শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬, ০৪:৫৬:০৭

‘নিখোঁজ’ আরও ৪৯ জনের খোঁজ মিলেছে

‘নিখোঁজ’ আরও ৪৯ জনের খোঁজ মিলেছে

নিউজ ডেস্ক: র‌্যাবের প্রকাশিত ২৬২ জন নিখোঁজের তালিকায় থাকা আরও ৪৯ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ ১৩ জেলায় কয়েকজন ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিসহ তাঁদের স্বজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।


এর আগের দিন বুধবার সাত জেলা থেকে এ তালিকার ১১ জনের খোঁজ পাওয়া যায়। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত মোট ৬০ জনের খোঁজ পাওয়া গেল। এ বিষয়ে র‍্যাবের বক্তব্য জানতে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
 

তবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক গতকাল চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের বলেন, র‍্যাবের তালিকাটি যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। মাঠে গিয়ে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ যাচাই করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে দেশবাসীকে জানানো হবে। তখন বোঝা যাবে, কারা প্রকৃত নিখোঁজ আর কারা জঙ্গি হয়ে চলে গেছে।


র‍্যাবের ওই তালিকায় ঝিনাইদহে ২৯ জন নিখোঁজের নাম রয়েছে। ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ বলেন, র‍্যাব যে ২৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে, পুলিশ সেটা যাচাই করে দেখেছে, ২৪ জনই ফিরে এসেছেন। বাকি ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে তাঁরা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি বলেন, সাধারণের এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

 এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালিকায় নাম থাকা দুজন দেলোয়ার হোসেন দুলু ও গোলাম আজম পলাশ মারা গেছেন। বাকি ২২ জন নিজ নিজ বাড়িতেই আছেন। তালিকায় রংপুরের যে নয়জনের নাম রয়েছে, তাঁদের ছয়জনকে গতকাল এলাকায় দেখা গেছে। একজন ইকবাল হোসেন (২০) প্রেমঘটিত একটি মামলায় রংপুরের কারাগারে আছেন।


বাড়িতে থাকা অন্যদের মধ্যে আছেন সাব্বির আহমেদ ওরফে অনিন্দ্য (২৮)। তাঁর বাবা রংপুরে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত বাংলা বিভাগের শিক্ষক কাজী আশফাক উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলে কয়েক দিন নিখোঁজ ছিলেন। বাড়িতে ফিরে আসার পর ওই দিনই কোতোয়ালি থানার পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন।

রংপুরের বৈরাগীপাড়ার ‘নিখোঁজ’ রেজওয়ানুর রহমান (২০) এখন রংপুর প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করছেন। তালিকার আরেকজন শায়েস্তা খান এখন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন। সাঈদ হোসেন (২০), শামিম মিয়া (২৪) ও সাদ্দাম ইকবাল (২১) নিখোঁজ হওয়ার অল্প কয়েক দিন পরই বাড়িতে ফিরে এসেছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

বাকি দুজনের মধ্যে একজন রেজাউল করিমকে (২৮) ওই এলাকার কেউ চেনেন না। নজরুল ইসলামের (২২) এখনো সন্ধান পায়নি পরিবার। ঢাকা থেকে নিখোঁজের তালিকায় ৭৮ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে গতকাল তিনজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ নিয়ে দুদিনে ঢাকার সাতজনের খোঁজ পাওয়া গেল।

তাঁদের একজন সেন্ট যোসেফের ছাত্র আদনান। তিনি নিখোঁজ থাকায় ঢাকার কলাবাগান থানায় জিডি করেন চাচা শাহরিয়ার কবির। আদনানের বাবা খালেক নেওয়াজ বলেন, পরীক্ষায় খারাপ করে আদনান বন্ধুর বাসায় লুকিয়ে ছিলেন। এক দিন পরই ফিরে আসেন।

কলাবাগান থেকে মাহমুদুর রহমান (কাজল) নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়েছেন বলে গত ১৪ মার্চ থানায় জিডি হয়। কলাবাগান থানার পুলিশ জানায়, জিডির দুদিন পর মাহমুদুর রহমান ফিরে আসেন। তাঁর বাবা থানায় এসে সে খবর দিয়ে গেছেন।

র‍্যাবের তালিকায় আশুলিয়া থেকে নিখোঁজ হাবিবুর রহমানের যে মুঠোফোন নম্বর দেওয়া আছে, সেই নম্বরে গতকাল ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি তো নিখোঁজ না। বাড়িতে একটু ঝামেলা হয়েছিল। ১০-১২ দিনের মতো ছিলাম না। তাই বড় ভাই থানায় জিডি করেন। তারপর ফিরে আসি।’

চট্টগ্রামে ‘নিখোঁজ’ ৩৬ জনের মধ্যে গতকাল কেবল তিনজনের বিষয়ে খোঁজখবর করা সম্ভব হয়েছে। তাঁদের একজন জানে আলম। তিনি গতকাল বলেন, তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে প্রথম স্ত্রীর কাছে ময়মনসিংহে চলে গিয়েছিলেন। পরে আবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বাসায় ফিরেছেন। বাকি দুজন নুরুল হুদা ও আবু তাহের (পলাশ) কয়েক দিন পর বাড়ি ফিরে এসেছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের নিখোঁজ দুজনের মধ্যে একজন মো. নুরুজ্জামান আরিফ (২৩) কারাগারে আছেন। নিখোঁজের তালিকায় তাঁর নাম দেখে চিন্তায় পড়েছেন বাবা আবু তালেব। তিনি গতকাল বলেন, ‘র‍্যাব আরিফকে আটক দেখাল। পরে মামলায় তাকে কারাগারে পাঠাল। এখন সেই র‍্যাব তাকে নিখোঁজ দেখাচ্ছে। আমরা খুব ভয় পাচ্ছি।’

অপরজন কামরুজ্জামান টুটুলের বাবা মো. আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘নিখোঁজের ৪০ দিন পর ৮ নভেম্বর টুটুল বাড়ি ফিরে আসে। এখন সে ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।’

নীলফামারীতে তিনজন নিখোঁজের নাম রয়েছে তালিকায়। তাঁদের মধ্যে বরকতুল্লাহ গত ১৭ মে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাকি দুজনের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

নরসিংদীতে কমর উদ্দিন (৩০) ও শাহাজ উদ্দিন (১৯) নামে দুজনকে তালিকায় নিখোঁজ দেখানো হয়। শাহাজকে গতকাল বাড়িতেই পাওয়া গেছে। কমর উদ্দিন গত মে মাসে সৌদি আরবে গেছেন বলে তাঁর পরিবার ও স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে। আর বরিশালের ‘নিখোঁজ’ মো. জোবায়ের হোসেন ফারুক (২৫) বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আছেন বলে তাঁর পরিবার ও পুলিশ জানিয়েছে।

হবিগঞ্জের ‘নিখোঁজ’ দুই ব্যক্তির একজন মাধবপুরের সুন্দোল গ্রামের নাহিদুল ইসলাম ইমন (২২) পড়ালেখার চাপে ২৮ মে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। একটি দোকানে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর ১৪ জুলাই বাড়ি ফিরে আসেন বলে পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানিয়েছে।

নোয়াখালী থেকে নিখোঁজ তিনজনের মধ্যে একজন সদর থানার তিলতলা গ্রাম থেকে মো. ফিরোজ মিয়া ব্যাপারী (২৬)। কিন্তু সদর থানায় ‘তিলতলা’ নামের কোনো গ্রাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরেকজন চাটখিল উপজেলার ছোট জীবননগর গ্রামের মো. আবুল কাশেমের ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল ফজল বলেন, তিনি তাঁর ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান নামে কাউকে পাননি। আরেকজন বেগমগঞ্জের লালপুর গ্রামের আমির হোসেন (২৮) কুমিল্লার গোবিন্দপুরে একটি চানাচুর কারখানায় চাকরি করতেন। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এ নিয়ে পারিবারিক সমস্যায় পড়ে তিনি গা ঢাকা দেন বলে পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান।

১ জুলাই গুলশান হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন বলে ঘটনার পর পরিবারগুলো দাবি করে। কারও কারও নিখোঁজের বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) ছিল। এ খবর বের হওয়ার পর এমন আরও অনেকের নিখোঁজের খবর গণমাধ্যমে আসতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা নিখোঁজ হয়ে জঙ্গি দলে ভিড়েছে এমন সন্দেহভাজনদের তালিকা করা শুরু করে।

গত মঙ্গলবার রাতে র‍্যাব নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে শেহজাদ হোসেন অর্কের নাম দুবার উল্লেখ আছে। তাই তালিকায় প্রকৃত সংখ্যা হবে ২৬১ জন।-প্রথম আলো

২২ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে