বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ০৮:০২:৫১

জঙ্গি তৎপরতায় নর্থ সাউথের পর বুয়েট-চট্টগ্রাম

জঙ্গি তৎপরতায় নর্থ সাউথের পর বুয়েট-চট্টগ্রাম

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে নজর ফিরেছে বিশ্লেষকদের।  কারণ এ দুটি হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা অংশ নেয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কিছু প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গোপনে এদের তৎপরতা চলছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীই হিযবুত তাহরীরের মতো নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হয়েছেন ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ রাজনীতির স্বপ্ন নিয়ে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জনকে জঙ্গি সম্পৃক্ততা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নর্থ সাউথের ১১ জন, বুয়েটের ৬ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগের ২ জনসহ এক শিক্ষক।

তবে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে।

এছাড়া বাংলাদেশে জিহাদি গ্রুপ তৈরির চেষ্টায় ২০১৫ সালে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পাস করা একজনকে আটক করা হয়।

জঙ্গি ইস্যুতে ২০১০ সাল থেকে নর্থ-সাউথের পাশাপাশি যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম বারবার সামনে এসেছে সেগুলো হলো- দারুল ইহসান, ব্র্যাক, বুয়েট এবং ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। তবে নর্থ-সাউথের পর সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের নাম।

সবচেয়ে শঙ্কার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক মহিউদ্দন আহমেদ হিযবুত তাহরীরের প্রধান বলে যখন চিহ্নিত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সেই বহিষ্কারই একটা ইঙ্গিত দেয়।

কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানে দাওয়াতের কাজ করলে একটু বেশি নম্বর পাওয়া যায় বলে অভিযোগ আছে, নানা জঙ্গি তৎপরতা গোপনে চলছে জেনেও ইমেজের কারণে উদ্যোগ নেওয়া হয় না, সেটা সমস্যাজনক। সেটা জঙ্গি হওয়ার পথে আরও এগিয়ে যেতে উদ্যোমী করে। এটা কেবল নর্থ সাউথ তা নয়, অন্য যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই সত্য।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, নর্থ-সাউথে খুব সহজেই হিযবুত তাহরীরের মতো জঙ্গি সংগঠন বেড়ে উঠতে পারার অন্যতম কারণ তাদের প্রশাসনের সহযোগিতা। প্রশাসন থেকে কখনওই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমনকি তাদের গ্রন্থাগারে জঙ্গিবাদি বই পাওয়া গেলেও সে বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত দল গতবছর অক্টোবরে একটি প্রতিবেদন দেয় যেখানে উল্লেখ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্রন্থাগার পরিদর্শন করতে গেলে তারা সেখানে নিষিদ্ধ জঙ্গি তৎপরতামূলক হিযবুত তাহরীরের বই পান। তবে এসব বই পাওয়া গেলেও কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে কথাও বলতে চাইছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই।

ইউজিসির দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা। অপর সদস্য ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের উপপরিচালক জেসমিন পারভীন।

এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে ব্লগার রাজীব হায়দার শোভনকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনায় পুলিশ নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফয়সাল বিন নাঈম ও রেজওয়ানুল হককে গ্রেফতার করে এবং পরে তারা হত্যাকা-ের পরিকল্পনা ও সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করে ফৌজাদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়।

এদিকে এক সময় জামায়াত শিবিরের আখড়া হিসেবে পরিচিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন জঙ্গি সম্পৃক্ততায় অভিযুক্ত হয়েছেন। এছাড়া ছোটখাটো নানা ঘটনায় নাম উঠে এলেও গণমাধ্যমে সেগুলো আসেনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ বছরই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবদুল গাফফার, মাহবুবুল আলম, মোস্তাসির মেহেদী হাসান ওরফে অনিন্দ্যর জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা উঠে আসে যার মধ্যে মেহেদী হাসান সম্প্রতি অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকা-ে জড়িত বলে অভিযোগ আছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে এই জঙ্গি সাপ বেরিয়ে আসছে, ধরে নিতে হবে এদের সুরক্ষিত করার মতো একটা গর্ত সেখানে আছে। যেখানে জ্ঞান দান করা হবে, সেখানে কোন ব্যাকগ্রাউ-ের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে, সেগুলো অবশ্যই বিবেচনার বিষয়। দিনের পর দিন এগুলোতে মনোযোগ না দেওয়ায় যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকেই তারা ঢুকে পড়েছে, সেখানে পরম্পরা তৈরি করেছে।  সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন
১৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে