শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬, ১১:৩৩:১০

ফুটবলপ্রেমী নিবরাস যেভাবে হয়ে ওঠে জঙ্গি

ফুটবলপ্রেমী নিবরাস যেভাবে হয়ে ওঠে জঙ্গি

নিউজ ডেস্ক : ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গির অন্যতম নিবরাস ইসলাম ওই ঘটনার আগে চার মাস ধরে ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করেছিল বলে জানা গেছে। ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার একটি মেসে ‌‘সাইদ’ ছদ্মনামে থাকত। হলি আর্টিজানে হামলার পাঁচ দিন আগে নিবরাস ওই মেস ছেড়ে চলে যায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান তাঁকে ওই মেস ঠিক করে দেন বলে জানা গেছে।

নিবরাসের মতো এই তরুণরা হামলার প্রশিক্ষণ কোথায় নিয়েছিলেন, কাদের সংস্পর্শে ছিলেন- তা তাদের নিখোঁজ থাকার সময়কার অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। নিবরাসের পরিবারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলালে দেখা যায়, ঘর ছাড়ার পর তার অবস্থান ছিল ঝিনাইদহে, শহরের হামদহ সোনালী পাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কওছর আলীর মালিকানাধীন বাড়ির মেসে।

ওই মেসের চারটি কক্ষে মোট আটজন থাকতেন। তাদের মধ্যে সাঈদ বা নিবরাসও একজন। ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে তারা মেস ছেড়ে যান, তারপর আর ফেরেনি। ঈদের ছয় দিন আগে গুলশানে হামলা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তরুণ জানান, নিবরাস তাদের সাথে ফুটবল খেলতো। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে এসবই বলেছিল। কিন্তু তার ইংরেজি বলাটা খুব ভালো ছিল। বেশির ভাগ কথার মধ্যে ইংরেজি চলে আসতো। শুরু থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে আসা নিবরাসের ফুটবলে আগ্রহের বিষয়টি তার ফেসবুক পাতায়ও উঠে আসে।

চার কক্ষের ঘরটির ভাড়া ঠিক হয় মাসে ২ হাজার ৩০০ টাকা। ইমাম রোকনুজ্জামান তখন বলেছিলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র থাকবেন। প্রথমে দুজন আসেন। এঁদের একজন সাঈদ (নিবরাস) আর আরেকজনের নাম বলেন মোস্তাফিজ।

কিছুদিন পর আরও ছয়জন আসেন। তাঁদের কাছে মাঝে মাঝে একটি মোটরসাইকেল আসত। রমজানের শুরুতে ছয়জন বাড়ি যাওয়ার কথা বলে চলে যান। বাকি দুজন ২৮ জুন (গুলশান হামলার দুদিন আগে) চলে যান। এরপর আর ফেরেননি কেউ।

ঈদের আগের দিন রাতে ওই মেসে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মেসের মালিক কাওসার আলী, তাঁর দুই ছেলে বিনছার আলী ও বিনজির আলী এবং মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান ও সাব্বির হোসেনকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো অভিযান হয়নি বা কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।

মেসের মালিক কাওসার আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহার জানান, ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পৌরসভার ৩ নম্বর পানির ট্যাংকি এলাকার সোনালীপাড়ায় তাঁরা বসবাস করেন। তাঁর স্বামী কাওসার আলী সাবেক সেনা সার্জেন্ট।

গত চার মাস আগে সাঈদ নামের একটি ছেলেকে এনে মেস ঠিক করে দিয়েছিলেন সোনালীপাড়া মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান রোকন। সাইদ নামের ওই ছেলেটি গত ২৮ জুন মেস ছেড়ে চলে যায়। হলি আর্টিজানে হামলার পর টিভিতে ছবি দেখে এলাকার অনেকে ধারণা করছেন সাঈদ ছদ্মনামের ওই ছেলেটি নিবরাস ইসলাম।

বিলকিস নাহার অভিযোগ করেন, ঈদের আগের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাঁর স্বামী ও দুই ছেলেসহ পাঁচজনকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানায়, সাইদ নামে যে ছেলেটিকে তারা চিনত সে-ই নিবরাস ইসলাম। সে ভালো ফুটবল খেলত, কম কথা বলত, মুখে দাঁড়ি ও সুদর্শন ছিল। টিভির ছবি দেখে তারা ছেলেটিকে চিনতে পেরেছে।

ঝিনাইদহ সার্কেল এএসপি গোপিনাথ কাঞ্জিলাল জানান, সোনালীপাড়ায় কোনো অভিযানের খবর তাঁর জানা নেই বা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। -কালের কণ্ঠ
১৫ জুলাই. ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে