শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬, ০৭:২১:৩৬

যে কারণে জামায়াতকে ছাড়ছে না বিএনপি

যে কারণে জামায়াতকে ছাড়ছে না বিএনপি

রফিক মৃধা : গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর জঙ্গিবাদের উত্থান রুখতে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির জাতীয় ঐক্য গঠনে বড় বাধা হয়ে আছে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী।

ঐক্য গঠনে সরকারী দলের শর্ত. বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে হবে।  অন্যদিকে ভোট আর রাজপথের আন্দোলনের স্বার্থে জামায়াতের সঙ্গে জোট ভাঙতে রাজি নয় বিএনপি।

দেশের প্রধান দুই দলের এই অনড় অবস্থানের ফলে জাতীয় ঐক্য গঠনের সম্ভাবনা ধুলিস্যাত হতে চলেছে।

জামায়াতকে ছাড়ার ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হল জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল। নিকট অতীতেও আওয়ামী লীগ এই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ২০ দল থেকে এই সংগঠনকে বাদ দিলে তারা (আ’লীগ) যে তাদের জোটে নেবে না তার নিশ্চয়তা কি আছে? তারাতো সরকারে আছে তাদের (জামায়াত) ভালো না লাগলে এবং সাহস থাকলে নিষিদ্ধ করুক।

দেশে জোট বদ্ধতার রাজনীতিতে প্রকৃত অর্থে বড় দুই রাজনৈতিক দল কতোটা লাভবান হচ্ছে তা এমনিতেই বোঝা বোঝা যায়; সমীক্ষা করে দেখারও প্রয়োজন নেই।

দুই জোটে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে ব্যক্তি সর্বস্ব বলা যায়। আন্দোলন-সংগ্রামে শক্তি বৃদ্ধি করতেই জামায়াতকে জোট থেকে ছাড়ছে না বিএনপি।  

এছাড়া জামায়াতকে না ছাড়ার আরেকটি কারণ হলো তাদের ৩/৪ শতাংশ ভোট আছে।  নির্বাচনী মাঠে জামায়াতের ভোট কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। যদিও জামায়াতের ওপর যুদ্ধাপরাধের কালিমাও রয়েছে।  এ নিয়ে দেশে বিদেশে সমালোচনা ও বাধার সম্মুক্ষীন হলেও জামায়াতকে ছাড়ছে না বিএনপি।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, এই জোটে জামায়াত থাকবে কি-না বিদায় হবে তা নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।  নিবন্ধিত এই রাজনৈতিক সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা সরকারের আছে।  জামায়াত তাদের বিষফোঁড়া হলে নিষিদ্ধ করলেই পারে।  তাহলেই কেবল জামায়াত ছাড়বে বিএনপি জোট।

জামায়াত ছাড়া প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল।  এখন জামায়াত যারা করে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ৬০ ভাগের জন্মই হয়নি।  তাদের রাজনীতি করার অধিকার আছে না। তারপরও যদি সরকার মনে করে জামায়াত সব কিছুর প্রতিবন্ধকতা। উনি ( শেখ হাসিনা) সংসদে কত বেআইনিকে আইন বানিয়েছে। একটা আইন বানিয়েছে এই আইনগুলোকে পরির্বতন করা যাবে না। এটাও তো একটা বেআইনি আইন। পার্লামেন্টে জামায়াতকে বাতিল করে দিতে পারে। সেটা করে না। জামায়াতকে আমাদের বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। বাতিল করে দিলেই তো হয়। আর আমরা বাদ দিলে ক্ষমতাসীনরা জামায়াতের সঙ্গে সর্ম্পক করবেন না এই গ্যারান্টি কী?

তিনি বলেন, অতীত বলে রাজনৈতিক সখ্যতা জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের বেশী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল প্রথম জামায়াত এনেছে। সেটা নিয়ে তারা আন্দোলন করেছে। মতিউর রহমান নিজামী, আলি আহসান মুজাহিদের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা মিটিং করছে এসব ছবিও আছে। তারা যুগোপথ আন্দোলন করেছে। জাতিকে ব্লাক মেইল করবেন না। গর্ভমেন্টের ফ্যাংশনে ইসলামি ব্যাংক সবচেয়ে বড় ডোনার হয়। টাকা নেওয়ার সময় রাজাকার থাকে না। অন্য সময় রাজাকার বলবেন। এটা ব্লাকমেইল না?

সম্প্রতি অবশ্য আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সংসদে জানিয়েছেন, আইন করে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করতে আইনের সংশোধনী আনার পরিকল্পনা রয়েছে।  এ সংক্রান্ত একটি বিল মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন দিলে তা সংসদে উত্থাপন করা হবে। সরকার যখন চাইবে তখনই এটি সংসদে উত্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি। জামায়াত নামের সংগঠন নিষিদ্ধকরণে ট্রাইব্যুরালেও আইন করার প্রস্তাব রয়েছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ বলতে যেসব সংগঠন নিষিদ্ধ, চরমপন্থী, উগ্রপন্থী, মানুষ হত্যা করছে, তাদের বোঝায়। জামায়াত যদি জঙ্গি সংগঠন হতো, তাহলে তো সরকার নিষিদ্ধ করত। তাহলে জামায়াত ছাড়ার বিষয়টি আসছে কেন? বিএনপির রাজনীতির কৌশল কি হবে তা তো আওয়ামী লীগ বা অন্য কেউ নির্ধারণ করে দিলে চলবে না।

তিনি বলেন, জামায়াতের সাথে ‘আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠন’-এই তিন ইস্যুতে জোট হয়েছে একটি বৈধ রাজনৈতিক দলকে বিএনপি সাথে-পাশে রাখলে খারাপ আর আওয়ামী রাখলে ভালো এটা অস্থির মস্তিষ্কের কথা। সরকার পারলে তাদের নিষিদ্ধ করুক, আমরা তখন তাদের ‘না’ বলে দেব।

জামায়াত ছাড়া প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, জাতীয় ঐক্যর ব্যাপারে অনেক কিছুই হতে পারে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, অনেকেই জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যদি লিখিতভাবে কোনো প্রস্তাব দেয় তাহলে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে নিশ্চয় আমরা তা বিবেচনা করব। জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। যাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি।

জামায়াত প্রসঙ্গে কথা বলতে এ মুহূর্তে বিএনপির অনেক নেতাই বর্তমানে বিব্রতবোধ করছেন।  জাতীয় ঐক্য গঠন ও ক্ষমতাসীন দলের শর্ত প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নীতিনির্ধারণ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, জামায়াত নিয়ে এ মুহূর্তে তাদের দুই ধরনের ভাবনা রয়েছে।

প্রথমত, ক্ষমতাসীনরা যদি খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দিয়ে জামায়াতকে বাদ দেয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়, সেক্ষেত্রে কেবল জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়ার চিন্তা রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়ার ডাকে সরকার সাড়া না দিলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা হবে। এক্ষেত্রে জামায়াতকে জোট থেকে বাদ না দিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হবে। এমনকি জঙ্গিবাদ ইস্যুতে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে কোনো কর্মসূচিও দেবে না দলটি। আপাতত এমন চিন্তাভাবনা করেই কর্মপরিকল্পপনা তৈরি করা হচ্ছে। -পূর্বপশ্চিম
২৩ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে