উদিসা ইসলাম : র্যাবের সরবরাহ করা নিখোঁজ তালিকায় ৬০ নম্বরে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোস্তফা কামাল (২৬) এক সপ্তাহ আগে বাড়ি ফিরে এসেছেন। ঈদের আগের দিন গরু কিনতে গিয়ে অপহরণের শিকার হন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোস্তফা কামাল জানান, ডিবি থেকে গত পরশু তাদের বাসায় লোক গিয়ে তার খোঁজ নিয়ে গেছেন। তার পাসপোর্টের ফটোকপি ও ছবি সংগ্রহ করেছেন তারা। এর আগে তার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় জন্ম নিবন্ধনের কাগজসহ বিভিন্ন কাগজ দিয়ে আসা হয়েছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরনিজামপুরের ছেলে দাখিল পাস মোস্তফা কামাল। নিখোঁজের আগে তিনি গার্মেন্টসে কাজ করতেন বলে র্যাবের তথ্যে জানানো হলেও তার দাবি, তিনি বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন। ছেলের নিখোঁজ বিষয়ে বাবা সাইদুর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে ফিরে এসেছে। সে ঈদের আগের দিন গরু কিনতে গিয়ে আর ফেরত আসেনি। পরে গতকাল বুধবারের আগের বুধবার সে বাসায় ফিরে আসে।
কী হয়েছিল জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, গত ৬ তারিখ আমি গরু কিনতে গিয়েছিলাম। কেউ আমাকে ফলো করছেন এমন কিছু বুঝিনি আমি। আমার কাছে ৩১ হাজার ৫শ টাকা ছিল। কীভাবে আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম তাও জানি না। যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে, তখন আমি বুঝতে পারি, আমি একটা মাইক্রোবাসে। কোথায় নিয়ে গিয়েছিল আমি তাও জানি না। যারা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তারা বারবার আমার কাছে আরও টাকা চাইছিল। টাকা না দিলে আমাকে সাগরে ভাসিয়ে দেবে বললে আমি বুঝতে পারি, আমাকে কক্সবাজারের দিকে হয়ত নিয়ে আসা হয়েছে।
তারা কতজন ছিলেন জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, বেশির ভাগ সময় আমার চোখ-হাত বাঁধা ছিল। আমি বলতে পারবো না তারা কতজন ছিলেন।
কীভাবে মুক্তি পেলেন প্রশ্নের উত্তরে কামাল বলেন, গত মঙ্গলবারের আগে কোনও একসময় আমাকে তারা কক্সবাজারে ফেলে দিয়ে যায়। স্থানীয় এক লোক আমাকে উদ্ধার করে আমার বাড়ির ঠিকানা জেনে, বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আমার পুরো শরীর কাদা-বালুতে মাখামাখি ছিল। সেই লোকই আমাকে কাপড় কিনে টিকিট করে দেন।
অপহরণকারীরা কেন ছেড়ে দিলো,কোনও টাকা দিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে কামাল বলেন, আমি বার বার বলেছি, আমাকে মেরে ফেলো তোমরা। আমার পরিবারের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমি আর বাঁচবো না। তাহলে পরিবারের লোকের কাছে টাকা চেয়ে তাদের বিপদে ফেলবো কেন! তারা আমাকে অনেক শাসিয়েছে। দুই লাখ টাকা দিলেই ছেড়ে দেবে বলেছে। কিন্তু আমি বারবারই তাদের বলি, আমাদের টাকা দেওয়ার কোনও অবস্থা নেই। ওদের হাতে পিস্তল দেখেছি আমি। এরপর বাড়ি ফিরে থানায় ঘটনাটি জানিয়েছেন তিনি।
সারা দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ ২৬২ জনের একটি তালিকা দেয় র্যাব। রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর নিখোঁজদের অনুসন্ধানে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে তাদের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ১৭ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
র্যাবের অনলাইন মিডিয়া সেলের ফেসবুক পাতায় মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টার দিকে নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। -বাংলা ট্রিবিউন
২২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম