বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬, ১০:৪৯:১৭

আগামী সপ্তাহে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীরটা বাতিল

আগামী সপ্তাহে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীরটা বাতিল

ওমর ফারুক : আগামী সপ্তাহে বাতিল হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট। একই অপরাধে ফাঁসিতে ঝোলানো জামায়াতের শীর্ষনেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও কামারুজ্জামানের প্লট তিনটিতে ভবন নির্মাণ হয়ে যাওয়ায়, ডেভেলপারের অংশ বাদ দিয়ে বাকি অংশ দখলে নেবে সরকার।

এ ব্যাপারে আইনগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য দিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

এরশাদ সরকার ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্লটগুলো আলোচিত এসব অপরাধী রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দ নিয়েছিলেন।

জানা গেছে, রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাত কাঠা আয়তনের একটি প্লট রয়েছে। মতিউর রহমান নিজামীর প্লট রয়েছে বনানীর ১৮ নম্বর সড়কে, প্লট নম্বর-৬০।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্লট নিয়েছিলেন উত্তরা আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কে। তার প্লট নম্বর ৫।

জামাতের অপর নেতা কামারুজ্জামান প্লট পান এরশাদ আমলে মিরপুর সাংবাদিক কলোনিতে। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের ব্লক-এ, ৪ নম্বর সড়কে তার প্লট নম্বর ১০৫।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লটটি বর্তমানে খালি। বরাদ্দ পেলেও সেখানে কিছু করেননি তিনি। তবে বাকি তিনজনের প্লটে রয়েছে তিনটি ছয়তলা ভবন। মিশন ডেভেলপার নামের একটি বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে তারা ভবনগুলো নির্মাণ করে এগুলোর শেয়ার ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

গণপূর্তমন্ত্রী জানান, বিএনপি আমলে নিজামীকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছে ১৩/এ ধারায়। এই ধারাটি হলো জাতীয় ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদেরকে প্লট দেওয়ার জন্য।

কিন্তু নিজামীর অবদান কী? তার অবদান হলো মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে নিজামী যে বীরত্ব দেখিয়েছে, সে জন্যই তাকে প্লট দেওয়া হয়েছিল।

প্লট পাওয়ার পর নিজামী তাদেরই একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান মিশনকে দিয়ে সেখানে ছয়তলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। এ কারণে মিশনের অংশ বাদ দিয়ে নিজামী অংশ আমরা নিয়ে নেব। এ ব্যাপারে রাজউক লিগ্যাল অ্যাকশনে যাচ্ছে।

আর, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট রাজউকের আগামী সপ্তাহের বোর্ডসভায় বাতিল করে দেওয়া হবে।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ পাঁচ কাঠার প্লট পেয়েছেন উত্তরায়। তিনিও মিশনকে দিয়ে ওই প্লটে ভবন নির্মাণ করেছেন।

এই ভবন নির্মাণের বেলায় তিনি আইন মানেননি। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী যতটুকু ফার (এফএআর-ফ্লোর এরিয়া রেশিও) থাকার কথা, সেটা তিনি মানেননি। রাজউককে আমি বলেছি, আইন অনুযায়ী এটা বাতিল করে প্রয়োজনীয় অ্যাকশন নিতে।

এক প্রশ্নের জবাবে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি ফার না মানে, তাহলে তো সেই বিল্ডিংটি ভাঙার অধিকার আমাদের আছে।

তিনি আরও বলেন,  জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কামারুজ্জামানকে পাঁচ কাঠার প্লট দেয় মিরপুর সাংবাদিক কলোনিতে। সেখানে তিনিও ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেছেন মিশন ডেভেলপারকে দিয়ে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে বলেছি, ডেভেলপারের অংশ বাদ দিয়ে কামারুজ্জামানের অংশ বাজেয়াপ্ত করতে।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রাজউকে চলে গেছে। রাজউক ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসব বরাদ্দ বাতিলে ব্যবস্থা নেবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী যাদের প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা হবে, তাদের পরিবারকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। ক্ষতিপূরণ কেন দেব? অন্য মানবতাবিরোধী অপরাধীরা সরকারের কোনও প্লট পেয়েছেন কিনা, তারও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।

ওই সময়ে যারা প্লটগুলো বরাদ্দ দিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এসব ছিল সরকারের সিদ্ধান্ত। যখন যে সরকার ছিল, সে সরকার নির্দেশ দিয়েছে, রাজউক কাজ করেছে। এটা নিশ্চিত যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনও ‘যুদ্ধাপরাধী’কে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। -বাংলা ট্রিবিউন
১৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে