শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১১:০৯:৪৫

কেন হাস্যোজ্জ্বল ছবি তোলে জঙ্গীরা?

কেন হাস্যোজ্জ্বল ছবি তোলে জঙ্গীরা?

ঢাকা : রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুরে মঙ্গলবার পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহতদের একটি হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে অস্ত্র হাতে তোলা একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে।

গুলশানে রেস্তোরাঁয় হামলাকারীরাও এমন ছবি তুলেছিল- যা ওই আক্রমণের পরপরই প্রকাশ পায়। অনেকেরই মনে হতে পারে যে, জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদের এ ধরনের ছবি তোলার কারণ কি?

একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলছেন, মানুষের মধ্যে ভয় ঢোকাতে আর নিজেদের আইএস প্রমাণ করতেই এসব ছবি তোলা হয়েছিল।  পুলিশের একজন সাবেক আইজিপি বলছেন, মনস্তাত্ত্বিক সন্তুষ্টি প্রকাশ আর প্রচারের জন্যই জঙ্গিরা এসব ছবি তুলেছে।

এর আগে গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ হামলার মধ্যেই হামলাকারী জঙ্গিদের অস্ত্র হাতে হাস্যোজ্জল ছবি প্রকাশ করেছিল কথিত আইএসের বার্তা সংস্থা হিসেবে পরিচিত 'আমাক'।  হামলকারীরাও নিহতদের ছবি তুলে সেগুলো পাঠিয়েছিল, যেগুলো আমাক প্রকাশ করেছে সে রাতেই।

ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে ৯জন নিহত হওয়ার একদিন পর থেকেই এসব জঙ্গিদের গুলশানের জঙ্গিদের মতোই একই কায়দায় অস্ত্র হাতে তোলা ছবি প্রকাশিত হয়েছে ঢাকার গণমাধ্যমে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, গুলশান হামলার মতো কোন হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই জঙ্গিরা এসব ছবি তুলে রেখেছিল।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত মোহাম্মদ আলী শিকদার বলছেন, তাদের পোশাক, অঙ্গভঙ্গি, পতাকা বা ড্রেস দিয়ে মানুষের মধ্যে ত্রাস সৃস্টি করতে চায় যে- আমরা আইএসের লোক। সুতরাং তোমরা হুঁশিয়ার হয়ে যাও, আমরা যা ইচ্ছা করতে পারি- যেমনটি আইএস করছে।

মূলত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই ঢাকার কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয় কল্যাণপুরে নিহত ৯ জনের মধ্যে পাঁচজনের একটি ছবি।  এর বাইরে ফেসবুকেও প্রচার হতে থাকে অন্তত পাঁচটি ছবি। হাস্যোজ্বল ভঙ্গিতে তোলা এসব ছবিতে কারো হাতে ছুরি, কারো হাতে দা, কারও হাতে পিস্তল।

মোহাম্মদ আলী শিকদার বলছেন, মূল পরিকল্পনারীরা এসব ছবির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছে তারা এসব তরুণদের কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম।

তিনি বলেন, তাদের একেকজনকে দেড় থেকে দুবছর পর্যন্ত মগজ ধোলাই করেছে।  বাবা-মা ভাই-বোন সবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।  এ অবস্থায় তারা পৌঁছে গেছে।  তারা পরিণত মানুষ নয়। জীবনের পূর্ণ উপলদ্ধি তাদের হয়নি। তাদের এ পর্যায়ে নিয়ে আসছে, ছবির মাধ্যমে তার বহিপ্রকাশ দেখছি।

পুলিশের সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলছেন, হামলার পর এ ধরনের ছবি প্রকাশ করার প্রবণতা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা যায় এবং এক্ষেত্রে তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে প্রচার পাওয়া এবং নিজেদের সক্ষমতা বোঝানোর চেস্টা করা।

তিনি বলেন, “তাদের কথিত সংগঠন, আদর্শ লক্ষ্য -সেটা যে ভালো এবং কাজটা করতে যে তার উজ্জীবিত, মনস্তাত্ত্বিক ভাবে ভালো আছে। আর একটা হলো প্রচার পাওয়া। অন্যরা উৎসাহিত হবে। আমি যে মহৎ কাজ করছি সেটা জানার দেয়ার জন্য এটা আমিত্বও আছে এর মধ্যে।

ছবিগুলো কারা কিভাবে সংগ্রহ করেছে সেটি কেউ না বললেও ঢাকার কয়েকটি পত্রিকা ছবি প্রকাশ করে বলেছে তারা পুলিশ সুত্র থেকে এসব ছবি পেয়েছে।

জানা যাচ্ছে, জঙ্গিরা এসব ছবি তুলে একটি পেনড্রাইভে রেখেছিল, যা পরে পুলিশি অভিযানের পর পুলিশের হাতে আসে।  পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। -বিবিসি
২৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে