শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬, ০২:৫৭:৩০

চার প্রবাসীর হাত ধরে দেশে জঙ্গিবাদ!

চার প্রবাসীর হাত ধরে দেশে জঙ্গিবাদ!

সাহাদাত হোসেন পরশ: দেশে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। ব্লগার থেকে শুরু করে শিক্ষক, লেখক, পুরোহিত, ধর্মযাজকসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে গুলশান ও শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। গুলশানের হামলার দায় স্বীকার করে কথিত বার্তা পোস্ট করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে সম্প্রতি জঙ্গিবাদের যে নতুন বিষবাষ্প ছড়িয়েছে তার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছে প্রবাসী চার বাংলাদেশি। তারা হলো- তামিম আহমদ চৌধুরী, সাইফুল্লাহ ওজাকি, সাইফুল হক সুজন ও আবু তারেক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন কাওসার। তাদের মধ্যে তামিম ২০১৩ সালে কানাডা থেকে দেশে ফিরেছে বলে তথ্য রয়েছে। সাইফুল হক সুজন সিরিয়ায় নিহত বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

বাংলাদেশি গোয়েন্দারা তার নিহতের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন। জাপান প্রবাসী সাইফুল্লাহ ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তাজউদ্দিন দেশের বাইরে রয়েছে। দেশি-বিদেশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে। বিদেশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে এরই মধ্যে অবগত করা হয়।


এদিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়, নিখোঁজ তিন প্রবাসী বাংলাদেশের ভেতরের জঙ্গি ও দেশের বাইরের সংগঠকদের মধ্যে যোগসূত্র হতে পারে। তারা হলো তামিম আহমেদ চৌধুরী, সাইফুল্লাহ ওজাকি ও তাজউদ্দিন কাওসার।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তাজউদ্দিনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর। তার পুরো নাম আবু তারেক মো. তাজউদ্দিন ওরফে এটিএম তাজউদ্দিন ওরফে কাওসার। ২০০৪ সালে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পাস করে। ২০০৬ সালে একই বিষয়ের ওপর মাস্টার্স করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় সে।

২০০৮ সালে সেখানে ধর্মান্তরিত মুসলিম নোভা হাসানকে বিয়ে করে। ২০০৯ সালে স্ত্রী নিয়ে দেশে আসে। এরপর ২০১০ সালেও একবার একা দেশে আসে। সর্বশেষ ২০১৩ সালে দেশে এসে এক সপ্তাহ অবস্থান করে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত যায়। ওই সময় দেশ থেকে যাওয়ার পর তাজউদ্দিনের সঙ্গে স্বজনের তেমন একটা যোগাযোগ ছিল না।

তবে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন নম্বর থেকে মাকে ফোন করে ১-২ মিনিট কথা বলত। ২০১৪ সাল থেকে তাজউদ্দিনের স্ত্রী নোভা হাসানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর (+৬১৪২৪১০৭৮৫৩) রহস্যজনক কারণে বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি জঙ্গি হামলার পর দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তাজউদ্দিনের নাম আলোচনায় আসে। এরপর তার মা লক্ষ্মীপুর থানায় ৯ জুলাই একটি জিডি করেন।


এ ছাড়া জঙ্গিদের আরেক মদদদাতা হিসেবে সিলেটের বিয়ানীবাজারের তামিম চৌধুরীর নামও আলোচনায় রয়েছে। কানাডা প্রবাসী তামিমের সঙ্গে তার পরিবারের যোগাযোগ নেই প্রায় পাঁচ বছর। র‌্যাব নিখোঁজের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে তামিমের নামও রয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন, তামিম চৌধুরী ২০১৩ সালে কানাডা থেকে দেশে আসে। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই।

নিখোঁজের তালিকায় থাকা জাপান প্রবাসী সাইফুল্লাহ ওজাকিকে বাংলাদেশি জঙ্গিবাদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। গত ১ জুলাই গুলশান হামলায় ঘরছাড়া যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে দেওয়া নিখোঁজদের প্রথম তালিকায় সাইফুল্লাহর ওজাকির নাম রয়েছে।


জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামের জনার্দন দেবনাথের ছেলে সজিত চন্দ্র দেবনাথই এই সাইফুল্লাহ। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ সালে বৃত্তি নিয়ে জাপানে গিয়ে ধর্মান্তরিত হয়।

এক জাপানি নারীকে বিয়ে করে জাপানের নাগরিকত্ব নেয় সে। ধর্মান্তরের পর বাংলাদেশে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা সাইফুল্লাহ ২০১১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার পর রিসুমেকান ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতায় যোগ দেয়। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অনুপস্থিত থাকায় গত মার্চে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করে বলে জাপান টাইমের খবরে বলা হয়।

সংবাদ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুল্লাহ ওজাকি ২০১৫ সালের ১৫ মে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন জাপান ফিরে আসার পর পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তার দুই মাস পর সিরিয়ার 'শরণার্থীদের সহায়তা করার' কথা বলে ইউরোপ যায় সাইফুল্লাহ।

বাংলাদেশে সম্প্রতি জঙ্গিবাদকে উস্কে দিতে সাইফুল হক সুজন নামে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আবুল হাসনাতের দুই ছেলে সাইফুল হক সুজন ও আতাউল হক এক সময় যুক্তরাজ্যে থাকত। বর্তমানে আতাউল স্পেনে রয়েছে। আর সুজন সিরিরায় নিহত হয়েছে বলে যুক্তরাজ্যের এক্সপ্রেস পত্রিকা ও বিবিসি খবর দিয়েছিল। সুজন যুক্তরাজ্যে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করে। সে হ্যাকিং কর্মকা , নজরদারি প্রতিরোধ, প্রযুক্তির ওপর পারদর্শী।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, প্রবাসী এই চার বাংলাদেশি নানাভাবে বাংলাদেশি জঙ্গিদের উস্কে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত বাংলাদেশি কিছু পথভ্রষ্ট তরুণ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্য। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় এবিটির বেশ কয়েকটি আস্তানার খোঁজ পাওয়া গেছে।


দুই সন্দেহভাজন দেশে: তাওসীফ হোসেন ও সেজাদ রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো নামে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি দেশের ভেতরে রয়েছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। তাওসীফের বাসা বনানীতে। তার পাসপোর্ট নম্বর-বিই-০৩৫২৭৬১ ও ডবি্লউ-০৫৫৯২২৭। সেজাদের বাসা বারিধারায়। তারা দু'জন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে।

যে কোনো সময় তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে। সম্প্রতি চিকিৎসকসহ এক পরিবারের পাঁচজন ছাড়া মোট সাতজন সন্দেহভাজন জঙ্গির খোঁজ জানতে চেয়েছে পরিবার। তাদের মধ্যে তাওসীফ ও সেজাদ রয়েছে।

আজ আলামত যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে: গুলশানে নিহত জঙ্গিদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আজ আলামত দেওয়া হচ্ছে এফবিআইর প্রতিনিধিদের কাছে। প্রত্যেক জঙ্গির ৩০টি চুল ও রক্তের নমুনা যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআইর ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।-সমকাল

২২ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে