সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:৪২:০৭

দেশে ফেরা হাজিরা জানালেন মক্কার দুর্ঘটনার আসল কারণ

দেশে ফেরা হাজিরা জানালেন মক্কার দুর্ঘটনার আসল কারণ

আমানউল্লাহ আমান : ‘মিনায় পদদলিত হয়ে হাজিদের মৃত্যুর ঘটনার সম্পূর্ণ দায় বাদশার ছেলের (প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান)।  সে আসাতে সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়।  থার্ড ফ্লোরের রাস্তাটা খোলা ছিল।  সেখানে অবস্থান নেয়া লোকগুলো কেবল বেঁচে ছিল।  আর সমস্ত লোক মারা গেছে।  প্রিন্সের কারণে সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় ভিড়ের চাপে মানুষ মারা যায়।

বাদশার ছেলে প্রিন্স জামারায় ঢিল মারতে গেছিল।  তাকে আনার জন্য সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়।  তখন পেছন থেকে ধাক্কার চাপ বাড়ে।  একপর্যায়ে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মানুষ মারা যায়।  অত্যন্ত দুঃখজনক।  এই বাদশার ছেলের ফাঁসি চাই।  ফাঁসি না হলে এর উচিত শিক্ষা হবে না।  আমি উপরে ছিলাম। উপরে থাকাতে আমরা বেঁচে গেছি’— রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকা থেকে হজ করতে যাওয়া সুলতান আলী মিনার মর্মান্তিক ওই ঘটনার বর্ণনা এভাবে দেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ৩০৫ হজযাত্রী ঢাকায় অবতরণ করেন।  বেসরকারিভাবে পরিচালনা করা এটি হজফেরত প্রথম ফ্লাইট।ফিরে আসা অধিকাংশ হাজি ওই ঘটনায় সৌদি কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে সৌদি প্রিন্সকে দায়ী করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

হজের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে মিনায় ‘শয়তানের স্তম্ভে’ পাথর ছুঁড়তে যাওয়ার পথে পদদলনের এ ঘটনা ঘটে।  এতে সাত শতাধিক হাজি নিহত এবং আরও অন্তত ৮৬৩ জন আহত হন।  এটি সৌদি সরকারের ভাষ্য হলেও ইরানসহ বিভিন্ন দেশ ওই ঘটনার জন্য শাহজাদা মুহাম্মাদ বিন সালমানের গাড়ি বহরকে দায়ী করেন।  

তার বিপুল গাড়িবহর ও নিরাপত্তা প্রহরা মিনার প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়।  শাহজাদার সঙ্গে ছিল ২০০ সেনা ও ১৫০ পুলিশ কর্মকর্তা। আর ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দুই হাজারের অধিক বলে ইরানের গণমাধ্যমের দাবি।

বাসাবোর হাজি সুলতান আলী বলেন, আমাদের দেখলেই ওরা আলী বাবা, আলী বাবা মনে করে।  অত্যন্ত লজ্জাকর ব্যাপার।  অথচ আমরা যে ক্যাম্পে ছিলাম, ৩০০ গিনিপিগের মতো।  যেমন ফার্মে মুরগি এক সঙ্গে রাখা হয়। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ানদের নিচের রাস্তা রেড কার্পেট দেওয়া, আর আমাদের বাংলাদেশিদের মুরগির মতো রাখা হয়।

রাজধানী মুগদার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, সৌদির স্থানীয় সময় সোয়া ৮টায় ওই ঘটনা ঘটে।  ওই সময় আমি সামনের দিকে ছিলাম।  পেছন থেকে চাপ আসলে সামনের দিকে চলে যাই। সৌদি একজন প্রিন্সের জামারায় যাওয়ার কারণে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়।  এ কারণে হতাহতের এ ঘটনা। আতিয়ার রহমান নামের আরেক হাজি বলেন, শুনেছি পাকিস্তানি এক হাজির সঙ্গে আফ্রিকার একটি দেশের নাগরিকের মারামারি হয়।  পরে আফ্রিকান ও পাকিস্তানিরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

হাজি আইনুন নাহার বলেন, হজের আনুষ্ঠানিকতা ও ইবাদত-বন্দেগী শেষ করার পর তারা খুবই ক্লান্ত ছিলেন।  এ ছাড়া আবহাওয়া ছিল খুবই উত্তপ্ত। হঠাৎ ধাক্কা এলে কেউ তা সামলাতে পারেনি।  ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

হাজি আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, তিন রাত, তিনদিন ধরে হাজিরা জেগে ছিলেন। তারা হাঁটছিলেনও আস্তে আস্তে।  হঠাৎ ধাক্কা ও হুড়োহুড়ির কারণে অধিকাংশ হাজি সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে যায়।  ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

হাজি বি জেড এম ফারুক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন, শুনেছেন।  তিনি বলেন, পাথর মারার স্থান থেকে হতাহতের ঘটনার দূরত্ব দেড় কিলোমিটার। ওই সময় মিনায় প্রচণ্ড রোদ, তাপমাত্রা ছিল ৫০ ডিগ্রির ওপরে। হঠাৎ হুড়োহুড়ির কারণে কেউ তা সামাল দিতে পারেনি।  সৌদি সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় কোনো ত্রুটি করেনি। -দ্য রিপোর্ট
২৮ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে