মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:১৯:০৯

সেই প্রশ্নটি ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই

সেই প্রশ্নটি ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই

মাহমুদ আজহার : দেশে ফিরে কী চমক দেখাবেন খালেদা জিয়া- এ প্রশ্নটি ঘিরে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলেও রয়েছে উৎসুক দৃষ্টি। দলের নেতৃত্বে বিএনপি প্রধান কী ধরনের পরিবর্তন আনবেন, তা নিয়ে অপেক্ষার প্রহরে নেতা-কর্মীরা। উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি অনেকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বিরাজ করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, চেয়ারপারসনের লন্ডন সফরের পর রাজনৈতিক ভাগ্যবরণ হতে পারে কারও কারও। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ছিটকে পড়তে পারেন অনেক সিনিয়র নেতাও। সর্বশেষ আন্দোলনে মাঠে থাকা অপেক্ষাকৃত অনেক তরুণ নেতারও ভাগ্য খুলে যেতে পারে। লন্ডন সফরের আগে খালেদা জিয়ার নানা বক্তৃতায় এ আভাস মিলেছে। চলতি বছরের শেষদিকে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আসবে বলেও দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে।

লন্ডন বিএনপি সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরবেন বিএনপি প্রধান। অর্ধ-মাসব্যাপী তার লন্ডন সফরে ব্যক্তিগত চিকিৎসা ছাড়াও দল ও চলমান রাজনীতি নিয়ে একান্তে কথাবার্তা বলছেন ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে। পারিবারিক গণ্ডি ছাড়িয়ে ভবিষ্যতে দলের হাল ধরা নিয়েও তারা কথাবার্তা বলছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন মামলায় মা-ছেলের সাজা হলে দলের নেতৃত্বের রূপরেখা তৈরি করছেন তারা। দলকে যেন ভাঙনের মুখে পড়তে না হয়- সেই ধরনের কৌশলও গ্রহণ করছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা। এসব বিষয় আপাতত মা-ছেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন। খালেদা জিয়া দেশে ফিরে এসে যখন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করবেন, তখনই এর বাস্তবায়ন শুরু হবে। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাও লন্ডনে অবস্থান করছেন। মা-ছেলের মধ্যে একান্ত কথাবার্তা আপাতত কারও সঙ্গেই আলোচনা করছেন না বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ প্রতিবেদককে বলেন, 'দীর্ঘদিন পর বড় ছেলে ও তার পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে খালেদা জিয়া ঈদ উদযাপন করছেন, এটাই রাজনীতিতে বড় চমক। একজন মহিলা (খালেদা জিয়া) পরিবারহীন একা ঢাকায় থাকেন। এই নিঃসঙ্গতা খুবই কষ্টদায়ক। তার এক ছেলে মারা গেছেন। পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে দেশের বাইরে এই প্রথম ঈদ করছেন। তবে বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে রাজনৈতিক অনেক কিছুরই সিদ্ধান্তই হতে পারে।' তিনি বলেন, 'দলের পুনর্গঠন নিয়েও কথা হতে পারে। দলের স্থায়ী কমিটিতেও তরুণ নেতৃত্ব আসতে পারে।

বিশেষ করে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মাঠে কর্মক্ষম হবেন, এমন নেতাই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন। তাছাড়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবও করা হতে পারে। তিনি একজন সৎ ও দক্ষ লোক। তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি রয়েছে। তাকে এতদিন ভারপ্রাপ্ত করে রাখাটাই ছিল অস্বাভাবিক। অন্তত এটাই আমি মনে করি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মা ছেলের বাইরেও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়াকে দল ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে হবে। বিএনপিতে এখনো অনেক দক্ষ রাজনীতিবিদ রয়েছেন। তাই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিতে এ ধরনের সংস্কৃতি থাকা জরুরি। বিশেষ করে দল ও রাজনীতিতে আগামীতে কি ধরনের গুণগত পরিবর্তন আনা জরুরি- তা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপিকে এগুতে হবে।

ভবিষ্যতে কোনোভাবেই ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এতে বিএনপি আরও বিপর্যয়ের দিকে চলে যাবে। তাই খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের পর দেশে ফিরেই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠক করা জরুরি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল পুনর্গঠন ছাড়াও আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলন গণমুখী ও শান্তিপূর্ণ করার ব্যাপারেও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে নেতাদের সঙ্গে নিয়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ বলেন, 'অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএনপি একটি নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। দলকে গতিশীল করা, এ নিয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করার সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আলাপ আলোচনা করতেই পারেন। তবে দেশে যেসব সিনিয়র দক্ষ রাজনীতিবিদ রয়েছেন, তাদের সঙ্গেও আলোচনা করা উচিত। এখানে তাড়াহুড়া করার কিছু নেই।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, তৃণমূলে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার পরপরই ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনবেন খালেদা জিয়া। রাজধানীতে বিএনপির নেতৃত্বকে দুই ভাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে তার।

এরপর এ বছরের শেষদিকে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করারও সিদ্ধান্ত রয়েছে বেগম জিয়ার। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কারা আসছেন, তা নিয়েও লন্ডনে আলোচনা করছেন বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা। এছাড়াও দলের ভিতরে-বাইরে অনেক পরিবর্তন আসবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার সিদ্ধান্তও আসতে পারে লন্ডন বৈঠকে। খালেদা জিয়ার ওপর গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে কিংবা কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে মহাসচিব ঘোষণা করা হতে পারে।

লন্ডন সূত্রে জানা যায়, তারেক রহমানের বাসায় নেতা-কর্মীদের যাওয়া আসায় নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে কাউকে ডাকা হয়। ঢাকা থেকে যাওয়া নেতারাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। একদিন তারেক রহমানের বাসায় তারা গিয়েছেন। এ ছাড়া পরিবারকে নিয়েই সময় কাটছে বেগম জিয়ার। স্থানীয় এক হাসপাতালে তিনি চোখের চিকিৎসাও করাচ্ছেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ২ অথবা ৫ অক্টোবর চেয়ারপারসন দেশে ফিরতে পারেন। এর আগে তিনি লন্ডনে যুক্তরাজ্য সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেন বলে জানা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, 'দেশে ফিরে খালেদা জিয়া চমক দেখাবেন- এটা সময়ই বলে দেবে। তবে তিনি দেশে ফিরে দল পুনর্গঠনে হাত দেবেন। নবীন প্রবীণের সমন্বয়ে দলের নেতৃত্ব তৈরি করবেন। এটা একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এটাকে চমক বলা ঠিক হবে না। পুরনো নামগুলোই নতুন করে আসবে। কিছু ইয়াং লিডারশিপও আসবে।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দলের কাউন্সিল হয় না। সে বিষয়েও একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে। দলের স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তারুণ্যের জোয়ার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটাও একটা চমক হতে পারে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোও একটি চমক হবে।-বিডিপ্রতিদিন
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে