রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬, ০৪:৩৬:০৩

এক যুবকের ধীরে ধীরে জঙ্গি হয়ে ওঠার অবাক করা কাহিনী

এক যুবকের ধীরে ধীরে জঙ্গি হয়ে ওঠার অবাক করা কাহিনী

আহমেদ মুহাম্মদ: ১৯৯০-এর দশকে ঢাকায় আমার জন্ম। শিশু হিসেবে আমি ছিলাম উৎফুল্ল ও উদ্যমী। আমি এমন এক সময়ে বেড়ে উঠি যখন খুব কম পরিবারেই ছিল স্যাটেলাইট টিভি। শুধু পেশাদার মানুষেরাই কম্পিউটার ব্যবহার করতেন। তেমন কেউই জানতেন না ইন্টারনেট কী এবং স্মার্টফোনও ছিল না তখন। আমার মনে আছে, খুব উদগ্রীব হয়ে আসরের আজান শোনার অপেক্ষায় থাকতাম এবং তা শোনামাত্রই বাসা থেকে দৌড়ে বের হয়ে আরও শিশুদের সঙ্গে মাঠে খেলায় যোগ দিতাম।

এখনকার ঢাকার মতো নয়, আমরা বাড়ির পাশে বড় মাঠে গ্রীষ্মের রোদে ক্রিকেট খেলতাম। বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলতে গিয়ে কাদায় আছাড় খেতাম। শীতের সকালে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলতাম। পুরানা পল্টনে একটি ছোট কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আমি পড়াশোনা শুরু করি।

বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলে যেতে লাগল। বাসায় আসতে শুরু করলাম কাঁদতে কাঁদতে। প্রায়ই মাঠে লড়াই করতে হতো। এখন পেছনে তাকিয়ে মনে হয়, আমার আচরণের জন্য ওই সময় আমার প্রতি নিপীড়ন শুরু হয়। আমার বাবা-মা খুব বন্ধুসুলভ ও সরল মনোভাবের ছিলেন। তারা কখনোই আমাকে কারও গায়ে হাত তুলতে উৎসাহিত করেননি।

বন্ধুদের সঙ্গে আমার সময় কাটানো কঠিন হওয়া দেখে বাবা-মা আমাকে বই পড়তে দেওয়া শুরু করেন। আমাদের বই ছিল। প্রচুর বই। দ্রুতই আমি ঈশপের গল্প, সুকুমার রায় ও ঠাকুরমার ঝুলি পড়ে অনেক বেশি আনন্দ পেতে শুরু করলাম। মাঠে খেলতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে বাসায় ফেরার চেয়ে তা ছিল আমার কাছে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের।

মাধ্যমিক স্কুলে অধ্যয়নের সময় আমাদের বাসা পরিবর্তন করা হয়। আমি একটি বিখ্যাত মিশনারি স্কুলে ভর্তি হই। এ ধরনের একটি স্কুলে ভর্তি হতে পারাটা ছিল খুব গর্বের বিষয়। আমার জন্য আমার বাবা-মাও খুশি ছিলেন। এ আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কখনোই আমার বাবা-মা আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় আসতে দেখেননি কিংবা স্কুলে ক্লাস নিয়ে আমার কাছ থেকে কোনও অভিযোগ শোনেননি। তাই তারা জানতে পারেননি স্কুলে সহপাঠী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে আমার নির্যাতিত হওয়ার কথা। সঙ্গে যোগ হয় আমাকে যে পরিমাণ হোমওয়ার্ক করতে দেওয়া হতো তাতে আমি বড় ধরনের ধাক্কা খাই।

পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে যখন শিক্ষকরা আমাকে তাদের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে বললেন। ফলে আমার দিনগুলো কঠিন রুটিনে বাঁধা পড়ে গেল। স্কুলের ক্লাস, তারপর বেশ কয়েকজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া এবং হোমওয়ার্কের পাহাড় নিয়ে বাসায় ফেরা। আমি বদলে যেতে শুরু করলাম। আমি আর উচ্ছ্বল ও সামাজিক শিশু ছিলাম না। পড়াশোনার চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না। বিষণ্নতা ও উদ্বেগের প্রাথমিক চিহ্ন আমার মাঝে ধরা পড়তে শুরু করলো।

এর চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটলো যখন আমার শ্রেণিশিক্ষক, যিনি আমার বাবা-মাকে তার কাছে আমাকে পড়াতে রাজি করাতে পারেননি (কারণ, আমি তখন তিনজন শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ছিলাম), তিনি আমার প্রতি ‘অসন্তুষ্ট’ ছিলেন। এর ফলে তিনি আমাকে কম নম্বর দিলেন আর স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে পরবর্তী ক্লাসে পড়তে দিলো না।

দুর্যোগ নেমে আসলো। আমার বাবা-মা বুঝতে পারলেন এসব তথাকথিত সফল স্কুলের বাস্তব প্রকৃতি এবং আমাকে অন্য স্কুলে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তারা অনেক খুঁজলেন, একের পর এক স্কুলে গেলেন, কর্তৃপক্ষ ও প্রিন্সিপালের কাছে স্কুলে আমাকে পড়তে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। কিন্তু বিখ্যাত স্কুলগুলো তাদের স্কুলে খারাপ ছাত্রদের ভর্তি না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকলো। কারণ ভর্তি হলে আমি তাদের খ্যাতির ক্ষেত্রে বোঝা হয়ে উঠবো।

আমি বয়ঃসন্ধিকাল ও অন্তর্মুখিতায় প্রবেশ করছিলাম: কিন্তু বন্ধুত্বের জন্য আকুল ছিলাম। নিজেকে আমার চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি মনে হতো কারণ আমি বিষন্নতা ও হতাশার সঙ্গে লড়াই করছিলাম। আমি খুব লজ্জিত ছিলাম ফলে খেলার মাঠে যাওয়া বাদ দিয়েছিলাম, আমার পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবন নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা এড়িয়ে যেতে শুরু করলাম। অনেক কষ্টে পুরান ঢাকার একটি স্কুলে আমাকে ভর্তি করা হলো।

কিন্তু স্কুলের মান ও যারা স্কুলটিতে পড়াশোনা করত তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান এতো নিচু ছিল যে এতে করে আমার মধ্যে লজ্জা ও হীনমন্যতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করল। আমি স্কুল পালাতে শুরু করলাম, সহিংস ভিডিও গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়লাম এবং ধারাবাহিকভাবে নিজের ক্ষতি করার মতো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লাম।

বাবা-মা বুঝতে পারতেন আমি কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ফলে তারা আমাকে স্কুল ফাঁকি দিতে মানা করতেন না। কিন্তু আমাকে কোচিং সেন্টারে ক্লাস করতে হতো। কিন্তু সেখানেও আমি একমাত্র ছেলে ছিলাম যে বিচ্ছিন্নতার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেছি এবং ওই বয়সে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে খুব লজ্জিত লাগত। আমাকে নিয়মিত সহপাঠীদের নিষ্ঠুর বিদ্রুপ শুনতে হতো।

কাছেই একটি মসজিদ ছিল। আমি প্রায়ই সেখানে নামাজ পড়তে যেতাম। আমার বাসা, স্কুল ও কোচিং সেন্টার আমাকে কোনও অবসর দিচ্ছিল না। কিন্তু মসজিদে গিয়ে আমি অদ্ভুত প্রশান্তি পেতাম। আমি মসজিদের নীরবতায় যতক্ষণ পারতাম বসে থাকতাম। একদিন ২০-এর কাছাকাছি বয়সের এক যুবক আমার কাছে আসলেন। তাকে আমি আগেই দেখেছি। কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং নিয়মিত একটি ব্যাগ বহন করতেন।

কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর তিনি জানতে চাইলেন আমি কোথায় থাকি, কোথায় পড়ি, আমার বাবা-মা কি করেন। তিনি জানালেন, আমাকে তিনি খেয়াল করছেন। আমি প্রায়ই মসজিদে আসি এবং একা বসে থাকি। প্রথমে আমার সন্দেহ হয়েছিল। বাবা-মা বলেছিলেন, অপরিচিতদের এড়িয়ে চলতে। কিন্তু তিনি খুব ভালো ছিলেন।

দিন যেতে থাকলো। আমি প্রায়ই তার সঙ্গে মসজিদে দেখা করতাম এবং কথাবার্তা হতো। এর মধ্যে একদিন আমার এক মেয়ে সহপাঠী তার প্রতি আগ্রহী না হওয়ায় আমাকে অপদস্থ করে। সেদিন খুব মন খারাপ করে আমি মসজিদে বসেছিলাম। ওই ব্যক্তি খেয়াল করেন যে, আমি কাঁদছি। তিনি জানতে চাইলেন কি ঘটেছে? সেই দুর্বল মুহূর্তে নিজেকে আমি তার কাছে সঁপে দেই।

আমি নিজের দুর্দশার কথা বলতে লাগলাম এবং তিনি শুনলেন। আমি তাকে বললাম যে, আমি পৃথিবীকে, আমার শিক্ষকদের, আমার জীবনকে এবং আমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুযোগ পেলে আমি প্রতিশোধ নেব। ওই লোক সব শুনলেন এবং বললেন যে, ওই মেয়েটি শয়তানের ধারক এবং তারা আমাকে গুনাহের পথে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন যে, আমি সঠিক পথে রয়েছি এবং আল্লাহ আমাকে সহযোগিতা করবেন। ওই বয়সে প্রথমবারের মতো আমার মনে হলো কেউ আমাকে আসলেই বুঝতে পারছে। আমরা বন্ধু হয়ে গেলাম।

রমজান মাসের আর বেশিদিন ছিল না। একদিন, স্কুল থেকে ফেরার পথে ওই লোকের সঙ্গে চলে যাই। তিনি আমাকে একটি সভার আমন্ত্রণপত্র দেন যেখানে তরুণ মুসলিমরা উপস্থিত হবেন। আমাকে ওই সভায় উপস্থিত হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বাবা-মা আমাকে সব সময় বলতেন অপরিচিত লোকের সঙ্গে অপরিচিত জায়গায় না যেতে। বন্ধু হওয়ার পরও আমি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। আমি তাকে বললাম যে, এতে আমার মা উদ্বিগ্ন হবেন এবং যেতে দেবেন না।

তখন তিনি আমাকে বলেন যে, ইসলামে আছে সবার আগে আল্লাহকে স্থান দিতে হবে এবং এই পথে যদি কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায় তিনি যদিন মা’ও হন, তাহলে তাকে অগ্রাহ্য করা ইসলামের বিধান। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে মহানবী (সাঃ) যে বলেছেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত- এই কথা কি মিথ্যে? তিনি তখন আরবিতে কিছু একটা উদ্ধৃত করে নিজের অবস্থানেই অটল থাকলেন। আমি বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম! কিন্তু তাকে বললাম যে, আমি সভায় যাব।

বাসায় ফিরে আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালে নিজের মায়ের অবাধ্য কি হওয়া যায়? আমার মা খুব জানাশোনা ও ধার্মিক মুসলিম, এই প্রশ্ন শুনে তিনিও ধাঁধায় পড়ে গেলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এমন কথা বলছ কেন? বিষণ্নতা ও অন্তর্মুখিতা স্বত্ত্বেও আমি সৎ ও বাবা-মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ সহজ ছিল।

আমি তাকে জানালাম যে, মসজিদে পরিচয় হওয়া এক যুবক আমাকে এসব বলেছে। মা তখন ভ্রু কুঞ্চিত করে ওই যুবক সম্পর্কে আরও জানতে চাইলেন। যখন আমি মাকে ওই যুবক সম্পর্কে বিস্তারিত জানালাম এবং সভায় যোগ দেওয়ার লিফলেটের কথা বললাম তখন তিনি তা দেখতে চাইলেন। আমি মাকে তা দেখালাম। লিফলেটে তরুণ মুসলিমদের প্রতি এক আলোচনায় উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেখানে নিপীড়ন থেকে মুসলিমদের রক্ষা ও বিশ্বে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের জন্য আলোচনা হবে। হিযবুত তাহরীর নামক একটি সংগঠন এ সভার আয়োজন করেছে।

সময়টা ছিল ২০০৪ সাল। জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সারাদেশে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর এক বছর আগের ঘটনা ছিল তা। ওই সময়ই আমার মায়ের মনে হয়েছিল ওই যুবক ও সংগঠনটির উদ্দেশ্য ভালো নয়। পরে জানা যায়, সংগঠনটি ইসলামি সন্ত্রাসীদের সংগ্রহ করার একটি গ্রুপ। মা আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্ব্গ্নি ছিলেন। কিন্তু তিনি আতঙ্কিত হয়ে এবং অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলার জন্য চিৎকার না করে মা আমাকে নিয়ে বসলেন। তিনি আমার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেন। জিজ্ঞেস করলেন আমি কেমন আছি, আমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে?

দীর্ঘক্ষণ আলাপের মা আমাকে বলেন যে, পুরান ঢাকায় আমি যে সময় যেতাম ওই সময়ে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তিনি আমাকে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেন। বেশ কয়েক সপ্তাহ আমি বাসাতেই ছিলাম। আমার পড়াশোনার রুটিন শিথিল হয়ে যায়। হ্যারি পটার বই পড়ে সময় কাটাচ্ছিলাম আমি। বিষণ্নতা ও বিচ্ছিন্নতা কাটাতে হ্যারি পটার আমাকে সহযোগিতা করে। স্কুলে অনিয়মিত হলেও কোচিং সেন্টারে ঠিকই যেতাম নিয়মিত।

ফলে স্কুলে বেশ ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করি আমি। অবশ্য কখনোই ওই বিষণ্নতা ও মানসিক আঘাত আমি কাটিয়ে ওঠতে পারিনি, এখনও তা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমি ভালো রেজাল্ট করেছি। যেসব শিক্ষক আমাকে ভালোবাসতেন ও যেসব বন্ধু আমার খেয়াল রাখতেন তাদের আর্শীবাদ সঙ্গে ছিল আমার। সর্বোপরি, মা-বাবা আমাকে কঠিন সময়ে সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছেন।

এখনও আমি ইসলাম ধর্ম পালন করি এবং ভয়ঙ্কর বিপদের হাত থেকে আমাকে রক্ষার জন্য আল্লাহ’র প্রতি শুকরিয়া আদায় করি। কিন্তু আমি দেখেছি আমার আশেপাশের অনেকেই বিপথে চলে গেছে। আমি স্কুলের এক জ্যেষ্ঠ সহপাঠীর কথা জানি, যিনি প্রত্যাখ্যাত হয়ে জঙ্গি হয়ে ওঠেন। শৈশবে আমাকে নিগ্রহকারী একজন, যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ত তাকে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এখনও আমি পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। কিন্তু মসজিদে যেতে আমি কুণ্ঠাবোধ করি। যদি মসজিদে যাইও সেখানে দীর্ঘক্ষণ আমি থাকি না এবং কারও সঙ্গে কথা বলি না। যদিও মাঝে মাঝে আমি ইসলাম ও নীতি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। যাদের আমি চিনি না তাদের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনা এড়িয়ে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি আমি।

এটা ২০১৬ সাল। ওই কর্মী সংগ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের পর অনেক কিছু বদলে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। হলি আর্টিজানে হামলার খবর পড়ার আগে গত কয়েক মাসে এসব আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

যখন আমি হামলার বিস্তারিত পড়ছিলাম তখন আমার মাথায় চিন্তা আসে যে, আমিও এদের একজন হতে পারতাম। স্বাভাবিকভাবেই ঠাণ্ডা মাথায় মানুষকে হত্যাকারী এসব তরুণদের প্রতি আমাদের নিন্দা ও ঘৃণা জন্ম হয়। কিন্তু আমার সেসব ঘটনা ও পরিস্থিতির কথা মাঝে মাঝেই ভুলে যা তাদের এ রকম রক্তপিপাসুতে পরিণত করে।

আপনারা যদি সত্যিকার অর্থের তরুণদের বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আমার শুধু একটি কথা বলার আছে। কাউকে দূরে ঠেলে দেবেন না। জঙ্গি সংগ্রহকারীরা ভেঙে পড়া মানুষদের খোঁজ করে। সেসব মানুষদের খোঁজ করে যারা নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন। সেসব মানুষ যারা বিষণ্নতায় ভুগছেন এবং আত্মহত্যাপ্রবণ। সেসব মানুষ যারা সামাজিক ব্যাভিচারের শিকার এবং এর প্রতিশোধ নিতে চান। জঙ্গিরা আমাদের যত বেশি অংশে ভাগ করতে পারবে ততই আমাদের বিভাজন বাড়বে, ততই তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি সহজ হয়ে যাবে। কাউকেই মনুষ্যত্বের ওপর আশাবাদ হারাতে দেবেন না। ভালোবাসা। নিষ্ঠুরতার সঙ্গে সহমর্মিতায়। কারণ, একমাত্র ভালোবাসাই আমাদের এই যুদ্ধ জেতাতে পারে।-বাংলাট্রিবিউন

১৭ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে