সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১১:২২:২৮

‘আইএস, ইরাকে গেলাম’: ফেইসবুকে জানান নিখোঁজ নজিবুল্লাহ

‘আইএস, ইরাকে গেলাম’: ফেইসবুকে জানান নিখোঁজ নজিবুল্লাহ

মিন্টু চৌধুরী ও রবিউল হাসান : নিখোঁজ বেশ কয়েকজন যুবকের জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য মেলার পর কর্তৃপক্ষ যে ১০ জনের তালিকা দিয়েছে, তাদের মধ্যে নজিবুল্লাহ আনসারী দেড় বছর আগে ফেইসবুকে ভাইকে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। দেড় বছর ধরে নজিবুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেও মাত্র সাত দিন আগে তার বাবা নৌ বাহিনীর সাবেক সদস্য রফিকুল্লাহ আনসারী ছেলের সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।

২৮ বছর বয়সী নৌ প্রকৌশলী নজিবুল্লাহ ফেইসবুক বার্তায় ‘আইএস, ইরাকে গেলাম’ বলে আর দেশে না ফেরার কথা লিখেছিলেন বলে ওই জিডি উদ্ধৃত করে ইপিজেড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত ১০ জুলাই নজিবুল্লাহর সন্ধান চেয়ে তার বাবা চট্টগ্রাম নাবিক কলোনির বাসিন্দা রফিকুল্লাহ আনসারী জিডি করেন, যার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসআই জাহেদুল্লাহ জামানকে।

নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পেটি অফিসার রফিকুল্লাহ রোববার ফোনে বলেন, “দেড় বছর ধরে নজিবুল্লাহর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই। বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত।”

বাবার চাকরিসূত্রে চট্টগ্রামে বড় হওয়া নজিবুল্লাহর জন্ম ১৯৮৭ সালে। নগরীর হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি ও ২০০৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন জিপিএ-৫ পেয়ে।

রফিকুল্লাহ তার জিডিতে লিখেছেন, এইচএসসি পাস করার পর তার ছেলে মালয়েশিয়া মেরিন একাডেমিতে পড়তে যান। সেখানে থাকার সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ‘বৃত্তি’ নিয়ে পড়ালেখা শেষ করে ২০১২ সালে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাহাজে চাকরি নেয় নজিবুল্লাহ।

চাকরির সুবাদে তার বিভিন্ন দেশে যাতায়াত ছিল উল্লেখ করে রফিকুল্লাহ জিডিতে বলেছেন, গত বছরের জানুয়ারি মাসে নাজিবুল্লাহ তার ভাইয়ের ফেইসবুকে এসএমএস করেছিল।

ওসি আজাদ বলেন, নজিবুল্লাহর বাবা জানিয়েছে ওই সময়ের পর থেকে তাদের মধ্যে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না এবং তিনি জানতেনও না ছেলে কোথায় আছে।  

তিনি বলেন, “জিডিতে রফিকুল্লাহ আরও উল্লেখ করেন, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা তার কাছ থেকে ছেলের পাসপোর্ট নম্বর সংগ্রহ করেন ও তার সন্ধান জানতে চায়।”

এবছরের ৮ জুলাই টেলিভিশনে ছেলে নিখোঁজের সংবাদ ও ছবি দেখার পর রফিকুল্লাহ নিকটজনদের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় জানানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে জিডিতে উল্লেখ করেছেন।

রফিকুল্লাহর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের চকনাধরা গ্রামে হলেও চাকরির কারণে বাইরেই এতোদিন কেটেছে। অবসরের পরেও চট্টগ্রামেই থেকে গেছেন সপরিবারে।

তার এক আত্মীয় জানান, ২০০৮ সালের পর নজিবুল্লাহ গ্রামের বাড়িতে আসেনি। এর আগে যে কয়েকবার এসেছে তখন তাকে খুব একটা কথা বলতে দেখা যায়নি।

চককীর্তি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সারোয়ার-এ আলমের দাবি, আনসারী পরিবার ও এলাকায় বসবাসরত তাদের নিকটাত্মীয়রা নির্দিষ্ট কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত নয়।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ বলেন, “ওই পরিবারের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের বা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই।”

গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

এর ছয় দিনের মাথায় ঈদের দিনে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের কাছে পুলিশের উপর হামলা হয়। দুই পুলিশ মারা যাওয়ার পর অভিযানে এক হামলাকারীও নিহত হন।

গুলশানে নিহতদের মধ্যে তিন জন বেশ আগে থেকে পরিবারের কাছে নিখোঁজ থাকার তথ্য বের হওয়ার পর শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলায় জড়িত একজনও ঘরছাড়া ছিলেন বলে তার পরিবার জানিয়েছিল।

এর মধে্যে ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানান অভিভাবকরা।

এরপর র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, পরিবারের কাছে নিখোঁজ বেশ কয়েকজন যুবকের জঙ্গিবাদ-সম্পৃক্ততার বিষয়টি এখন প্রকাশ পাচ্ছে। -বিডিনিউজ
১৮ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে