শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১১:২৫:২৮

কল্যাণপুরের সেই আস্তানায় ছিল আরও ৮ জঙ্গি! কি ঘটল তাদের ভাগ্যে?

কল্যাণপুরের সেই আস্তানায় ছিল আরও ৮ জঙ্গি! কি ঘটল তাদের ভাগ্যে?

নিউজ ডেস্ক : পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে ৯ জন। একজনকে আহতাবস্থায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একজন  পালিয়েছে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে। এর বাইরেও কল্যাণপুরের সেই জঙ্গি আস্তানায় আরও ৮ জঙ্গি ছিল। গ্রেফতার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।

মিরপুর থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলাতেও উল্লেখ রয়েছে বিষয়টি। কর্মকর্তারা বলছেন, এই নয় জন ওই আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াত করতো। এদের মধ্যে আইএস অনুসারী জেএমবির একাংশের  মাস্টারমাইন্ডদের একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরীও যাতায়াত করতেন।

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আবিষ্কারের পর কল্যাণপুরের এই আস্তানায় ভোরে অভিযান চালানো হয়। এতে ৯ জঙ্গি নিহত হয়। ঘটনার একদিন পর বুধবার রাতে মিরপুর থানার পরিদর্শক শাহজালাল আলম বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে দেওয়া তথ্য মতে, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় তামিম চৌধুরী ছাড়াও রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজ নামে ব্যক্তিরা নিয়মিত যাতায়াত করতো। এরা তাদের ধর্মীয় ও জিহাদি কথাবার্তা বলে উদ্বুদ্ধ করত এবং প্রয়োজনী টাকা-পয়সা দিয়ে যেতো।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ও সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা তাদের এ কাজে অর্থ, অস্ত্র, গোলা-বারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি দিয়ে এবং প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা ও প্ররোচনা দিতো।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে জেএমবির যে ভগ্নাংশটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের অনুসারী হয়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে, তাদের শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় যেতো বলে তারা তথ্য পেয়েছেন। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী দেশে এসে আত্মগোপন করে জঙ্গি কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে বলেও তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সে-ই মূলত দেশীয় জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে ধারণা করা হয়।

জানা গেছে, তামিম চৌধুরীর বাংলাদেশী পাসপোর্ট নম্বর এল ০৬৩৩৪৭৮, এএফ ২৮৩৭০৭৬ এবং কানাডিয়ান পাসপোর্ট নম্বর ডব্লিউপি ৪৯৮৭২২ ও জেএইচ ১৩০১৩৩। গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথম যে নিখোঁজ ১০ জঙ্গির তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে তামিম আহম্মেদ চৌধুরীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তার বাবার নাম শফি উদ্দিন চৌধুরী। সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার দুবাগ ইউনিয়নের বরগ্রামে তার পৈত্রিক বাড়ি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলি বলছে, তামিম ছাড়াও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় নিয়মিত যাতায়াতকারীদের উল্লেখযোগ্য একজন জুনায়েদ খান। গুলশানের জঙ্গি হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকাশিত ১০নিখোঁজ জঙ্গির তালিকায় এই জুনায়েদ খানের নামও ছিলো। তার বাবার নাম মুনির হাসান খান। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর লেনের ৬ নম্বর সড়কের অর্কিড গ্যালারি এফ-৩ ফ্ল্যাটে থাকতো সে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি তালিকায় জুনায়েদের ভাই ইব্রাহীম হাসান খাঁনের নামও রয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে সৌদি আরবে বসবাস করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলি বলছে, বাকি ছয় জন রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজ সম্পর্কে কিছু কিছু তথ্য রয়েছে। এসব তাদের সাংগঠনিক নাম। তাদের মূল পরিচয় শনাক্তে কাজ করা হচ্ছে। এদের কেউ কেউ জঙ্গিদের অর্থ ও অস্ত্রের মূল যোগানদাতা বলে ধারণা করছে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ ও অর্থদাতাদের মধ্যে কিছু লোকজনকে তারা শনাক্ত করেছেন। গ্রেফতার হাসানের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে আগে থেকেই সংগৃহীত গোয়েন্দা তথ্যের কিছু মিল রয়েছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। -বাংলা ট্রিবিউন
২৯ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে