ঢাকা : রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে আস্তানা গেড়েছিল জঙ্গিরা। যে ফ্ল্যাটে জঙ্গি আস্তানা গেড়েছিল জঙ্গিরা, সেখানে তিনটি কক্ষ রয়েছে।
কোনো কক্ষে কোনো ধরনের আসবাবপত্র নেই। সামনের কক্ষটির খালি মেঝেতে একটি তোষক পড়ে আছে। গত এপ্রিলে শিক্ষার্থী পরিচয়ে এক তরুণ ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় বলে প্রতিবেশীরা জানান।
তার সঙ্গে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই বাসায় থাকত। তবে তাদের বাসার সামনে তেমন দেখা যেত না। ঈদের আগে কয়েকজন বাসা থেকে চলে যায়, ঈদের পরদিনও একজনকে দেখা গেছে। এরপর আর কাউকেই দেখা যায়নি।
রোববার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৪৪১/৮ নম্বর নির্মাণাধীন বাসাটির চারতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি তলায় তিনটি করে ফ্ল্যাট। বাড়িওয়ালা নুরুল ইসলাম নাহিদ (৬০) পেশায় শিক্ষক ছিলেন।
তার দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। স্ত্রী, ছেলে এবং ছেলের স্ত্রী নিয়ে বাড়ির দ্বিতীয় তলার বাম পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন।
বাড়িটির প্রধান গেইট দিয়ে ঢুকেই ডানপাশে গ্যারেজ। বামপাশে একটি ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাটটির দরজার পাশেই কলাপসিবল গেইট। ওই গেইট দিয়ে ভেতরের ওপরের ফ্ল্যাটে উঠতে হয়।
নিচতলায় কলাপসিবল গেইটের বাইরে একটি এবং ভেতরে দুটি ফ্ল্যাট। বাইরের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা, যারা এখন আর নেই।
নিচতলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া সজীব হোসেন গণমাধ্যেকে বলেন, আমি পোশাক কারখানায় কাজ করি। আগে বাইরের ফ্ল্যাটটিতে ভাড়া ছিলাম। চার মাস আগে ভেতরের ফ্ল্যাটে আসি।
‘পরে বাইরের ফ্ল্যাটটি ভাড়িওয়ালা মেস ভাড়া দেন। তবে ওই ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আমাদের তেমন কথা হতো না। মাঝেমাঝে একজনকে দেখতাম। তার বয়স ২৩/২৪ হবে। কথা হয়নি কখনও।
সজীব হোসেন বলেন, আমরা সবাই ব্যস্ত। সকালে যাই রাতে আসি। কে থাকত, তাও জানি না। তবে ঈদের আগে সবাইকে একবার দেখছি। ঈদের পরদিন একজনকে দেখেছিলাম। এরপর আর কাউকে দেখিনি।
নিচতলার অন্য এক ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া ইস্রাফিল বলেন, আমি গাড়ি চালাই। গত মে মাসে এখানে ভাড়া আসি। মা, বোন ও স্ত্রী এ বাসায় থাকেন। মাঝেমাঝে ওই বাসার ছেলেদের দেখেছি। তবে কথা হয়নি।
তিনি বলেন, বাড়িওয়ালা আমাদের বলেছিলেন, ওরা সবাই ছাত্র। ওরা খুব ভদ্র ছেলে। প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছর হবে। দেখতে ছাত্রদের মতোই।
বাড়ির তৃতীয় তলার ডানপাশের ফ্ল্যাটে থাকেন মাসুম ও লাইজু দম্পতি। মাসুমের মা, বোন ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেও তাদের সঙ্গে থাকে। তারা আট মাস ধরে ওই বাসায় ভাড়া থাকেন।
বাড়িওয়ালা নুরুল ইসলাম শেওড়াপাড়া এলাকায় ৩৫ থেকে ৪০ বছর ধরে থাকেন বলে জানা যায়। বাড়িওয়ালার দুটি বাড়ি আছে।
একটি বাড়ি ডেপেলপার কোম্পানিকে দিয়েছেন। ৪৪১/৮ নম্বর বাড়িটি ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তৈরি করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলার পর রাজধানীর ভাটারা থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের, ই-ব্লকের টেনামেন্ট-৩ এর ফ্ল্যাট-এ/৬ গত মে মাসের ১৬ তারিখে ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা।
ফ্ল্যাট মালিক ও নর্থ সাউথের প্রো-ভিসি গিয়াস উদ্দিন আহসান বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়া থেকে বিরত ছিলেন।
এ ঘটনার একদিন পর শেওড়াপাড়ার ওই বাসাটির সন্ধান পায় পুলিশ। পুলিশের ধারণা, গুলশানে হামলার আগে এসব বাসায় অবস্থান করেছিল জঙ্গিরা।
গুলশানে জঙ্গি হামলায় জড়িত কয়েকজন ঝিনাইদহের একটি মেসেও ছিল বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এসব বিষয়ে বর্তমানে তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট।
পুলিশ জানিয়েছে, ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়াটিয়াদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয়সহ নির্ধারিত ফরম পূরণ করে থানায় জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও শেওড়াপাড়া ও বসুন্ধরার দুই বাড়ির মালিক তা করেননি।
ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, শেওড়াপাড়ার ফ্ল্যাট থেকে হাতে তৈরি গ্রেনেড ও কালো পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে।
১৭ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম