ঢাকা : রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর নিখোঁজদের সন্ধানে গিয়ে ঢাকার এক চিকিৎসকের পুরো পরিবারই উধাও হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
শিশু চিকিৎসক ডা. রোকন উদ্দিন (৫০) তার স্ত্রী নাইমা আক্তার (৪৫), দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন নাদিয়া (২২) ও রামিতা রোকন (১৫), জামাতা সাদ কায়েসকে (৩০) নিয়ে সিরিয়া হয়ে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে পরিবারের ধারণা।
পোশাক-আশাকে অতটা রক্ষণশীল ছিলেন না পরিবারের বড় মেয়ে রেজওয়ানা রোকন নাদিয়া (২২)। কিন্তু নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই হঠাৎ বদলে যেতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি ছোটবোন রামিতাকেও (১৫) উৎসাহিত করেন হিজাব পরতে। ধীরে ধীরে বদলে যান বাবা ডা. রোকন উদ্দিন (৫৫) ও মা নাঈমা বেগমও (৩৮)।
নাদিয়ার বড় খালা হালিমা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, নাদিয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে সাদ কায়েস শিশিরের (২৮) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই নাদিয়ার আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
নাদিয়া-শিশিরের সম্পর্কের কথা জেনে তাদের বিয়েতে সম্মত হন বাবা রোকন উদ্দিন ও মা নাঈমা বেগম। বিয়ের পর নাদিয়া ও শিশির এ বাড়িতেই থাকতে শুরু করে। এর পরই বদলে যায় রোকন উদ্দিন ও নাঈমা বেগম।
নাঈমা আক্তারের বোন হালিমা বেগম বলেন, সম্ভবত শিশিরের সিদ্ধান্তেই পুরো পরিবার নিয়ে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় নাঈমা ও রোকন। তবে গত রোজায় নাঈমা আমার কাছে ফোন করেছিল। এসময় খুব নিচু গলায় এটুকুই বলল যে, আমরা তুরস্কে আছি। ভালো আছি। এরপর আর কারো সাথেই যোগাযোগ করেনি তারা।
রাজধানীর খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ার মাটির মসজিদের পাশে ৪৪১/বি নম্বর বাড়ি থেকে ২০১৫ সালের জুনে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকের চাকরি ছেড়ে সপরিবারে দেশ ত্যাগ করেন ডা. রোকন উদ্দিন।
যাওয়ার সময় তারা বলে যান, মালোয়েশিয়া যাচ্ছি। ওই বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে প্রায় ৮ বছর ধরে চাকরি করছেন হেলাল উদ্দিন। তিনিই এ তথ্য দেন।
হেলাল জানান, নাদিয়া নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরই হঠাৎ করে বদলে যান। নিয়মিত নামাজ পড়া এবং হিজাব পরে বাইরে বের হওয়া শুরু করেন। ছোটবোন ও মাকেও হিজাব পরতে উৎসাহিত করেন।
নাদিয়াম মা নাঈমা সর্বশেষ সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যশোর সরকারি এম এম কলেজে শিক্ষকতা করেন। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই ফ্রাস, জার্মানি ও মালয়েশিয়া যাবেন বলে ৪৬ দিনের ছুটি নেন। ছুটি শেষেও কর্মক্ষেত্রে আর যোগ দেননি বলে কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
গত ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত যে পাঁচ তরুণ যৌথ অভিযানে নিহত হয় তারাও বেশকিছু দিন ধরে নিখোঁজ ছিল। এরপর সারাদেশে আরো অনেক তরুণ নিখোঁজ থাকার তথ্য প্রকাশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর মধ্যে ১০ জনের ছবিসহ বিস্তারিত পরিচয় গণমাধ্যমে আসে। এ ঘটনার পরপরই ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় পুলিশ এবং সরকারের তরফে নিখোঁজ সন্তানদের বিষয়ে বারবার তথ্য চাওয়া হচ্ছে।
পুলিশও এ ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব নিয়ে কাজ শুরু করে। নিখোঁজদের সন্ধান করতে গিয়েই খিলগাঁওয়ের ওই পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।
এদিকে একই পরিবারের পাঁচজন নিখোঁজের ঘটনায় এরই মধ্যে রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে পুলিশ। তথ্যটি নিশ্চিত করে রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।
১৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম