারা। একই সঙ্গে চলমান ইস্যুকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে তারা চেয়ারপারসনকে সক্রিয় উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন। সরকার তাদের আহ্বানে সাড়া দিক বা না দিক বিএনপির পক্ষ থেকে ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখা উচিত বলে মত দেন ওই নেতারা। সরকার শেষ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যে সাড়া না দিলে যাতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা যায় সেই টার্গেট নিয়ে এগোতে হবে বলেও পরামর্শ দেন তারা।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব পরিকল্পনা ও পরামর্শের পর খালেদা জিয়া আরও কয়েক নেতাদের সঙ্গে গত কয়েক দিনে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেন তিনি। বিষয়গুলো নিয়ে জোট ও স্থায়ী কমিটির মতামত নেয়ার কথা বলেন তারা। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে এ মতবিনিময় অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সম্প্রতি দেশে যেসব ঘটনা ঘটছে তা চিন্তার বিষয়। এসবের পেছনে অন্য কোনো ভয়ংকর ঘটনা আছে কিনা বা ভবিষ্যতে এর চেয়েও ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে পারে কিনা তা আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা মনে করি, এটা দেশের সংকটময় মুহূর্ত। এ অবস্থায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

আমরা জনগণের মধ্যে সেই ঐক্য ফেরাতে চাই। আমাদের নেত্রী নিঃশর্তভাবে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। সরকারে উচিত এ ডাকে সাড়া দেয়া। যদি তারা সাড়া না দেয় তাহলে গুম হত্যা উগ্র ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বসে থাকবে না। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেয়া হবে।


দলের এক জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন দলের হাইকমান্ড। খালেদা জিয়া মনে করেন, গুলশানের ঘটনা সার্বভৌমত্বের ওপর একটা বড় আঘাত। এ অবস্থায় বিএনপির বসে থাকলে চলবে না। এ অবস্থায় কী করা যায় তা নিয়ে সবার কাছে থেকেই পরামর্শ নেবেন তিনি। এরপরই বুধবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।

আজ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। পর্যায়ক্রমে অন্যদের সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় দেখা করেছেন এমন এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার (চেয়ারপারসন) উপস্থিতিতে ঢাকাসহ যে সমাবেশের কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে নেতাদের আরও ভাবতে বলেছেন। তবে দলের সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে দেশের বৃহত্তর ১৯ জেলায় যে সমাবেশের কথা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন তিনি। পরিস্থিতির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নেতাদের নির্দেশনা দেন তিনি।
 

গত কয়েক দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার ঘটনায় দেশের জনগণ ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন। সরকারও এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য জাতির সামনে হাজির করতে পারেনি। বরং সরকার ব্লেম গেম খেলছে। এতে করে বিএনপির নেতাকর্মীসহ দেশের জনগণের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এক সময় মাদ্রাসা পড়ুয়াদের ব্যাপারে এসব অভিযোগ শোনা গেলেও গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়াদের ব্যাপারে একই অভিযোগ উঠেছে।

এটা একটা চিন্তার বিষয়।  বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, এ পরিস্থিতি যদি এখনই প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে আফগানিস্তান বা সিরিয়ার জনগণের মতো বাংলাদেশকেও একই পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাই, সে ক্ষেত্রে সব দলকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে ঐকমত্য সৃষ্টি করে এসব সন্ত্রাস দমন করা সহজ হবে।


লন্ডন যাচ্ছে বিএনপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল : ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি সেমিনারে যোগ দিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ১৬ জুলাই লন্ডন যাচ্ছেন। এ সেমিনারে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলেরও যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। সেখানে দেশের গণতন্ত্র, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, জঙ্গি হামলাসহ চলমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করা হবে। মির্জা ফখরুল ছাড়াও প্রতিনিধি দলে থাকবেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ।-যুগান্তর

১৪ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে