শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬, ১১:১৯:২৩

নিখোঁজ হাফেজ ছেলে ইয়াসিনকে পরীতে ধরেছে ভেবেছিলেন বাবা

নিখোঁজ হাফেজ ছেলে ইয়াসিনকে পরীতে ধরেছে ভেবেছিলেন বাবা

উদিসা ইসলাম : গত মার্চে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া হাবিবুর রহমান ইয়াসিনকে পরীতে ধরেছে বলে বিশ্বাস করতেন বাবা মাকসুদুর রহমান। ছেলে শিগগিরই ফিরে আসবে ভেবে জিডিও করেননি তিনি।এর আগেও ছেলে একাধিকবার এলাকা ছেড়ে চলে গেছে দাবি করে তিনি বলেন,এর আগে পাঁচদিনের বেশি সে কখনোই নিখোঁজ থাকেনি।

র‌্যাবের তালিকায় ১৫০ নম্বরে থাকা হাবিবুর রহমান ইয়াসিনের বাবা মাকসুদুর রহমান কিশোর চাটখিল আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দাবি করেন নিজেকে। নোয়াখালীর চাটখিলের ছায়ানি তাগবা গ্রামে ৬ মার্চ ইয়াসিন নিখোঁজ হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে ৬ জুলাই চাটখিল থানায় জিডি করা হয়।

দেরিতে জিডি করার বিষয়ে মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা কুসংস্কারের মাঝে বাস করি। ছেলে হারিয়ে আমি নানা তুকতাকে বিশ্বাস করে তাবিজ, পরী এসবের পেছনে সময় নষ্ট করেছি। সন্তান হারিয়ে আমি এবং আমার পরিবার অসুস্থ হয়ে পড়েছি। দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ব্যবসাও শেষ। যেখানেই খোঁজ করতে গেছি, সবাই বলেছে আমার ছেলের সঙ্গে জ্বিন আছে, পরী আছে। সে ফিরে আসবে। কিন্তু ছেলে কোথায় আছে, তা কেউই বলতে পারেননি।

ছেলে চলে গেল কীভাবে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। ছেলে কোরআনে হাফেজ সমাপ্ত করেছে দুইবছর হলো। আমাদের এলাকায় নাম করা মাদ্রাসা আছে, সেখানেই দেই তাকে। সে মাঝেমধ্যে কোথায় যেন চলে যেতো। দু- একদিনের ভেতর ফেরতও আসতো। কোথায় ছিলে জানতে চাইলে মসজিদের কথা বলতো। ছেলের এই ভাবগতিক দেখে আমি তাকে বেশ শাসনও করি এবং দারুল কোরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় দেই। এর মধ্যেও দুইবার সে চলে গেছে। একবার আমার মামার বাড়ি,আরেকবার তার নানা বাড়ি।

ইয়াসিনের বাবা মাকসুদুর রহমান বলেন, মাদ্রাসা থেকে প্রতিমাসে একদিনের ছুটিতে বাড়িতে আসতো ইয়াসিন। ছুটি শেষে আমি বাইকে করে দিয়ে আসি তাকে। কিন্তু মার্চ মাসে রেখে আসার সময় আমি তাকে মাদ্রাসা গেটের ভেতরে দিয়ে বলি, আব্বু তুমি যাও, আমার টেণ্ডারের কাজ আছে। গেটের ভেতর ঢুকতেও দেখেছি। কিন্তু দুদিন পর মাদ্রাসার শরিফ সাহেব আমাকে ফোন করে বলেন, ছুটিতে গেছে ইয়াসিন, আর আসেনি। তখন আমি প্রথম জানতে পারি, আমার ছেলে মাদ্রাসায় নেই।

এখন জিডি করলেন কেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের এখন যা অবস্থা! যদি কোনও দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে, তাহলে আমরা সপরিবারে ঝামেলায় পড়বো। সবাই জানে, আমরা সপরিবারে আওয়ামী পরিবারের একনিষ্ঠ কর্মী। জিডি করার পর থানা থেকে পুলিশ এসেছিল এবং র‌্যাব অফিস থেকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছে। আমি জানি না আমার সন্তান কোথায়।

সারাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ ২৬২ জনের একটি তালিকা ঘোষণা করেছে র‌্যাব। রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর নিখোঁজদের অনুসন্ধানে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে তাদের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ১৭ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। র‌্যাবের অনলাইন মিডিয়া সেলের ফেসবুক পাতায় মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টার দিকে নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। -বাংলা ট্রিবিউন
২২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে