শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬, ০৪:২৭:৩৫

নর্থ সাউথকে প্রশ্ন, ১৫ দিনের মধ্যে উত্তর চায় তদন্ত দল

নর্থ সাউথকে প্রশ্ন, ১৫ দিনের মধ্যে উত্তর চায় তদন্ত দল

নিউজ ডেস্ক: সুনির্দিষ্ট ১০টি প্রশ্ন নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত দল। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা ও অনুসন্ধানকালে এগুলোর একটিরও সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুর রহমান ও রেজিস্ট্রার মো. শাহজাহান।

বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরেই তারা জানিয়েছেন, এসব বিষয়ে তারা অবগত নন। বোর্ড অব ট্রাস্টির (বিওটি) সিদ্ধান্ত অনুসারে সেগুলো করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় সাত মাস আগে গত ডিসেম্বর মাসে চাওয়া এসব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত দল। তাদের অনড় অবস্থানের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বিওটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট তথ্যসমূহ লিখিতভাবে তদন্ত দলকে জানানো হবে।

এরপর তদন্ত দল ফিরে এসেছে। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যাম্পাস এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি এবং তদন্ত দলও তাদের মুখোমুখি হয়নি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুর রহমান মিডিয়াকে বলেন, 'এটি ইউজিসির রুটিন পরিদর্শন। তারা যেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, সেগুলোর জবাব দেওয়া হবে।' তিনি বলেন, সরকারের চাওয়া প্রতিটি সহযোগিতা তারা আন্তরিকভাবেই দেবেন।

চার সদস্যবিশিষ্ট এ তদন্ত দলের প্রধান ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম। সদস্যরা হলেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ নওয়াজ আলি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের উপ-পরিচালক জেসমিন পারভীন ও সহকারী পরিচালক বিষ্ণু মল্লিক। দুপুর ১২টার দিকে তদন্ত দল রাজধানীর বসুন্ধরায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যায় এবং প্রায় তিন ঘণ্টা একটানা তদন্ত করে। বিকেল ৩টার দিকে বের হওয়ার সময় তারা গণমাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে যায়।

আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় : নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তদন্ত দলের প্রথম প্রশ্ন বা অনুসন্ধানের বিষয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা সংক্রান্ত। কীভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক হিসাব সংরক্ষণ করে, বৈদেশিক কোনো সহায়তা তহবিলের কোষাগারে ঢোকে কি না, বিদেশি কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের শিক্ষা বিনিময় চুক্তি আছে এসব নিয়ে কথা বলেন তারা।

দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ কোটি টাকার জমি কেনা নিয়ে সংঘটিত দুর্নীতির সঙ্গে বিওজির কারা কারা জড়িত। এ প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র দেড় মাস আগে যোগ দিয়েছেন। অতীতের কোনো তথ্য সম্পর্কে জানা নেই তার। উপাচার্যের উত্তরে অসন্তোষ প্রকাশ করে তদন্ত দলের প্রধান দিল আফরোজ বেগম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় একটি চলমান প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রশাসনিক সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকতে হবে। ইউজিসি জানতে চাইলে তা জানাতে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইনত বাধ্য।' তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে একাধিক শিক্ষার্থীর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

ক্যাম্পাসের জমি কিনতে টাকা লুটপাট: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালে আশালয় হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে জমি কেনা হয় বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটির সূত্র। কিন্তু ইউজিসি এ ব্যাপারে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যদের মধ্যে মতদ্বৈধতার প্রমাণ পেয়েছে। বিওটির সদস্য ড. রওশন আলম জমি কেনার ব্যাপারে আপত্তি তোলেন। এ কারণে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে মানা করা হয় এবং সিদ্ধান্ত না মানলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।

এ নিয়ে তিনি আদালতে মামলা করেন। কিন্তু ইউজিসির তদন্ত দল রওশন আলমের মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা দেওয়া হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে ২৫০ কোটি টাকা নিয়ে ওই জমির বায়না করা হয়। বাকি টাকা ব্যাংক থেকে লোনের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। এ সম্পর্কে ওই সময় ইউজিসি তার তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্যে জানায়, 'এটা অনিয়ম। প্রকৃতপক্ষে, বেসরকারি আইন ২০১০ এর ধারা ৯ (৩) অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনোভাবে দায়বদ্ধ বা হস্তান্তর করা যাবে না।'

এ ছাড়া এ জমির বায়নাপত্রের ফটোকপি ও বিওটির সিদ্ধান্তপত্রের কপি চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত দলকে তা সরবরাহ করেনি। এ ছাড়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্য, সাধারণ তহবিল থেকে ট্রাস্টিদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও বিদেশ ভ্রমণ, ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েক সদস্যের আধিপত্য, স্বেচ্ছাচারিতা ও আদালতে এ নিয়ে মামলাসহ নানা বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউজিসির তদন্ত দল তাদের প্রশ্ন করে। তদন্ত দলের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের তালিকাও চাওয়া হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চায় তদন্ত দল। এ পর্যায়ে উপাচার্য তাদের সেগুলো লিখিতভাবে সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেন। উত্তর চাওয়া হয়েছে সাত মাস আগে! নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ১০টি বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে ইউজিসি কারণদর্শাও পত্র দেয় গত বছরের ডিসেম্বরে। কিন্তু সে চিঠির উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। এসব প্রশ্নের মধ্যে ১০ নম্বর প্রশ্নটি হলো_ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের একাংশের জঙ্গিমুখিতা নিয়ে। গতকালও তদন্ত দল এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়।

তদন্ত দলের প্রধান অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম বলেন, 'গত ১১ অক্টোবর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়ে তদন্ত করে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম। এরপর মন্ত্রণালয় ১০টি ইস্যুতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করে। কিন্তু তারা এর উত্তর দেয়নি। গতকাল ছিল তাদের সেই ঘটনার ফলোআপ তদন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এসবের লিখিত উত্তর দিতে হবে।

হিযবুত তাহরীরের বই সম্পর্কে উপাচার্য: তদন্ত দল চলে যাওয়ার পর উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, সদস্যরা নর্থ সাউথের লাইব্রেরিতে হিযবুত তাহরীরের বই সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির কাছ থেকে নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা চেয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী লাইব্রেরি থেকে বইগুলো সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে। উপাচার্য বলেন, 'কোনটি হিযবুত তাহরীরের বই তা আমরা বুঝতে পারিনি।' তিনি বলেন, 'বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাম এলেও গণমাধ্যমে বার বার শুধু নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই বলা হচ্ছে। এটি ঠিক নয়।-সমকাল

১৫ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে