মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১০:০৯:১১

যে কৌশলে চালানো হয় কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

যে কৌশলে চালানো হয় কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানায় অভিযান

ঢাকা : রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি অাস্তানায়  মঙ্গলবার ভোরে সোয়াটের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেয় পুলিশ ও র‌্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য।  যে অভিযান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় ৯ জঙ্গি।  পুলিশের যৌথ অভিযানের নাম অপারেশন স্টর্ম-২৬।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ কল্যাপুরের কয়েকটি মেসে ‘ব্লক রেইড’ শুরু করে।  তখনো পুলিশের কাছে কোনো ইঙ্গিত ছিল না যে, ঘটনা এত বড় হয়ে দাঁড়াবে।

পুলিশের ভাষ্য মতে, কল্যাণপুরের বিভিন্ন ভবনে থাকা মেসে গিয়ে তল্লাশি শুরু করা হয়।  রাত পৌনে ১টার দিকে ৫ নম্বর সড়কের ৫৩ নম্বর বাসারে কাছে পৌঁছলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় জঙ্গিরা।

তাৎক্ষণিক পুলিশ নিরাপদে গিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করে।  এরপরই একটি হ্যান্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা।  তখন পুলিশ বুঝতে পারে যে, ওই ভবনের পঞ্চম তলা থেকে আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে ভবন থেকে আরো কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় তারা।  বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হলে হাইকমান্ড থেকে নির্দেশ আসে রাতে কোনো অভিযান চালানো যাবে না।

তবে ভবনটি এমনভাবে ঘিরে রাখতে হবে যে, কেউ যেন পালাতে না পারে।  সারা রাত ঘিরে রাখা হয় ভবনটি।  এর মধ্যে পুলিশ অভিযানের জন্য লোকবল বৃদ্ধি করতে থাকে।  

খবর দেয়া হয় মিরপুর জোনের সব থানাকে।  উপস্থিত হয় র‌্যাবের সদস্যরা।  ভোর রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সোয়াটের বোম ডিসপোজাল ইউনিটির সদস্যরা।  এসময় পুলিশ এলাকার বাসিসন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পরামর্শ দেয়।

ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে শুরু হয় যৌথবাহিনীর অভিযান।  বিভিন্ন ক্যাটাগরির আগ্নেয়াস্ত্রের এলোপাতাড়ি গুলির শব্দে প্রকোম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।

প্রায় এক ঘণ্টা চলা অভিযান শেষ হয় ৬টা ৫০ মিনিটে।  পরে পুলিশ ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করে।  নিহতদের মধ্যে সাতজনের লাশ পাওয়া গেছে করিডোরে, দুজনের লাশ ছিল দুটি কক্ষে।

ঘণ্টাব্যাপী অপারেশন স্ট্রম-২৬ শেষে ঘটনাস্থল থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, অভিযানের সময় জঙ্গিরা ফ্ল্যাটের দরজা খুলে গুলি করতে করতে পালানোর চেষ্টা করে।

তখন দু'পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়।  জঙ্গিদের পরনে কালো রঙের জঙ্গি পোশাক ছিল, মাথায় ছিল পাগড়ি, হাতে ছিল ব্যাগ।  গুলশানে ‘জেএমবির যে গ্রুপটি’ হামলা চালিয়েছিল, তারা সে দলেরই সদস্য বলে আইজিপি শহীদুল হকের ধারণা।

তিনি বলেন, তাদের আইএস বলা হলেও আসলে তারা আইএস নয়, তারা জেএমবির সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে আটজনের পরিচয় মিলেছে।  অভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ আটক যুবকই আটজনের পরিচয় জানিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একটি সূত্র।

নিহতরা হলেন রবিন, অভি, আতিক, সোহান, ইমরান, তাপস, ইকবাল ও সাব্বির।  তবে অপর আরেকজনের পরিচয় জানাতে পারেনি গুলিবিদ্ধ যুবক।

অভিযানের সময় জাহাজ বিল্ডিংয়ের চারতলা থেকে দুই যুবক লাফিয়ে পড়ে।  পরে পুলিশের গুলিতে আহত হয় এক যুবক।  আরেকজন পালিয়ে যায়।

পুলিশের যৌথ অভিযান চালাকালে ওই এলাকার রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে কল্যাণপুরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়।  

২৬ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে