মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬, ০৯:৫২:০৯

‘পরশমণি’ হুমায়ূনের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

‘পরশমণি’ হুমায়ূনের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিউজ ডেস্ক : ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়/এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে/জলভরা দৃষ্টিতে/এসো কোমল শ্যামল ছায়...’ শ্রাবনে বৃষ্টি এলেও মনের মাধুরী দিয়ে এই গানের শব্দমালা যিনি গেথেছেন, সেই নন্দিত কথাসাহিত্যিক নিজেই আর কোন দিন ফিরে আসবেন না। কারণ মরনব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষটি। দেখতে দেখতে তার গত হওয়ার তিনটি বছর পার হয়ে গেছে। আজ হুমায়ুন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

মৃত্যুর তিন দিন পর ২৪ জুলাই আপন মনের মাধুরী দিয়ে আপন হাতে গড়া নুহাশ পল­ীর লিচুতলায় চির নিদ্রায় শায়িত হন হিমু চরিত্রের নির্মাতা হুমাযুন। তবে সেদিন তার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবী ছিল না, ছিল শেলাইবিহীন সাদা কাপড়। মৃত্যুর পরেও তার বইগুলো পাঠকপ্রিয়তায় শীর্ষে। তাকে স্মরণে আজো হলুদ রংঙে হিমু হয় ছেলে-মেয়েরা। দাবি আসে হিমু দিবস ঘোষণার। এর মধ্য দিয়েই সৃষ্টিগুণে বেঁচে আছেন এক অন্য হুমায়ুন। ভক্তদের অনুরাগে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এই কথাশিল্পী।

হুমায়ুন আহমেদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে সংগঠনগুলো। এবারও সবুজে ঘেরা লেখকের সমাধিস্থল তার স্বপ্নের নুহাশ পল­ীতে কবর জিয়ারত, কোরান খানী, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মা আয়েশা ফয়েজ, স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও সন্তানরা গাজীপুরের নুহাশপল­ীতে হুমায়ূন আহমেদের কবরের পাশে গিয়ে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করবেন।

দিনটিতে নুহাশ পল­ীতে যাবেন পরিবারের সদস্য এবং হুমায়ুন আহমেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, লেখক, প্রকাশকসহ হুমায়ুন ভক্তরা। বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদ পুরুষ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর উত্তরবঙ্গের নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। দেখেছেন বহু মানুষ এবং তাদের জীবনানুভূতি। এর ফলেই হুমায়ুন আহমেদের লেখায় উঠে এসেছে বাঙালি মধ্যবিত্তের নানা সংকট বিচিত্র জীবনযাপন আর হৃদয়ের টানাপড়েন।

বগুড়া জেলা স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেন। অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সবকিছু ছেড়ে লেখালেখি নাটক আর চলচ্চিত্র নির্মাণই হয়ে ওঠে তার নেশা ও পেশা।কোটি হৃদয়ের ভালোবাসায় সিক্ত হুমায়ুন আহমেদ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শিশু একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক, বাচসাস পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার। হুমায়ুন আহমেদ নিজের পুরনো নাটক, সিনেমা দেখতে এবং নিজের লেখা বই পড়তে ভালোবাসতেন।

নিউ ইয়র্কে থাকার সময় নিজের নাটক নিমফুল দেখে বলেছিলেন, এ নাটকটি নতুন করে বানালে আরও সুন্দর করতে পারতাম। হুমায়ুন আহমেদ নানাভাবে মজা করতে ভালোবাসতেন। বেঁচে থাকতে নিজের কুলখানির আয়োজন করে বন্ধুদের খাওয়াতে চেয়েছিলেন। এটা করতে পারলে তিনি খুব মজা পেতেন।

উলে­খযোগ্য গ্রন্থ : দেয়াল, নন্দিত নরকে, শক্সখনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্প, বহুব্রীহি, গৌরীপুর জংশন, দ্বিতীয় মানব, মধ্যাহ্ন এবং হিমু-সংক্রান্ত প্রায় ২৪টি সিরিজ উপন্যাস। তার মিসির আলী-সংক্রান্ত উপন্যাসও রয়েছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে।

আত্মজীবনী : বল পয়েন্ট, কাঠপেন্সিলসহ প্রায় আটটি গ্রন্থ। উলে­খযোগ্য টিভি নাটক- এইসব দিন রাত্রি, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়, নক্ষত্রের রাত, বহুব্রীহি, আজ রবিবার তারা তিনজন।
চলচ্চিত্র : আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, ঘেটুপুত্র কমলা।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নন্দিত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লেখকের পৈতৃক নিবাস নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদের হাতে গড়া স্বপ্নের স্কুল শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ মঙ্গলবার কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ, হুমায়ূন আহমেদের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, শোক র‌্যালি, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া।
১৯ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে