সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬, ০৯:১৩:৪৪

জঙ্গি মোকাবেলায় একটি ক্ষেত্রে বিদেশিদের সহায়তা নেবে সরকার

জঙ্গি মোকাবেলায় একটি ক্ষেত্রে বিদেশিদের সহায়তা নেবে সরকার

পাভেল হায়দার চৌধুরী : জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রয়োজন হলে বিদেশি পরামর্শ ছাড়া আর কোনও সহায়তা নেবে না সরকার। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র ও আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা।

তারা বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপই যথেষ্ট। এর বাইরে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের সহায়তা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এ ব্যাপারে প্রয়োজন হলে তথ্য আদান-প্রদান, প্রযুক্তিগত কিছু অথবা দরকার হলে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের জন্যে যোগাযোগ করা হতে পারে। কিন্তু জঙ্গি মোকাবিলায় এর বাইরে বিদেশি কোনও দেশের প্রত্যক্ষ সহায়তা নেওয়া হবে না বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

নীতি-নির্ধারকরা জানান, বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে শক্তিধর রাষ্ট্র বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা যেকোনও ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্যে তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছে। গুলশান হামলার পরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেশা দেশাই বিসওয়াল ও মার্কিন হাইকমিশনার মার্শা ব্লুম বার্নিকাট জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে যেকোনও ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।

নীতি-নির্ধারকরা বলেন, গুলশানের ঘটনার পরে মার্কিন সরকারের এই দু’জনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করে যেকোনও ধরনের সহায়তা প্রদানের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছেন। তবে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সেই আগ্রহ বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন ক্ষমতাধর অনেক দেশ এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে সেনা সহায়তা দেওয়ার ইচ্ছাও পোষণ করেছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, এ ইস্যুতে নিজস্ব  আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই যথেষ্ট। বাইরের দেশের কোনও সহযোগিতা নেওয়ার প্রয়োজন এখনও নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার পরে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বাংলাদেশকে সরাসরি সহায়তার প্রস্তাব করেছে বিদেশিরা। তিনি বলেন, একটি শক্তিধর রাষ্ট্র সরাসরি সৈন্য পাঠানোরও প্রস্তাব করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনয়ের সঙ্গে সেইসব রাষ্ট্রের সহায়তা নিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। হানিফ উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আমাদের শক্তি দিয়েই আমরা মোকাবিলা করব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, অনেক বিদেশি বন্ধু সরাসরি সহায়তা দিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা জানিয়েছি প্রয়োজন হলে পরামর্শ-অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করব। তিনি বলেন, তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছি। কিন্তু কোনও বিদেশি বন্ধুর সরাসরি সহায়তা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমরা মনে করিনা। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নিজেদের শক্তিই যথেষ্ট বলে মনে করে সরকার।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কোনও একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি করতে চায়। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সেই সুযোগ কাউকে দেবেন না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। এখানে আইএসের কোনও সম্পর্ক নাই। তাই চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বিদেশি কারও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন নাই।

সভাপতিমন্ডলীর অপর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আওয়ামী  লীগ সরকারকে অস্থিরতার মধ্যে রাখার জন্যে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলো সব সময়ই সক্রিয়। দেশে কোনও একটি ঘটনা ঘটলে বিদেশি কারও কারও দৌড়ঝাঁপ আরও বেড়ে যায়। তিনি বলেন, গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার পর কতজন কতো প্রস্তাব নিয়ে এলো। জাফরউল্যাহ বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করার জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন নিজেদের শক্তি সামর্থ্যই যথেষ্ট। কারও সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে বলে আওয়ামী লীগও মনে করে না। -বাংলা ট্রিবিউন
১৮ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে