মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১০:৫৮:৪৬

নর্থ সাউথের সেই শিক্ষকের গ্রিন সিগন্যালে গুলশান রেস্টুরেন্টে হামলা

 নর্থ সাউথের সেই শিক্ষকের গ্রিন সিগন্যালে গুলশান রেস্টুরেন্টে হামলা

ঢাকা : রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গিদের ডেকে নেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম।  সেখানে বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিক অবস্থান করছেন- এমন তথ্য জানিয়ে ‘থ্রিমা’ নামক মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে হামলার জন্য যেতে বলেন তিনি।
 
গুলশান হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
 
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হাসনাতের গ্রিন সিগন্যাল (সবুজ সংকেত) পেয়েই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে সরাসরি হলি আর্টিজানে আসে হামলাকারী জঙ্গিরা।

হলি আটির্জানে হামলার আগে কয়েকদিন ধরে গুলশান এলাকার আরো চারটি অভিজাত রেস্তোরাঁতে মহড়া দিয়েছিল হামলাকারী জঙ্গি ও তাদের সহযোগীরা।
 
কিন্তু সেসব স্থানে টার্গেট অনুযায়ী বিদেশি নাগরিক না থাকায় হামলা করেনি তারা।  তুলনামূলকভাবে বিদেশি নাগরিক বেশি অবস্থান করায় হলি আর্টিজানকে বেছে নেয়া হয়।

কীভাবে হামলা চালাবে তার একটা ‘ছক’ও তৈরি করেন হাসনাত করিম।  হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে হলি আর্টিজানে যান তিনি।

ঘটনার পর হাসনাতসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।  ১৬ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন হাসনাত করিম জিজ্ঞাসাবাদের পর্যায়ে আছে।

রোববার ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার হোতাদের চিহ্নিত করা গেছে।  হামলার নেপথ্যে কারা রয়েছে, কীভাবে হামলা হয়েছে সেসব তথ্য পাওয়া গেছে।
 
তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় সন্দেহভাজন অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।  নেপথ্যে থাকা এসব কুশীলবের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।  গ্রেফতার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তদন্ত সূত্র জানায়, গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার অনেক তথ্যই গোয়েন্দাদের হাতে আছে।  এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। হামলাকারী জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের জন্য মে মাসে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রোভিসি (সদ্য সাময়িক বরখাস্ত) এসএম গিয়াস উদ্দিন আহসানের ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছিলেন হাসনাত রেজা।
 
হামলার আগে ওই বাসাতেই সহযোগীদের সঙ্গে জঙ্গিরা অবস্থান করে।  সেখানে জঙ্গিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছিলেন হাসনাত।  হামলা সফলভাবে সম্পন্ন করতে জঙ্গিদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ার কাজটিও করেন তিনি।

সূত্র জানায়, হামলার আগে জঙ্গিরা বেশ কয়েকদিন হলি আর্টিজানে খাওয়া-দাওয়া করে।  তখন তারা দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থান করে।  রেস্টুরেন্টটি তারা ঘুরে ঘুরে দেখে ও সম্যক ধারণা নেন।
 
হামলার দিন ১ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে জঙ্গিদের প্রস্তুত থাকতে বলে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হলি আর্টিজানে আসেন হাসনাত রেজা। সেখানে যাওয়ার পর তিনি কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক বিদেশিকে দেখতে পান।
 
এরপরই ‘থ্রিমা’ নামক মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি আছে বলে নিশ্চিত করেন জঙ্গিদের এবং প্রস্তুতি নিয়ে তাদের আসতে বলেন।  হাসনাতের গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে তারা অস্ত্রসজ্জিত হয়ে হেঁটে হলি আর্টিজানে আসে।
 
হাসনাতকে যাতে কেউ সন্দেহের মধ্যে না আনতে পারে সেজন্য তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন।  ওই সময় তিনি সন্তানের জন্মদিন পালনের কথা বলে সবাইকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।  রেস্টুরেন্টের ভেতরেও তিনি হামলাকারীদের দিকনির্দেশনা দেন।
 
১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর জঙ্গিরা অতিথি ও কর্মচারীদের রাতভর জিম্মি করে রাখে।  সেখানে হাসনাত বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন।  জঙ্গিদের সঙ্গে তিনি ছাদে হাঁটাচলাও করেন।  এক সময় তিনি অস্ত্রও হাতে নেন।  এসব ভিডিও গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে।
 
২ জুলাই ভোরে অভিযানের আগেই ২ সন্তান ও স্ত্রীসহ হাসনাত রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসেন।  তার সঙ্গে একই ফ্লোরে থাকা আরো কয়েকজন জিম্মি বের হন।
২৬ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে