মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৬:১৫

ঈদ আনন্দে কাঁটা হলো বিদ্যুৎ

ঈদ আনন্দে কাঁটা হলো বিদ্যুৎ

ঢাকা : কোরবানির ঈদের আগের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশে অফিস-আদালত ও শিল্প-কারখানা বন্ধ ছিল। তাই বিদ্যুতের আবাসিক চাহিদা কিছুটা বাড়লেও সার্বিক চাহিদা ছিল অনেক কম। কিন্তু এর পরও ঈদের ছুটিতে দেশবাসীকে পড়তে হয়েছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায়। বেশি কষ্টে পড়তে হয়েছে গ্রামে আত্মীয়-পরিজনের সান্নিধ্যে যাওয়া শহরবাসীকে।

স্বাভাবিক কর্মদিবসে ঢাকায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে দুই হাজার ৬৮৮ মেগাওয়াট। ঈদের ছুটির সময় তা নেমে আসে দুই হাজারের ঘরে। ওই সময় চট্টগ্রামেও বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কমে। তবে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেটসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে চাহিদা বাড়ে। সে হিসাবে উৎপাদনের আগাম প্রস্তুতিও ছিল এবং ঈদের ছুটির সময়টায় চাহিদামতোই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে বলে দাবি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তাদের।

তাঁরা জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল ও জেলা-উপজেলা শহর পর্যায়ে ঈদের ছুটিতে বিদ্যুতের যে সংকট হয়েছে তা উৎপাদনের ঘাটতিজনিত নয়, বরং বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার জন্য।

পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) খালেদ মাহমুদ বলেন, 'ঈদের ছুটিতে সারা দেশে আমাদের লোডশেডিং ছিল জিরো। সমস্যা কোথাও হয়ে থাকলে তা হয়েছে ডিস্ট্রিবিউশন লাইনের ধারণক্ষমতা কম হওয়ার কারণে।' ঘাটতি তো নয়ই বরং কয়েক শ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ তাদের হাতে থাকলেও তা নেয়ার ক্ষমতা ছিল না বিতরণ কম্পানিগুলোর।

ঈদ আনন্দে কাঁটা হলো বিদ্যুৎ

খাতাপত্রে বিদ্যুৎ, চট্টগ্রামে লোডশেডিং

চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক রাশেদুল তুষার জানান, পিডিবি, চট্টগ্রামের নথিপত্রে ঈদের আগের দিন থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চলে কোনো লোডশেডিং নেই। অর্থাৎ এই বিদ্যুৎ অফিসের আওতাধীন বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলায় বিদ্যুতের যতটুকু চাহিদা ঠিক ততটুকুই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা ঠিক তার উল্টো। বরং গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই লোডশেডিংময় একটি ঈদ কাটাল চট্টগ্রামবাসী। নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ঈদের দিনও কমবেশি লোডশেডিং হয়েছে। আর গ্রামাঞ্চলের অবস্থা আরো ভয়াবহ।

পিডিবির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ঈদের আগের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৬১৩ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৬১৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। একইভাবে ঈদের দিন ৬২১ এবং ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে ৬৩৩ ও ৬৫৭ মেগাওয়াট চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে।

কিন্তু বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, রামপুরের আওতাধীন হালিশহর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম বলেন, 'ঈদের আগের দিন দিনে-রাতে অন্তত ছয়বার বিদ্যুৎ গেছে-এসেছে। এর মধ্যে একবার সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল। এমনকি ঈদের দিনও চারবার লোডশেডিং হয়েছে। অথচ ঈদে সাধারণত আমরা লোডশেডিং হতে দেখি না।'

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ প্রায় সব উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের বন্ধে দিনের বেলা বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়েছে।

তবে এই ঈদে চট্টগ্রামে কোনো লোডশেডিং ছিল না বলে জানিয়েছেন পিডিবি, চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম। গতকাল তিনি প্রতিবেদককে বলেন, 'ঈদের আগের দিন থেকে আজ (সোমবার) পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোনো লোডশেডিং নেই। এর পরও কোথাও যদি লোডশেডিং হয় সেটা মূলত কারিগরি ত্রুটি। হয়তো কোথাও তার ছিঁড়ে কিংবা ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার কারণে সাময়িক বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়েছে। তবে গ্রাম এলাকায় লোডশেডিংয়ের কারণ পল্লীবিদ্যুৎ ভালো বলতে পারবে।'

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের এই পরিস্থিতির জন্য শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্নিকাণ্ডকে দায়ী করেন চট্টগ্রাম পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১-এর সহকারী মহাব্যবস্থাপক রিশু কুমার ঘোষ। তিনি বলেন, 'গত মাসে অগ্নিকাণ্ডে শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন দোহাজারী কেন্দ্রের অর্ধেক বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। এ কারণে বাধ্য হয়ে গ্রাহক পর্যায়েও লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বেশি।'

সরবরাহ লাইনে অন্ধকার খুলনা

খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক গৌরাঙ্গ নন্দী জানান, খুলনা শহরের বকশিপাড়া এলাকায় ঈদের পরদিন সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। ঘণ্টাখানেক পর এক এলাকায় বিদ্যুৎ এলো; কিন্তু ঠিক তখনই পাশের এলাকা থেকে বিদ্যুৎ উধাও। ঘণ্টাখানেক পর বিদ্যুতের দেখা মিলল। গত রবিবার রাত ১১টার দিকে একই এলাকায় ঘণ্টাখানেকের জন্য বিদ্যুৎ উধাও। এলাকাবাসীর বক্তব্য, পক্ষকাল ধরে বিদ্যুৎ এভাবেই যাওয়া-আসা করছে। এক দিন দিনের বেলায় ঘণ্টা তিনেক বিদ্যুৎ ছিল না। তবে ঘোষণা দিয়ে এক দিন সারা দিন বিদ্যুৎ ছিল না। বলা হয়েছিল, সরবরাহ লাইনে কাজ হবে; এ কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ থাকছে। আর শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামা করছে। হঠাৎ করেই বৈদ্যুতিক পাখার গতি বেড়ে যায়, আবার কমে যায়। বিদ্যুতের যাওয়া-আসা এবং ভোল্টেজ ওঠানামা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্য, লোডশেডিং নেই; সরবরাহ লাইনে ত্রুটির জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন হচ্ছে, ভোল্টেজ ওঠানামা করছে।

জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাইকগাছা উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। কখনো কখনো রাতের বেলায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে না। ঈদের দিনও দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, 'প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘণ্টা দুই বিদ্যুৎ না থাকা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আবার রাত ২টার দিকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ থেকে বলা হচ্ছে, লোডশেডিং নেই।'

সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাতেই বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়ার খেলা শুরু হয়েছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি- ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার এই প্রতিবেদককে বলেন, '২৭ সেপ্টেম্বর পিক আওয়ারে ২১ জেলায় চাহিদা ছিল ৩৭০ মেগাওয়াট; সরবরাহও করা হয়েছে ৩৭০ মেগাওয়াট। কোনো ঘাটতি ছিল না। লোডশেডিং ছিল না।'

বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ আছে, তবে বিদ্যুৎ থাকছে না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে ওজোপাডিকোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী শুভ্র প্রকাশ সরকার প্রতিবেদককে বলেন, 'বভিন্ন সময় লাইনের ত্রুটি বা মেরামতের কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এটাকে লোডশেডিং বলা যাবে না।' তিনি দাবি করেন, 'ঈদের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখতে ঈদের আগের তিন-চার দিন মেশিনারিজ মেইনটেন্যান্স করার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছিল।'

খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, রূপসা, কয়রা উপজেলায় কখনো কখনো দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ থাকছে না। এ প্রসঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাইকগাছা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডেপুটি ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. বদরুল আনাম বলেন, 'খুলনা থেকে কয়রা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটারের বেশি সরবরাহ লাইনটি বেশ দুর্বল এবং অনেক দিনের। এই সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে এখানে লোডশেডিং হচ্ছে।'

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল বরিশাল

বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক রফিকুল ইসলাম জানান, জেলার গৌরনদী উপজেলার বার্থি এলাকার বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার কারণে সেখানে ঈদের পর দুই দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। এরপর নতুন একটি ট্রান্সফরমার লাগানো হলেও তেমন কোনো কাজে আসেনি। কারণ সংযোগ দেওয়া হলেও দিনে সব মিলিয়ে দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। অভিযোগ দিলেও তাতে কোনো কাজ হয় না। কারণ বিদ্যুৎ বিভাগ ওই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না।

বার্থি এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক লিনা আক্তার বলেন, এখানে ২৪ ঘণ্টায় দুই-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে; আবার কোনো দিন থাকেও না। অন্যদিকে মাসে অন্তত দুই দিন ট্রান্সফরমার বিকল হয়। তা সারাতে আবার তিন-চার দিন সময় নিতে হয়।

একই অবস্থা সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে। পুরো ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুৎ থাকার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। তাদের ভাষ্য মতে, একটি ট্রান্সফরমার দিয়ে পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কারণে প্রায়ই তা বিকল হয়। আর সারতে যেমন অনেক সময় লাগে, তেমনি আবার সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলে যায়।

এ রকম অবস্থা গোটা বরিশাল জেলার। সিটি করপোরেশন এলাকায় লোডশেডিং সহনীয় হলেও বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। হেভিওয়েট ট্রান্সফরমার না থাকার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও কবে নাগাদ তা সমাধান হবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছে না।

বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর উপব্যবস্থাপক ফজলুর রহমান জানান, তাঁদের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ২৫ মেগাওয়াট; পাচ্ছেন ২৩ মেগাওয়াট। কিন্তু তাঁরা সরবরাহ করতে পারছেন মাত্র ১৫ মেগাওয়াট। কারণ তাঁদের ৩৩ কেভি ট্রান্সফরমার নেই। এর সঙ্গে আছে লোকবল সংকট।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশনের (ওজোপাডিকো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসান আলী বলেন, বরিশাল জেলায় তাঁদের প্রতিদিন মোট বিদ্যুতের চাহিদা ১১৭ মেগাওয়াট। এর মধ্যে শহর এলাকায় (পিডিবি) চাহিদা ৬৮ এবং জেলার দশ উপজেলায় (পল্লী বিদ্যুৎ) চাহিদা ৪৯ মেগাওয়াট। তবে তাঁরা প্রতিদিন ১১২ মেগাওয়াট চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। তবে পল্লী বিদ্যুৎ ১৫ মেগাওয়াট নিচ্ছে না। কারণ তাদের ৩৩ কেভি ট্রান্সফরমার নেই। এ কারণে পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্নভাবে হচ্ছে না।

রাজশাহীর গ্রামাঞ্চলে দিন-রাত লোডশেডিং

রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক রফিকুল ইসলাম জানান, দুর্গাপুরে গতকাল সোমবার রাত ৩টার দিকে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হয়। এরপর সেই বিদ্যুতের দেখা মেলে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে। আগের দিন রবিবার সকাল ১১টার দিকেও একবার লোডশেডিং হয়; বিদ্যুৎ আসে দুপুর ১২টার দিকে। আবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ গিয়ে আসে ৫টার দিকে। পল্লী বিদ্যুতের এমন দুরবস্থা বিভাগের আটটি জেলার ৬৬টি উপজেলা, ৫৯টি পৌর এলাকাতেই। রাত-দিন কখন বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে এর ইয়ত্তা নেই। আবার একটু জোরে বৃষ্টি হলেও চলে যায় বিদ্যুৎ।

দুর্গাপুরের সিংগা গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, তীব্র গরমে মানুষ যখন অতিষ্ঠ, তখনই বিদ্যুতের দেখা পাওয়া যায় না। আর একবার গেলে অন্তত এক ঘণ্টার আগে আসে না।

চারঘাটের সাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন লোডশেডিং হয় না। ঈদের আগের দিন রাতে উপজেলার প্রতিটি এলাকায় দুই-তিনবার করে লোডশেডিং হয়েছে। আবার কখনো বিদ্যুৎ থাকলেও লো ভোল্টেজের কারণে তা কাজে আসছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, বিদ্যুৎ দিন-রাত মিলে দুই-তিনবার যাবেই। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন বিদ্যুৎ যায় না। নাচোল উপজেলায়ও প্রায় একই অবস্থা।

লোডশেডিং আছে নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার উপজেলাগুলোতেও। এসব জায়গায় রাত-দিন মিলে দুই-তিনবার বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রগুলো।

চাহিদা মিটলেও সিলেটে বিদ্যুৎবিভ্রাট

সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক আবদুর রাহমান জানান, সিলেট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা ৩৭০ মেগাওয়াট। সিলেটে প্রতিদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এক হাজার ২২০ মেগাওয়াট। চাহিদার শতভাগ সরবরাহ থাকার পরও বিদ্যুত সংকট কাটছে না। কাগজে-কলমে লোডশেডিং না থাকলেও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি, জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইন এবং পুরনো ট্রান্সফরমার ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎহীনতার দুর্ভোগে পড়তে হয় গ্রাহকদের।

সিলেট পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস জানান, সিলেট জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১১৪ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে কোথাও লোডশেডিং হয়নি। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও এক মিনিট বা ১০ মিনিট বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি সামস শামীম জানান, জাতীয় গ্রিড থেকে জেলায় ৩১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১২ মেগাওয়াট পিডিবি আর ১৯ মেগাওয়াট দেয় পল্লী বিদ্যুৎ। চাহিদার সবটুকু পাওয়া গেলেও সিস্টেমের নানা সমস্যার কারণে জেলাবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

৫০ বছর আগে সুনামগঞ্জ ছাতক বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মিত হয়। ছাতকের ১৩৩ কেভি লাইন বর্তমানে প্রায় অচল। সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন বজ পাতে লাইন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ লাইনের ১৮টি ট্রান্সফরমারও প্রায় অচল। লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে খুঁজে বের করাও সম্ভব হয় না। তাই ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এক দশক ধরে এই সমস্যা চলছে।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক ও পাওয়ার গ্রিড কম্পানির পরিচালক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন, 'সুনামগঞ্জের বিদ্যুৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আমি সুনামগঞ্জ সাব-স্টেশনের অনুমোদন নিয়ে এসেছি। এটা চালু হলে জেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। ছাতক-সুনামগঞ্জ ১৩৩ কেভি লাইন ৫০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। এই লাইন এখন প্রায় অচল। যার ফলে জেলার গ্রাহকরা প্রায়ই বিদ্যুৎ-ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।'

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি শাহ ফখরুজ্জামান জানান, হবিগঞ্জ শহর ও পল্লী এলাকায় বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লো ভোল্টেজে নাকাল জনগণ। এতে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুল ইসলাম জানান, হবিগঞ্জ শহরের সরবরাহ লাইন পুরনো হওয়ায় এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে সমস্যা সমাধানের জন্য ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে নতুন সরবরাহ লাইন টানানোর কাজ চলছে। নতুন করে বসানো হচ্ছে ৫২টি ট্রান্সফরমার।

এদিকে হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় জেলায় মোট চাহিদা ৫৫ মেগাওয়াট। পুরোটাই পাওয়া গেলেও গ্রামাঞ্চলে মাঝেমধ্যে লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে ভোগান্তিতে পড়ে গ্রাহকরা। সামান্য ত্রুটির জন্য দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভারপ্রাপ্ত জিএম দিলীপ চন্দ সরকার জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। অনেক সময় গাছের ডালপালা পড়ে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে কিছুটা সমস্যা হয়। লাইনে ত্রুটির জন্য সমস্যা দেখা দিলে অফিস থেকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়।-কালেরকণ্ঠ
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে