বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:৫৭:৪৩

বিএনপির প্রস্তাবে ‘না’, সরকারের ৩ কৌশল

বিএনপির প্রস্তাবে ‘না’, সরকারের ৩ কৌশল

পাভেল হায়দার চৌধুরী : সামাজিক-পারিবারিক সচেতনতা, বড় অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করবে সরকার। ধারাবাহিক জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে এই কৌশলগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বিএনপি জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান জানিয়েছে তাতে ক্ষমতাসীনরা সাড়া দেবে না বলেও জানা গেছে।

সরকারের দুই মন্ত্রী জানান, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে গৃহীত এই কৌশলগুলোতে অবশ্যই সুফল আসবে বলে আশা করছেন তারা। ওই দুই মন্ত্রীর মতে, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসবাদের পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। তাই এ ইস্যুতে তাদের সঙ্গে সরকারের ঐক্য বা আলোচনার কোনও সম্ভাবনা নেই।

দুই মন্ত্রী আরও বলেন, গুলশান হামলার পরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারণ গুলশান হামলার পরে খালেদা জিয়া এটিকে ‘অভ্যুত্থান’ বলে মন্তব্য করেছেন। যদি তাদের কোনও ইন্ধনই না থাকবে এতবড় একটি সন্ত্রাসী হামলাকে ‘অভ্যুত্থান’ কেন বলা হল?

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে বিএনপিকে এর থেকে বাইরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। যদিও গত সাত বছরে বিএনপির নানা কর্মকাণ্ড ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ‘অ্যালার্জি’ ধরিয়েছে।  এছাড়া দলটি এখনও জামায়াতমুক্ত হতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পারিবারিক-সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও প্রযুক্তি নির্ভর করে তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোসহ বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গৃহীত কৌশল সবার কাছে স্পষ্ট হবে। মন্ত্রী বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না। আমরা যেকোনো মূল্যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ রুখবই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিএনপির সঙ্গে ঐক্য বা আলোচনা করে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা যাবে না। কারণ এগুলোতে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে। তাই এ ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ অবশ্যই নির্মূল হবে, সেটা সরকারের গৃহীত কৌশলের মধ্য দিয়েই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার দল জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে খুশী। যা তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট। খালেদা জিয়া গুলশান হামলাকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সুতরাং অভ্যুত্থান বলে তিনি তো তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেনই। ফলে তার বা তার দলের সঙ্গে এ ইস্যুতে কিসের ঐক্য হবে।

ক্ষমতাসীন দলের নীতি-নির্ধারকরা মনে করেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাইরে সাধারণ জনসাধারণকেও জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সচেতন করে তুলতে হবে। তাই পাড়া-মহল্লায় জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। এরজন্য কমিটি করে কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি বিভাগ ধরে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলছেন। এর মধ্য দিয়ে সুফল পাওয়া যাবে।

তারা জানান, সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি জঙ্গি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তদের ধরিয়ে দিতে পারলে বড় অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই ঘোষণা আসবে। তাতে করে সাধারণ জনসাধারণ এদের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে উদ্ধুদ্ধ হবে। শুধু তাই নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পারলে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়ার একটি পরিকল্পনার কথাও ভাবছে সরকার। এতে করেও আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হবে সধারণ জনসাধারণ। এছাড়া পারিবারিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রচারণাও রাখতে হবে।

সূত্র জানায়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা করে, তবে তা স্থায়ী হয় না। পরিমাণেও আর্থিক এ পুরস্কার কম ছিল। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও আধুনিক প্রযুক্তিতে শক্তিশালী করা ও তাদের কর্মদক্ষতা শানিত করা হবে। সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে কর্মতৎপর ও সতর্ক রাখা হবে সার্বক্ষণিক। এর ফলে আশানুরূপ সাফল্য আসবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা।

ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ আরও তিন নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)  বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে সরকার সফল হতে পারলে সরকারের স্থায়িত্ব যেমন নির্বিঘ্ন হবে, তেমনি দল হিসেবে আওয়ামী লীগও আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। তাই দল ও সরকার যৌথভাবে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছে।  সরকারের কর্ম-কৌশলে জ্বালাও-পোড়াও যেভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদও সেভাবে মোকাবেলা করতে পারবে সরকার। -বাংলা ট্রিবিউন
১৪ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে