রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:৩০:০৪

খালেদাপ্রেমী এক রিজভীর গল্প

খালেদাপ্রেমী এক রিজভীর গল্প

রাজকুমার নন্দী : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা হওয়ার পর বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচি পালনে ঢাকার নেতাকর্মীদের যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন একজন ঠিকই রাজপথে আছেন। তবে রাজপথ বললে কিছুটা ভুল হবে, রয়েছেন খোদ বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই। যেখানে এখন হাতেগোনা কিছু নেতা ছাড়া বাকিরা যাওয়ার সাহস করছেন না। কারণ, বিএনপি কার্যালয় ও এর আশপাশ ঘিরে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।

লিকলিকে শরীরের মাঝবয়সী এই লোকটি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কখনও কার্যালয়ের ভেতরে যাচ্ছেন, আবার কখনও কার্যালয়ের সামনে আসছেন। আর গত ১৬-১৭ বছর ধরে এ কাজ তিনি করছেন সপ্তাহের সাতদিন। এ যেন রুটিন ওয়ার্ক। তিনি তারেক রহমানের পরম ভক্ত। শুধু তারেকের ভক্ত বললে ভুল হবে, খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমানেরও অন্ধ ভক্ত। একাধিকবার জেলও খেটেছেন।

রিজভী হাওলাদার। দলের অনেকে তাকে ‘পাগলা রিজভী’ বলেও ডাকেন। কিন্তু তাতে তার কোনো আপত্তি কিংবা ক্ষোভ নেই।

ওয়ান-ইলেভেনে বিএনপির চরম দুঃসময়ে ছিলেন জিয়া পরিবারের পাশে। খালেদা-তারেকের মুক্তির দাবিতে গেছেন একাধিক মানববন্ধনে। কিন্তু তার কোনো পদ-পদবি নেই, চানও না তিনি। দলকে অত্যন্ত ভালবাসেন। বিএনপি ও খালেদা-তারেকের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকতে চান। এ জন্য প্রাণ গেলেও আপত্তি নেই রিজভীর।

রিজভীর কাছে জিয়া পরিবারের নামে কেউ কোনো সমালোচনা করলে নিস্তার নেই তার। কারণ, খালেদা-তারেক রহমানের কোনো অকল্যাণের খবর যে সহ্য করতে পারেন না তিনি। মুদ্রাপাচার মামলায় তারেকের সাজা হওয়ার খবরে কষ্ট পেয়েছেন রিজভী।

বুকে-পিঠে ‘তারেক জিয়ার সাজা বাতিল করো, স্বৈরাচার নিপাত যাক-গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে  জানিয়েছেন প্রতিক্রিয়াও। শহীদ নূর হোসেন স্বৈরাচার এরশাদের পতনের প্রাক্কালে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখে রাজপথে নেমেছিলেন।

ওই স্লোগানের ব্যাপারে রিজভী হাওলাদার বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ও তারেক রহমানকে অত্যন্ত ভালোবাসি। তারেক ভাইয়ের সাজার রায়ে কষ্ট পেয়েছি। এই সাজা বাতিল করতে হবে। এ জন্য লিখছি।’

রিজভীর জন্ম পটুয়াখালীর বাউফলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। বর্তমানে পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জে থাকেন। রিজভীর এক মেয়ে ও এক ছেলে। তারা পড়াশোনা করে।

বিএনপির অন্ধ ভক্ত হওয়া এবং বাড়ি করার সামর্থ্য না থাকায় ১০ বছর আগে রিজভীকে ছেড়ে চলে যান স্ত্রী। কিন্তু তবুও দল ছাড়েননি তিনি। অবশ্য পরে আবার বিয়ে করেন রিজভী।

১৯৯৬-৯৭ সালের দিকে রিজভীকে ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের অফিস স্টাফের চাকরি দেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ ছাত্রদল নেতা সাগির আহমেদ। তবে সাগির আহমেদ মারা যাওয়ার পর ওই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।

কিভাবে সংসার চলে, জানতে চাইলে রিজভী বলেন, ‘বিএনপির কিছু নেতা আমাকে সাহায্য করেন। এ ছাড়া অনেক নেতার ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে দিই। বিনিময়ে তারা কিছু টাকা-পয়সা দেন। এভাবেই চলে যায়।’

গত বছরের শুরুতে দেশব্যাপী টানা ৯২ দিনের আন্দোলনে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া খালেদা জিয়ার জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন ‘পাগলা’ রিজভী। কিন্তু পুলিশি বাধার কারণে খাবার কার্যালয়ের ভেতরে পৌঁছাতে পারেননি।

নিজের জমানো ৩০০ টাকা দিয়ে কেনা কেক কেটে খালেদা জিয়ার গত জন্মদিন পালন করেন তিনি। এ ছাড়া গত ঈদুল ফিতরে ২০টি এবং জিয়াউর রহমানের গত জন্মবার্ষিকীতে গরিব ও দুস্থদের মাঝে ৩০টি পাঞ্জাবি বিতরণ করেন।  

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর যখন নেতাকর্মীদের দেখা পাওয়া ভার ছিল, তখন শোক জানিয়ে গুলশান কার্যালয়ে ব্যানার টাঙিয়েছিলেন এই ‘পাগলা’ রিজভী।

রিজভী বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় গ্রেপ্তারের পর তারেক ভাই অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তাকে পিজি হাসপাতালে আনা হয়। তখন প্রতিদিন আমি সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম।’

বিএনপি করার জন্য রিজভীকে মামলা-হামলা, জেল-জুলুম ও পুলিশি নির্যাতনও ভোগ করতে হয়েছে। তিনবার কারাগারে গিয়ে প্রায় সাড়ে ১২ মাসের মতো থাকতে হয়েছে। ৯৬ সালে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ রিজভীকে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করে, যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। ৪০ বছর বয়সী রিজভীকে দেখলে মনে হয় ৫০ বছর বয়সী এক কঙ্কালসার মানুষ। তার নামে এখনও দুটি মামলা রয়েছে।

নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘ভবিষ্যতে এলাকায় গিয়ে মেম্বার পদে নির্বাচন করব। এ লক্ষ্যে মাঝে-মধ্যে এলাকায় যাই। গরিব ও অসহায় মানুষদের যতটুকু পারি সহযোগিতা করি।’

খালেদা-তারেকের জন্য জীবন দিতেও ভয় পান না জানিয়ে বিএনপির এ অন্ধ সমর্থক বলেন, ‘ম্যাডাম ও তারেক ভাই যখন থাকবে না, তখন আর বিএনপি করব না। কারণ, এই দলের অনেক নেতা দিনে বিএনপি করে, আর রাতে করে আওয়ামী লীগ।’  -বাংলামেইল
২৪ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে