রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬, ০২:২৩:১০

গুলশান হামলা: রহস্যময় নারী ও তার দুই সন্তানকে খুঁজছে পুলিশ

গুলশান হামলা: রহস্যময় নারী ও তার দুই সন্তানকে খুঁজছে পুলিশ

নিউজ ডেস্ক: গুলশানে হামলাকারী জঙ্গিদের সহযোগী এক নারী ও তার দুই সন্তানকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি কে? সেই প্রশ্নের জবাব মেলেনি এখনও। রিমান্ডে থাকা বাড়ির মালিক, ম্যানেজার ও মালিকের ভাগনের কাছ থেকেও তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। মে মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের টেনামেন্ট হাউসের ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন তিনি। তার সঙ্গে ছিল ১০-১২ বছরের দুই সন্তান।

প্রতিবেশীদের বর্ণনা অনুযায়ী হামলার আগের দিনও ফ্ল্যাটটিতেই ছিলেন ওই নারী। হামলার আগের দিন তার বাসায় ছিল অনেক ‘গেস্ট’। যাদের সবাই তরুণ। সব সময় হিজাব পরে থাকায় কেউ তার চেহারা দেখেনি। ফলে তাকে শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।


তদন্ত সংস্থার একটি সূত্রের ধারণা, ওই নারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের স্ত্রী শারমিনা করিম। তিনি জিম্মি হিসেবে হলি আর্টিজানে আটকা পড়েন। শারমিনা করিম, তার দুই সন্তান ও স্বামী হাসনাত করিমকে জেরা করেছেন গোয়েন্দারা। তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।


সূত্র জানায়, এ হামলায় হাসনাত করিমের জঙ্গিদের সহযোগিতার প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী দল। তিনি জঙ্গিদের সঙ্গে খোশমেজাজে ঘোরাফেরা করেন। হামলাকারীদের নির্দেশে দুই জিম্মির মোবাইলে জঙ্গিদের জন্য অ্যাপস ডাউনলোড করে দেন। এক সময় তাকে অস্ত্র হাতেও দেখা যায়। হাসনাত রেজা করিমকে এ বিষয়ে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে।


মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, হলি আর্টিজানে হাসনাত রেজা করিম, তার স্ত্রী শারমিনা করিম, ১৬ বছর বয়সী মেয়ে শেফা করিম ও ৮ বছর বয়সী ছেলে রায়হান করিম জিম্মি হিসেবে আটকা পড়েন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষকের হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ছিল। ২০১২ সালে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।


জঙ্গিদের বাড়ি ভাড়া দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এসএম গিয়াস উদ্দিন আহসানসহ চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। গিয়াস উদ্দিন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়ির (টেনামেন্ট হাউস) এ/৬ ফ্ল্যাটের মালিক।

এ ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়েই জঙ্গিরা গুলশানে হামলা চালায়। পুলিশ ১৬ জুলাই তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে। ১৮ জুলাই ৮ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ ও মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও তাদের কাছ থেকে জঙ্গিদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য মেলেনি। বাড়ি ভাড়া নেয়া সেই নারী ও তার দুই সন্তান সম্পর্কেও তারা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

রিমান্ডে থাকা অন্যরা হলেন- গিয়াস উদ্দিনের ভাগনে আলম চৌধুরী, বাড়ির ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান এবং ৪৪১/৮, শেওড়াপাড়ার বাড়ির মালিক স্কুলশিক্ষক নুরুল ইসলাম।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটি) পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির জানান, তাদের রিমান্ড শেষে সোমবার আদালতে হাজির করা হবে।


গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার সময় ৭৯ নম্বর সড়কে এক নারীর উপস্থিতি দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজে। হামলাকারীদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। এ রকম এক নারীকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর শিবচর থানার চরখুপি গ্রাম থেকে আটক করা হয়। তবে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।


নরসিংদীর স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে সাদা পোশাকে পুলিশের একটি দল তাকে আটক করে। পলাশ থানার মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন ওরফে বদুর মেয়ে রুমা বেগম এলাকায় অর্ধপাগল হিসেবে পরিচিত। পাঁচ বছর আগে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর রুমা মানসিক ভারসাম্য হারান। পরে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে চলে যান দুবাই। সেখানে নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন। তার সঙ্গে জঙ্গিদের আদৌ কোনো সখ্য ছিল কিনা তার কোনো তথ্য পায়নি স্থানীয়রা।


সিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, ফুটেজে যে নারীর উপস্থিতি দেখা গেছে তার সঙ্গে নরসিংদীর রুমার চেহারার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ১ জুলাই ঘটনার দিন রুমাও গুলশান এলাকাতেই ছিলেন। তার সংশ্লিষ্টতা জানার চেষ্টা চলছে।

১ জুলাই গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে জঙ্গিরা। এতে ২০ জিম্মি ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হয়। পরদিন ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত কমান্ডো অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ নিহত হয় ৬ জঙ্গি।-যুগান্তর

২৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে