শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬, ০২:৪২:২০

গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনায় সুলেমান ও তৌফিক

গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনায় সুলেমান ও তৌফিক

জুলকার নাইন: গুলশান হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচ আইএস জঙ্গি ভারতের কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিবিআইয়ের হাতে আটক হয়েছে। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ ও ভারতে আইএসের কর্মকাণ্ড বিস্তারের উদ্দেশে সিরিয়া থেকে উপমহাদেশে আসা অন্যতম জঙ্গি নেতা আবু আল মুসা আল বাঙ্গালি ওরফে মোহাম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসা। গুলশান হামলার এক সপ্তাহের মাথায় গত ৮ জুলাই তাদের আটক করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। আটক হওয়া এই জঙ্গিদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও বের করেছে ভারতীয় সংস্থাগুলো।

আটক জঙ্গি নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার মূল পরিকল্পনা সাজিয়েছে সুলেমান ও আনসার তৌফিক নামের দুই জঙ্গি। এর মধ্যে সুলেমান বাংলাদেশে আইএসের কর্মকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়ক এবং তৌফিক আনসার আল বাংলা টিম বা এবিটির অপারেশন প্রধান বলে দাবি করছেন ভারতের সিবিআই ও সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা। তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম এসব তথ্য জানিয়েছে।

সিবিআই সূত্রের খবর, ঢাকার গুলশানে বিদেশিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে গত ছয়-সাত মাস আগে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আত্মগোপন করে সুলেমান ও তৌফিক। পরে মালদহ, বীরভূমসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরাসরি তত্ত্বাবধান করে মাঠে থাকা জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে হামলা সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনার বাস্তবায়ন। এর মধ্যে সুলেমান আগে জেএমবি ও হুজির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সুলেমান বর্তমানে ‘আইএস বাংলা’ নামে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামসহ এ অঞ্চলে আইএসের কর্মকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকায় আছে।

অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুলেমান ‘বাঘ-২’ কোড ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে ব্লগার হত্যা করে আসা আনসার আল বাংলা টিমের সমন্বয়ের ভূমিকায় আছে তৌফিক। এর আগে ঢাকার গোয়েন্দাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, গুলশানে হামলা চালানো জঙ্গিরা সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরায় আস্তানা গেড়েছিল এবং নিহত জঙ্গি নিবরাস প্রায়ই মোটরসাইকেলে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অন্যতম জঙ্গি নেতা আবু আল মুসা আল বাঙ্গালি ওরফে মোহাম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসার সঙ্গে গত সপ্তাহে আটক হয়েছে আরও দুই জঙ্গি শেখ আমিনুদ্দিন ও সাদ্দাম হোসাইন। প্রায় এক সপ্তাহ নানা জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার দুই জঙ্গি আমিনুদ্দিন ও সাদ্দামকে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডির মাধ্যমে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয়েছে।

পরে আদালত তাদের প্রত্যেককে ১৪ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে। কিন্তু জঙ্গি নেতা মুসাকে এখনো নিজেদের কাছেই রেখেছে ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে তার কাছ থেকে। পরে মুসার মোবাইল কললিস্টে বার বার যোগাযোগ করার তথ্য পেয়ে বীরভূম থেকে চন্দন শেখ ও স্বপন শেখকেও আটক করে নিজেদের জিম্মায় নেয় গোয়েন্দারা। ভারতের গোয়েন্দাদের তথ্যানুসারে, উপমহাদেশে শাখা স্থাপনের ঘোষণা দেওয়ার আগেই আবু আল মুসা আল বাঙ্গালিকে সিরিয়া থেকে এ অঞ্চলে পাঠানো হয়।

মুসাই সুলেমান ও তৌফিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থায়ন ও অস্ত্র-সরঞ্জামাদির জোগান দিয়ে আসছিল। মুসাই সুলেমান ও তৌফিকদের সঙ্গে ভারতের আইএসের অপারেশন প্রধান সাফি আরমারের সংযোগ ঘটায়। পরে সুলেমান ও সাফি আরমার মিলিতভাবে স্থানীয় বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল, কলকাতা, বীরভূম, মালদহ, কাশ্মীর, দিল্লি, হায়দরাবাদ, মিরুট ও চেন্নাই থেকে শতাধিক তরুণকে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় তারা।

ঠিক কতজন ও কাদের দলে ভেড়ানো হয়েছে সেটাই জানাতে জঙ্গি নেতা মুসাকে নিজেদের জিম্মায় রেখেছে ভারতীয় বিভিন্ন সংস্থা। সূত্রমতে, গুলশান হামলার পরপরই তত্পর হয়ে ওঠে ভারতীয় গোয়েন্দারা। চিহ্নিত হয় মুসা। তবে পুরো নেটওয়ার্ক ধরার স্বার্থে মুসাকে গ্রেফতার না করে রাখা হয় নজরদারিতে। এরই মধ্যে কলকাতার পার্শ্ববর্তী মাটিয়াবুরুজে বাংলাদেশ শাখার সুলেমানের সঙ্গে বৈঠক করে মুসা। বৈঠক শেষ করে ধর্মতলায় গিয়ে মুসা দোকান থেকে ধারালো চাপাতি কেনে।

একই ধরনের চাপাতি দিয়ে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যা হওয়ায় চিন্তায় পড়ে যায় গোয়েন্দারা। আশঙ্কা করা হয়, ভারতে প্রথমবারের মতো কোনো ধরনের হামলার। সঙ্গে সঙ্গে মুসাকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে ফসকে যায় সুলেমান। আমোদপুর স্টেশনে আটক হয় মুসা এবং তাকে সেখানে নিতে আসা সাদ্দাম হোসাইন ও শেখ আমিনুদ্দিনকে আটক করে পুলিশ।-বিডি প্রতিদিন

১৬ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে