মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:৫২:৫৪

‘কেন এমন হলো! মানুষ আপনাকেই মনে রাখবে’

‘কেন এমন হলো! মানুষ আপনাকেই মনে রাখবে’

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : ঈদ মোবারক। টাঙ্গাইল পার্ক ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলাম। প্রতি বছর ঈদের জামাতে সেখানেই যাই। অসঙ্গতির যেন শেষ নেই। ফারুক হত্যার পর চাঁদাবাজ, গুন্ডারা পালিয়েছে। তাই টাঙ্গাইল একেবারে শান্ত-নীরব। গত এক বছর মারামারি, কাটাকাটি নেই। মাঝে একদিন তাদের উদয় হয়েছিল। আওয়ামী লীগ অফিসে মারামারি কাটাকাটি ভাঙচুর সীমাবদ্ধ ছিল। বাইরের লোক আঁচ করতে পারেনি। এবার ঈদের মাঠে ছিল প্রচুর গরম। আগের কদিন ছিল লাগাতার বৃষ্টি। তাই মানুষ হাঁস-ফাঁস করছিল। ঈদের জামাতে বক্তৃতা করার কেউ ছিল না। ডিসি দেরিতে এসেছিলেন কিনা জানি না। জামাত দাঁড়িয়ে গেলে কে এক ভদ্রলোক বলেন, 'জেলা প্রশাসক দুকথা বলবেন।' মানুষ বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করে ওঠে। ডিসি বাহাদুরও ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বলে বসে পড়েন। না বসে উপায় ছিল না। অমন নাকাল হতে কেন দাঁড়িয়েছিলেন বুঝতে পারিনি। আসলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ার থাকতে অনেক কিছুই বুঝতে চান না। অবসরে গেলে যখন লাইনে দাঁড়াতে হয় তখন তারা কত ধানে কত চাল বুঝতে পারেন। সবার আবার তাতেও জ্ঞান হয় না।

নিজের কথা লিখতে ভালো লাগে না, আবার না লিখলেও চলে না। নরম মাটি পেলে যেমন বিড়াল খামচায়, তেমনি আমাকে নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা এটা ওটা করলে খারাপ লাগত না। কিন্তু আওয়ামীপন্থিরা যখন চুলকিয়ে ঘা করতে চেষ্টা করে তখন খারাপ না লেগে পারে না। বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে যে মতিয়া চৌধুরী ডুগডুগি বাজাতেন তাকে নিয়ে কথা নেই, জনাব হাসানুল হক ইনুকে নিয়ে কথা নেই। স্বাধীনতার পরপর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগারদের খুন করে যারা পথে বসিয়েছিল তারা জামাই আদরে আছে। যত নিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে নিয়ে। তাও আবার মাথা নিচু করে যদি রিকশা চালাতাম, মাটি কাটতাম, ভিক্ষা করতাম তাহলে এসব হতো না। কত পত্রিকা আছে তারা কেউ লিখল না, ঈদের আগে একটি জাতীয় দৈনিক প্রথম পাতায় লিখল, '৯ কোটি টাকা সুদ মাফ পেলেন কাদের সিদ্দিকী।' পত্রিকাটির সম্পাদক একজন ভালো মানুষ। আমি তাকে খুবই স্নেহ করি, আমাকেও খুব ভালোবাসেন। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানে রাজাকার থাকলে তারা খোঁচাখুঁচি করবেই। কয়েকটা রাজাকার, তার দুয়েকটা টাঙ্গাইলেরও আছে। কয়েক বছর আগে ৮ কলামের ব্যানার হেডিংয়ে পরপর দুদিন ছাপা হয়েছিল, 'কাদের সিদ্দিকী ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আসলে আমার ২৩ কোটি হাতাতে হবে কেন? এমনিতেই আমি টাকা-পয়সা হাতাই না। হাতাহাতি যা করার কাগজ-কলম, জিনিসপত্র, বাচ্চা-কাচ্চা, চকলেট নিয়েই করি। টাকা-পয়সা আমার তেমন লাগে না। যা লাগে অন্যেরাই দেখাশোনা করে। এভাবেই জীবনের বেশি সময় চলে গেছে। এখন আর যে কদিন থাকব এসব নিয়ে ভাবার সময় কই? স্বাধীনতার পর আমি যদি মতিঝিলের কোথাও লক্ষণ রেখা টেনে দিতাম কারও বাবার সাধ্য ছিল সে দাগ মুছে দেয়? না, তেমন ক্ষমতা কারো ছিল না। '৭২ সালের মার্চ মাসে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে উঠেছিলাম। কতজনের কতকিছু হয়েছে, আমার ঢাকা শহরে এক ইঞ্চি জায়গা হলো না। বাবর রোডের বাড়িতে আমার থাকাও নাকি অবৈধ। এক সময় যারা আমার বোচকা টানতে স্বর্গসুখ অনুভব করত, এখন তাদের কত হাজার হাজার কোটি, ঢাকার এখানে ওখানে কত জায়গা-জমি। তারপরও তারা সৎ, আমরা অসৎ। তারা ভালো, আমরা খারাপ।

স্বাধীনতার পরপরই সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রা.) লি. নামে সময়ের প্রয়োজনে একটি নির্মাণ সংস্থা গঠন করেছিলাম। যার সব কজন ছিল মুক্তিযোদ্ধা। মরতে মরতে প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তারা প্রায় সবাই চলে গেছে। দুয়েকজন যারা আছে তারা কেউ ঋণ নিতে চায়নি। জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে রেজিস্টার্ড যে কোনো কোম্পানির দায় সে নিজেই। আমি যে কোনো সময় কোম্পানি চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিয়ে দায় অস্বীকার করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। আর ৯ কোটি টাকা সুদ মাফের যে গল্প ফাঁদা হয়েছে সেটা মোটেই ঠিক নয়। ১৯৯৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক সোনার বাংলা প্রকৌশলিক সংস্থা (প্রা.) লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করে। ওই সময় আমরা ব্যাংকে সুদ এবং অন্যান্য চার্জ হিসেবে ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা দিই। হিসাব করলে দেখা যায় ২ কোটি ৩-৪ লাখ ব্যাংক প্রিন্সিপাল এমাউন্ট হিসেবে আমাদের দিয়েছিল। এরপর আমরা আরও যে টাকা দিয়েছি তার পরিমাণ ৭ কোটি ৭৬-৭৭ লাখ। কিছুদিন আগে ব্যাংককে বলেছিলাম, ব্যাংক আমাদের কত দিয়েছে আর আমরা ব্যাংককে কত দিয়েছি তার একটা হিসাব হোক। ব্যাংক নিজেই হিসাব করে দেখেছে সেখানে বরং আমরাই পাই।

প্রশ্নটা সেখানে নয়, প্রশ্ন হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা সে লিখল, '৯ কোটি টাকা সুদ মাফ পেলেন কাদের সিদ্দিকী।' বিলকুল অসত্য কথা। আমি কখনো অগ্রণী ব্যাংক থেকে বা অন্য কোনো ব্যাংক থেকে এক পয়সাও ঋণ করিনি, আমাকে সুদ মওকুফ করবে কী করে! একটা ঋণ যা ছিল তা ছিল সোনার বাংলার নামে, তা সোনার বাংলাই শোধ করবে- সেখানে আমার কী! টাঙ্গাইলের ডিজিএমের বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে আমরা ৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। ডিজিএমকে ফোন করেছিলাম, তিনি বলেছেন, পত্রিকা যা লেখে লিখুক, আমরা তো তা বলিনি।

এর প্রতিবাদ ডিজিএম না করলে আমি তার নামে মামলা করব। হয়তো আর বেশি সময় পাব না। তাই অনেক কিছু বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দেওয়া হবে না। সারা জীবন স্রোতের উজানে চললাম। আমি ভালো করলেও কেন যেন অনেকের গাল ভরে না। মতিয়া চৌধুরী গালি দিয়ে মন্ত্রী হয়। আমি হাড়গোড় জ্বালিয়েও গালি খাই। এক সময় যারা ভাঙা কলকিতে তামাক খেতে পেত না, ভাঙা কাপে চা, তারা কোটি কোটি টাকার নতুন গাড়িতে ঘোরে। আমি ২০ বছরের পুরনো গাড়িতে চড়লেও সহ্য হয় না। আর কত? জানি মহাজনের ঋণে বাংলার কৃষকরা যখন মরতে বসেছিল তখন তাদের উদ্ধারে যেমন শেরে বাংলা এসেছিলেন, আমাদের মতো লোকদের উদ্ধার করতে আল্লাহ আবার কোনো শেরে বাংলা পাঠাবেন কিনা জানি না। কিন্তু একজন শেরে বাংলার এখন বড় বেশি প্রয়োজন।

মুসলিম জাহান আল্লাহর গভীর অসন্তুষ্টিতে নিপতিত কিনা বুঝতে পারছি না। হজের আগে রিগ ভেঙে শতাধিক প্রাণ গেল। হজের সময় আবার শয়তানকে পাথর ছুড়তে গিয়ে মিনায় পদদলিত হয়ে কত মানুষ মারা গেল। সরকারি হিসাবে ৭০০ কয়েক জন, হাজারের ওপর আহত বললেও সংখ্যা যে ঠিক নয়, এ ব্যাপারে সবাই একমত। কী হলো দুনিয়ায়! যেখানে আবরাহা আল্লাহর ঘর ধ্বংস করতে এসে বিফল হয়েছিল। আবাবিল পাখির দ্বারা আল্লাহ তাঁর ঘর রক্ষা করেছিলেন। সেই কাবায় এমন কেন হবে- ভেবে পাই না। নাকি দুনিয়া থেকে দিন দিন আল্লাহর রহমত-বরকত উঠে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন সব বড় বড় নেতা দেশের নিরীহ মানুষদের কথা চিন্তা না করে নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছিলেন, তখন হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। দয়াময় প্রভু বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু আজ যখন তিন বছরের শিশু নির্যাতন হয় তার বিরুদ্ধে লড়তে পারি না। পাকিস্তান হানাদাররা মায়ের সামনে মেয়ে, স্বামীর সামনে স্ত্রী, ভাইয়ের সামনে বোনকে নির্যাতন করেছে, কোথাও কোথাও নির্যাতন করে হত্যা করেছে।

কিন্তু সেই এজিদ-ফেরাউনের বংশধররাও সন্তান দিয়ে মায়ের সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করেনি। কালিহাতীতে সেই ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব দেড়-দুশ গজ। এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করলেও টাকা খেয়ে ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে আশপাশের সাধারণ মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রথম গুলি চলে ঘাটাইলের হামিদপুরে। যে পুলিশরা হামিদপুরে গুলি চালায় তারা কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে এসে গর্ব করে বলে ছয়টাকে ফেলে দিয়েছি। কী নিষ্ঠুরতা! প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেন যথার্থই বলেছেন, 'গুলি করেছে পুলিশ, আসামি হবে পুলিশ।' ৯০০ সাধারণ লোককে আসামি করে এলাকায় একটা ত্রাসের রাজত্ব করার চেষ্টা হয়েছিল।

১৮ তারিখ বিকালের ঘটনা।

১৯ তারিখ আমি গিয়েছিলাম। প্রথম প্রথম প্রশাসন আমাদের সভায় অনেক বাধা দিয়েছে, লোকজন ঠেকিয়েছে। কিন্তু তবু এক বিশাল সভা হয়েছে। ওইদিন ওখানে সভা না হলে এতদিনে কালিহাতী থানা বিক্ষুব্ধ মানুষ উড়িয়ে দিত। আমি সারা জীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছি, আজও করছি। জনসভা থেকে দাবি তুলেছিলাম, সাধারণ মানুষকে হয়রানি যেন না করা হয়। কেন যেন পুলিশ এখনো কাউকে আর ধরতে যায়নি। অন্যখানে যাই হোক কালিহাতীর সাধারণ মানুষের কোনো দোষ নেই। তারা কেন আসামি হবে! মা-বোনের ইজ্জত রক্ষায়, মায়ের পবিত্রতা রক্ষায় মানুষ যদি এগিয়ে না আসে তাহলে তো আমাদের সমাজ পশুর সমাজে পরিণত হবে।

যেখানে কালিহাতী-ঘাটাইলের বীর জনতার প্রতিবাদের জন্য প্রশংসা পাওয়া উচিত, সেখানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আসামি করা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার না করলে এবং দোষী পুলিশদের শুধু প্রত্যাহার নয় তাদের বিচার করে কঠিন শাস্তি না দিলে কালিহাতীর মানুষ শান্ত হবে না। তাই সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, হেলাফেলা না করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার কথা না হয় না-ই শুনলেন। কিন্তু এভাবে যদি মায়ের ইজ্জত, শিশুর ইজ্জত রক্ষা করতে না পারেন তাহলে আপনারই বদনাম হবে, বঙ্গবন্ধুর বদনাম হবে, আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় দেশের বদনাম হবে। এই তো সেদিন নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম সফরে আসতে অনীহা প্রকাশ করেছে। জিনিসগুলো ভেবে দেখা দরকার।

বোন শেখ রেহানার মেয়ে, আমাদের প্রিয় ভাগি্ন, বাঙালির মুখ উজ্জ্বল করেছে। সরাসরি নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমাদের গর্বিত করেছে। লেবার পার্টির ছায়া সরকারে মন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ায় যারপরনাই গর্বিত হয়েছি। রেহানা যখন বলে দুটা মা একত্র করলে মামা হয়। আপনার দোয়া ওদের বড় দরকার। সত্যিই যে মেয়েকে কোলে নিয়েছি, সে এখন আমাদের মাথার তাজ। তার উজ্জ্বল মুখ আমাদের কর্মকাণ্ডে মলিন হোক এটা ভাবা যায় না। আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বিশেষ করে মা-মেয়েদের সম্মানহানি টিউলিপকে কি বিব্রত করে না? তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রিয় ভগি্ন আমার কথা ছেড়ে দিন, দেশকে সুন্দরভাবে চালান, মানুষ যাতে নিরাপদবোধ করে তার চেষ্টা করুন। দেশে আজ নারী নেতৃত্বের স্বর্ণযুগ। এখনো মেয়েদের এ দুরবস্থা কেন? সবাই বিশ্বাস করে আপনি যত্নবান হলে সবকিছু ঠিক হতে পারে। শুনেছি, রাতদিন পরিশ্রম করেন। এদিকে একটু দৃষ্টি দিন।

আপনি ভালো করেই জানেন, আমি স্তাবকতা পারি না। রাতকে রাত, দিনকে দিন বলা আমার স্বভাব। মুক্তিযুদ্ধ করা কি অপরাধ, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসা- সেটাও কি আরও কঠিন অপরাধ? তারপরও বলছি, আমি বিবেকের বাইরে চলতে পারি না। শত্রুকে অসম্মান করতে শিখিনি। মানুষের কথা বলতে, মানুষের সেবা করতে একটা রাজনৈতিক দল করেছিলাম। স্বাধীন দেশে একটা রাজনৈতিক দল করা ভেবেছিলাম কোনো অপরাধ নয়। '৯৯ সালে সখিপুরে ভোটে যে কারচুপি হয়েছিল তাতে আপনার সায় ছিল- এটা বিশ্বাস করতে এখনো আমার মন চায় না। ১ আগস্ট টাঙ্গাইল-৪, কালিহাতীর আসন শূন্য হয়েছে। প্রথম অবস্থায় কোনো ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচনে অংশ নেব।

একটা সুস্থ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক আপনার সরকারের সময়েও মানুষ তার ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারে সেটা প্রমাণ করতেই এ ভোটযুদ্ধে আমার অংশগ্রহণ। রাস্তাঘাটে যা শুনছি তা খুব ভালো নয়। সবকিছুই আপনাকে জড়িয়ে। চোর চুরি করলে সেটা আপনার নামে করতে হবে কেন? সরকারের প্রধান হিসেবে আপনি যে চোরের পক্ষ নেন না- এটা আপনাকেই প্রমাণ করতে হবে। না হলে বর্ণচোররা যত অপকর্ম করবে সব আপনার ঘাড়ে চাপাবে। আশাকরি, ব্যাপারটা দেখবেন। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন দলীয় কর্মীদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বর্ণচোরা কিছু অসৎ লোক না থাকলেও আপনার চলবে। গুন্ডা-পান্ডাদের হাত থেকে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনীতি ফিরিয়ে আনুন। মনে রাখবেন, নির্বোধ বিবেকহীন বন্ধুর চেয়ে বিবেকবান শত্রু অনেক ভালো।

মাননীয় নেত্রী, গভীর দুঃখে আপনার কাছে আরেকটি প্রতিকার আশা করছি। আমি সেই ষাট সাল থেকে প্রতিদিন টাঙ্গাইল ফৌজদারি কোর্টে বাবার কাছে যেতাম বাজারের টাকা নিতে। কোর্ট সংলগ্ন ছোট্ট একটি মসজিদে শত শত মানুষ নামাজ পড়ত। সেই মসজিদ এখন বড় করা হয়েছে। পুবদিকে এগুতে এগুতে মূল মসজিদের দ্বিগুণ হয়েছে। টাঙ্গাইল থাকলে সাধারণত বাড়ির কাছে বলে সেখানেই নামাজ আদায় করি। প্রতি জুমায় নামাজের চেয়ে যখন দেখি উন্নয়নের জন্য বেশি চিৎকার তখন মন বড় বেশি ভারি হয়ে আসে। শুক্রবার ঈদের জামাত শেষে মসজিদের পাশ দিয়ে আসতে গিয়ে দেখি দেড়-দুশ বছরের ঐতিহ্য মসজিদটির পুরনো অংশ ভেঙে ফেলেছে। হঠাৎই দৃশ্যটা দেখে বুকটা কেঁপে উঠেছিল। মানুষ আঘাত পেলে মায়ের কাছে যায়- সে রকমই আঘাত পেয়েছি। তবে কি আমাদের কোনো ঐতিহ্যই থাকবে না? কয়েকশ বছরের টাঙ্গাইলের সদর মসজিদ।

সেখানে ব্যবসার জন্য চারদিকে দালান তোলা হচ্ছে। মসজিদ এখন আর মসজিদ নেই। কবে সেটাও ভেঙে ফেলা হবে বলতে পারছি না। বিখ্যাত আটিয়া মসজিদ সম্রাট আকবরের আমলে নির্মিত। ১০ টাকার নোটে আটিয়া মসজিদের ছবি ছিল। প্রবীণদের যেমন বড় দুর্দশা, তেমনি পুরনোর অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। এগুলো কি রক্ষা করা যায় না? লালবাগের দেয়াল ভাঙলে হাইকোর্টের নির্দেশে তা পুনঃনির্মিত হয়। আমাদের কলিজা কেটে টুকরো টুকরো করা হচ্ছে কে সেটা জোড়া দেবে? চারদিকে অন্ধকার। তাই আলোর দিশা পেতে আপনার কাছে প্রতিকার কামনা করি। যদি সম্ভব হয় এসব পুরাকীর্তি রক্ষা করুন। মানুষ আপনাকে মনে রাখবে।-বিডিপ্রতিদিন
লেখক : রাজনীতিক।
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে