বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬, ০৩:১৭:৫৩

সাঈদীকে নিয়ে বিপাকে জামায়াত

সাঈদীকে নিয়ে বিপাকে জামায়াত

সেলিম জাহিদ: গোপনে আমির পদে নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে জামায়াতে ইসলামীতে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও নিযুক্ত করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ায় পদ দুটি বর্তমানে স্থায়ীভাবে শূন্য রয়েছে। খালি আছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আমির নির্বাচনের পর তিনি সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত করেন।


আমির নির্বাচন ও দলের অবস্থা নিয়ে কথা বলার জন্য জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি তাসনীম আলম, প্রচার বিভাগের সহকারী মতিউর রহমান আকন্দের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি।


তবে আমির পদে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় দলের ভেতরে দুটি চিন্তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে জামায়াতের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তিন সদস্যের আমির প্যানেলে কারা নির্বাচিত হয়ে আসেন, তা নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা চিন্তায় আছেন। বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চারজন নায়েবে আমির আছেন।

তাঁরা হলেন মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ ও নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান।

গঠনতান্ত্রিকভাবে এই চারজনের মধ্য থেকেই আমিরের প্যানেল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তবে আমির প্যানেল নিয়ে দলের ভেতরে দুটি চিন্তার বিষয়ে স্পষ্ট করে জানতে চাইলে সূত্রগুলো সরাসরি কিছু বলেনি। তবে দলের ভেতরের অতীতের ইতিহাস উদ্ধৃত করে এর একটা ধারণা দিয়েছে। সূত্রগুলোর মতে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দলের ভেতরে-বাইরে অন্যদের চেয়ে জনপ্রিয়।

তার প্রমাণ, গোলাম আযম (প্রয়াত) আমিরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিলে সে সময় অভাবনীয়ভাবে সাঈদী আমির প্যানেলে মনোনয়ন পান। পরে অবশ্য রুকনদের ভোটে সাঈদীর সঙ্গে অল্প ব্যবধানে নিজামী আমির নির্বাচিত হন। সাঈদীর উত্থানকে তখন থেকেই ভালোভাবে নেননি নিজামী-মুজাহিদেরা। পরের মেয়াদে আমির প্যানেল থেকে সাঈদী বাদ পড়ে যান। তাতে নিজামীর সঙ্গে ঠাঁই পান আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও মকবুল আহমাদ।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এই ধারা এখনো সক্রিয় আছে। সে ক্ষেত্রে দণ্ডিত বলে সাঈদীকে আমির প্যানেল থেকে বাদ দেওয়া হলে তাঁকে যাঁরা পছন্দ করেন এমন সদস্যদের কাছ থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকছে।

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মজলিশে শ‌ুরা (সদস্যসংখ্যা ২৭৭) আমির পদে প্রার্থিতার জন্য তিনজনের প্যানেল নির্বাচন করে। এরপর সারা দেশের রুকনরা (শপথধারী সদস্য, সংখ্যায় ৪২ হাজার) ভোট দিয়ে আমির নির্বাচন করেন।

এ অবস্থায় ভোটাভুটিতে দণ্ডিত সাঈদী প্যানেলে এসে গেলে এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জিতে গেলে তাঁর প্রতি সরকারের আক্রোশ বাড়বে বলে দলের ভেতরে আলোচনা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের যুক্তি, ইতিমধ্যে সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড চেয়ে সরকারপক্ষ আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করে রেখেছে। এ অবস্থায় দলের একটি অংশ ঐক্য ও সংহতি রক্ষার স্বার্থে সাঈদীকে আমির বানিয়ে মকবুল আহমাদকে ভারপ্রাপ্ত রেখে কাজ চালিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী বলেও জানা গেছে।

এ সম্পর্কে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একজন সদস্য অতীতে দলের এ ধরনের কিছু নজির ব্যাখ্যা করে কেবলেন, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকা সত্ত্বেও জামায়াত কয়েক মেয়াদে গোলাম আযমকে আমির নির্বাচিত করেছিল। তবে আব্বাস আলী খানকে ভারপ্রাপ্ত আমির ঘোষণা করে দল চালানো হয়েছিল।

আবার ২০০৯ সালে মতিউর রহমান নিজামী কারাবন্দী হন। ২০১১ সালের জুনে তাঁর আমিরের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কারাবন্দী অবস্থায় নিজামী ফাঁসির দণ্ড পান। কিন্তু এবার জামায়াত দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে তাঁকে আমির পদে বহাল রাখে। তবে সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ‘আমিরে জামায়াত’ সম্পর্কিত ধারা-১৫-এর ৬ উপধারার গ ও ঘ যুক্ত করে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব অনির্দিষ্টকাল করা হয়।

জানা গেছে, প্রায় তিন বছর নায়েবে আমির, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরাসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু শূন্যপদে নির্বাচনের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। দলের দুই জ্যেষ্ঠ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর বর্তমানে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদে আছেন পাঁচজন।

এর মধ্যে সুপ্রিম কো‌র্টের আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক বিদেশে আছেন। এ টি এম আজহারুল ইসলাম ফাঁসির দণ্ড নিয়ে কারাগারে, অধ্যক্ষ আবু তাহের গুরুতর অসুস্থ, শফিকুর রহমান আত্মগোপনে থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এর বাইরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রফিউদ্দিন আহমদ, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, তাসনীম আলম, এ টি এম মাসুম ও হামিদুর রহমান আযাদ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের চার শীর্ষস্থানীয় নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। একই দণ্ড ঝুলছে আরও তিন নেতার বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে কারাগারের ভেতরে-বাইরে মারা গেছেন আরও তিন নেতা। ঝুলে আছে দল নিষিদ্ধ হওয়ার খড়্গও। সরকারের চাপে প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড নেই। এমন পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র মেনে আমির প্যানেলের জন্য মজলিশে শ‌ুরার অধিবেশন ডাকা এবং সদস্যদের ভোট গ্রহণের জন্য সম্মেলন করার সুযোগ কম।

আবার প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড না থাকায় জামায়াত কোন প্রক্রিয়ায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে এবং তা কতটুকু স্বচ্ছ হবে, তা নিয়েও নেতা-কর্মীদের মধ্যেই সংশয় আছে। এর মধ্যেই এ টি এম মাসুমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করে আমির প্যানেলের প্রার্থিতার জন্য শ‌ুরা সদস্যদের ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরপর রুকনদের কাছে ফরম পাঠিয়ে ভোট সংগ্রহ করতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগতে পারে।-প্রথম আলো

২০ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে