সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬, ০৪:১৭:৩৬

নিখোঁজদের নিয়েই এখন যত টেনশন

নিখোঁজদের নিয়েই এখন যত টেনশন

উদিসা ইসলাম : অভিভাবকদের বরাত দিয়ে নিখোঁজ হওয়া কুড়িজনের নাম ঠিকানা দুই দফায় প্রকাশ করা হয়েছে।  কিন্তু এই কুড়িজন আসলে কোথায় গেছে, কী করছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।  আর এ কারণেই এই নিখোঁজদের নিয়ে অভিভাবক এমন কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এখন যত টেনশন।  

তবে তাদের ব্যাপারে সঠিক তথ্য না মিললেও বিভিন্ন সময় ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে কয়েকজনের আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে স্পষ্ট হওয়া গেছে।

দ্বিতীয় দফায় নিখোঁজ হিসেবে সামনে আসা দশজনের মধ্যে তিনজন নারীও আছেন।  এরা কোনপথে যোগাযোগ করেছেন বা আদৌ তারা জঙ্গি হিসেবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সম্পন্ন করতে পেরেছেন কি-না তা জানা না গেলেও র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানান, ‘আপনারা জানেন যে ইতোমধ্যে আমরা কিছু মিসিং ইয়ংদের খবর পেয়েছি, যারা দীর্ঘদিন ধরে মিসিং ছিল।  কেউ কেউ ইতোমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে জঙ্গি হিসেবে।  

এদিকে নিখোঁজদের অনেকের জীবন ইতিহাস ঘাটলে তাদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়টিই বারবার উঠে আসছে।

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর ১০ যুবকের সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চায় তাদের পরিবার। এরপর গতকাল রবিবার আরও দশজনের তালিকা গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এই দশজনের মধ্যে তিনজন নারী রয়েছেন। এদের একজন রমিতা রোকন।  কুড়ি বছরের রমিতার ফেসবুক পেজে শেষ পোস্টটি গতবছর জুলাই মাসের।

গুলশানে হামলাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর অভিভাবকরা জানতে পারেন, হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তাদের সন্তানেরা কোন পথে গিয়েছিল। এবং এইসব ক্ষেত্রে নিখোঁজ হিসেবে সাধারণ ডায়েরি করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন অভিভাবকরা।

অভিভাবকরা সন্তানদের বদলে যাওয়া বুঝতে না পারলেও নিবরাস ও রোহানদের বন্ধুরা জানিয়েছিলেন কীভাবে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে চলাফেরার কারণে বদলে যেতে থাকেন তারা।

কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেওয়া নিখোঁজ সংবাদই নয়, দেশের বেশকিছু জেলায় নিখোঁজ হওয়ার আরও খবর মিলছে। এরমধ্যে কেবল নাটোরে গত ছয় মাসে ২৪ জনসহ ২৮ তরুণ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২১ বছর।

নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী বলছেন, শনিবার পর্যন্ত পুলিশ নাটোর জেলায় ৪৪ জন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৮ জনের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন স্বজনরা। জিডি হওয়া তরুণদের মধ্যে ২৪ জন চলতি বছর এবং ৪ জন গত বছর নিখোঁজ হয়।

ঝিনাইদহে নিখোঁজদের চারজনএদিকে নারায়ণগঞ্জে ইতোমধ্যে ১০ জনের নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। তাদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাফেজ ক্বারী দুলাল মিয়া (২৫) নামে এক যুবক ৪২ দিন ধরে নিখোঁজ ।নিবরাস ও আবীরের আস্তানা পাওয়া গিয়েছিল ঝিনাইদহে।  

সেই ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় যুবলীগ নেতা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমামসহ ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এদের মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চাপড়ী গ্রামের হাসান আলী নামে দশম শ্রেণির  এক স্কুলছাত্র গত ১ বছর ধরে নিখোঁজ রয়েছে।

স্বজনরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে না জানালেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, বিভিন্ন সময়ে আরও অন্তত ১৩ জন এভাবে রহস্যজনক নিখোঁজ রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা সোহান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জিলানী।

এমনকি ঢাকার খিলগাঁওয়ের একজন চিকিৎসক সপরিবারে দেশ ছেড়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, তারা সবাই গত কয়েক বছরে উগ্র মতাদর্শের শিকার হয়ে ইরাক বা সিরিয়া গেছে।

গোয়েন্দাদের এই দাবির সত্যতা মেলে নিখোঁজ হওয়া ২৮ বছর বয়সী নৌ-প্রকৌশলী নজিবুল্লাহর ফেসবুক বার্তায়। যেখানে তিনি তার ভাইকে লিখেছেন ‘আইএস, ইরাকে গেলাম’। চট্টগ্রামে বড় হওয়া নজিবুল্লাহর জন্ম ১৯৮৭ সালে।

রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে পড়তে যায় মালয়েশিয়া মেরিন একাডেমিতে। ২০১২ সালে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাহাজে চাকরি নেয়। গতবছর জানুয়ারিতে ভাইকে ওই এসএমএস করার পর আর কোনও যোগাযোগ হয়নি।

নজিমুল্লাহর মতোই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজ যে ১০ যুবকের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে ঢাকার জুবায়েদুর রহিম মালয়েশিয়া গিয়ে বদলে যেতে থাকে বলে পরিবারের দাবি।

এক সময়ের ব্যান্ড শিল্পী জুবায়ের ঢাকার ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল থেকে লেখাপড়া করার পর মালয়েশিয়ার সাইবার জায়ায় ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে ‘ম্যাস মিডিয়া’ নিয়ে পড়তে যায়। কিন্তু লেখাপড়া শেষ না করেই দুই বছরের মাথায় সে দেশে ফিরে আসে এবং ২০০৯ সালের দিক থেকেই বদলে যেতে থাকে।

নজিবুল্লাহ আনসারী

এই বদল আরও  শঙ্কায় ফেলে যখন ১০ জনের ওই তালিকায় থাকা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ও জাকির ছবি দেখে তাকে নিজের ছেলে সজিত দেবনাথ বলে শনাক্ত করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামের জনার্দন দেবনাথ।তিনি জানান, জাপানে পড়তে গিয়ে ছেলে সেখানেই থেকে যায়। তবে গত এক বছরের ভেতরে তাদের কোনও যোগাযোগ হয়নি।

জুনুন শিকদার ও বাসারুজ্জামাননিখোঁজ তালিকার মধ্যে জুন্নুন শিকদার ও মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান লেখাপড়া করেছে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৪ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দিন রাহমানীর সঙ্গে গ্রেফতার হয়ে এক বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয়েছিল।  সে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা জানিয়েছিল।

বাসারুজ্জামানের বেলায়ও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার মামা আবুল কাসেম। তিনি বলেন, বাসারুজ্জামান দুই বছর আগে একটি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছে বলেছিল।

তবে গত সাত মাস আগে তার ভাগ্নে দুই মাসের জন্য অফিসের কাজে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজদের বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এদের প্রত্যেকের নামে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টা গুরুত্ব না দেওয়ায় এটা এখন বড় রূপ ধারণ করেছে। ঠিক কতজন এভাবে কোথায় চলে গেছে এবং আবারও কোথাও প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছে কিনা তা আমরা কিছুই জানি না। বিষয়টা খুবই শঙ্কার। -বাংলা ট্রিবিউন
১৮ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে