শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৩৯:৪০

জোট হারালে ৩ বিকল্প ভাবনা জামায়াতের

জোট হারালে ৩ বিকল্প ভাবনা জামায়াতের

মোশতাক আহমদ: বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটে অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর থাকা-না থাকা নিয়ে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত দলটিকে জোট থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির ওপর নানামুখী চাপ দীর্ঘদিন ধরেই।

তবে বর্তমানে বিএনপির জঙ্গিবাদবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ার উদ্যোগে বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে। তবে জোটের অন্যতম শরিক দলটিকে সাময়িকভাবে বাদ দিয়ে বিএনপি বৃহত্তর ঐক্যের পথে এগোলেও জামায়াতের আপত্তি নেই। সে ক্ষেত্রে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় দলটি বিকল্প তিন ভাবনা নিয়ে এগোচ্ছে। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন সব তথ্য জানা গেছে।

দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি জঙ্গিবাদবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছে। এতে মোটামুটি বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলেও দলটির নেতাদের দাবি। তবে এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা জামায়াতকে নিয়ে তাদের জোট।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাও জামায়াতসংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপির এই প্রস্তাবকে কেবলই লোকদেখানো বলে সমালোচনা করছেন। এই পর্যায়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাও জামায়াতকে সঙ্গে না রাখার পক্ষে। এমনকি দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমানের অভিমতও নাকি এমনটাই।

এ অবস্থায় জোট থেকে ছিটকে পড়লে জামায়াত কোন পথে এগোবে তা নিয়ে সংগঠনের ভেতরে-বাইরে চলছে নানা জল্পনা। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ক্ষেত্রে তিনটি বিকল্প পরিকল্পনার কথা জানা গেছে।

প্রথমত, জঙ্গিবাদবিরোধী বিএনপির আন্দোলনে সাময়িকভাবে জোটের বাইরে চলে গেলেও সামগ্রিকভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো মূল্যে জোট ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়ত, ২০ দলীয় জোটে আর ফেরা সম্ভব না হলে সমমনা ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করা।

তৃতীয়ত, আগামী জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখা। এর আগে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় আমির মনোনয়ন ও একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায় এড়াতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

এদিকে জামায়াত এখনো বিশ্বাস করে না যে বিএনপি তাদের জোট থেকে বের করে দেবে। দলটির কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড, প্রকাশ্যে রাজনীতি নিষিদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের অভিযোগে বিপর্যস্ত জামায়াত।

এ অবস্থায় বিএনপি তাদের ছিটকে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নেবে এমনটা এখনো তারা বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ জামায়াত ছাড়ার কথা বললেও তা তাঁদের ব্যক্তিগত মত বলেই মনে করছে জামায়াত।

জানতে চাইলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আব্দুস সামাদ বলেন, ‘জামায়াত কারো পায়ে ধরে রাজনীতি করে না। তাই জামায়াতকে ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে লাভবান হবে বলে বিএনপি মনে করলে আমরা সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত।’

তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা ইকবাল হোসেন ভুইয়া জানান, বিএনপির অন্য কোনো নেতার বক্তব্য খালেদা জিয়ার বক্তব্য নয়। বিএনপি চেয়ারপারসন এ নিয়ে এখনো সুস্পষ্ট কিছু বলেননি।

যত দিন তিনি নিজ মুখে এ বিষয়ে কোনো কথা না বলবেন তত দিন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো ভাবনা করছি না। তবে বাস্তবে যদি তাই হয়, সে ক্ষেত্রে অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই নতুনভাবে দল এগিয়ে নেওয়ার কৌশল নির্ধারণ করা হবে।

ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জঙ্গিবাদ রুখতে জামায়াতকে ছাড়া একলা চলার যে কথা বিএনপি নেতারা বলছেন তা মূলত রাজনৈতিক কৌশল। আর জামায়াতকে ছাড়া বিএনপি সমমনা অন্যান্য দলকে নিয়ে জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কার্যক্রমে শক্তি পেলে তাতে জামায়াতের কোনো আপত্তি থাকবে না।

কারণ বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের যোগাযোগ অটুট রয়েছে, থাকবে। জঙ্গিবাদ নিয়ে বিএনপি সাময়িকভাবে জামায়াতকে সঙ্গে নাও রাখতে পারে। সেটা বিএনপির একান্ত নিজস্ব বিষয়।

সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে নেই : সূত্রগুলো বলছে, আগের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সাংগঠনিক কাজ করতে না পারলেও বসে নেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়েও কৌশল পাল্টে চালানো হচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। কখনো কখনো দলীয় সিদ্ধান্ত তৃণমূলে ছড়িয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত আলাপের মাধ্যমে। আড্ডার ফাঁকেও সেরে নেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক আলাপ। বিশ্বস্ত নেতা বা কর্মী-সমর্থকের বাড়িতেও চলে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা।

ওদিকে আত্মগোপনে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা নানা কৌশলে বিভিন্ন স্থান সফর করছেন। এরই মধ্যে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শুরায় সারা দেশ থেকে বাছাই করা তরুণ নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

একই সঙ্গে সারা দেশে দলের গুরুত্বপূর্ণ শাখা কমিটিগুলোতেও তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজপথের আন্দোলনের পরিবর্তে দাওয়াতি কাজে বেশি জোর দিচ্ছে দলটি।

সম্ভাব্য নতুন নেতৃত্ব : কেন্দ্রীয় একটি সূত্র জানায়, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিরোধিতা করে জনগণের কাছে এখনো অভিযুক্ত হয়ে আছে জামায়াত। সময় এসেছে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে দলের হাল তুলে দেওয়ার। তবে এখন যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁদের অনেকেই স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রজন্মের।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় তাঁদের নেই। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল দিয়ে চলে আসা জামায়াতের শীর্ষ পদ দুটিতে বিতর্কমুক্ত তরুণ মুখ আসছে। একইভাবে দলের নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শুরা পুনর্গঠন করা হচ্ছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রুকন সম্মেলনের মাধ্যমে আমির নির্বাচনের সুযোগ না থাকায় ভিন্নপন্থায় রুকনদের ভোট বা মতামত নিয়ে আমিরসহ অন্যান্য পদে নেতা নির্বাচনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্বে থাকা মকবুল আহমাদ আমির এবং ডা. শফিকুর রহমানের সেক্রেটারি জেনারেল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এর ব্যত্যয় ঘটলে নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বা ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আমির হতে পারেন। ঢাকা মহানগর কমিটির আমির রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক তাসনীম আলম ও হামিদুর রহমান আযাদের মধ্য থেকে একজন সেক্রেটারি জেনারেল হতে পারেন।

এর বাইরে নায়েবে আমির, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদ, কর্মপরিষদ ও মজলিশে শুরা কমিটি পুনর্গঠন হবে। এতে গত তিন দশক যাঁরা ছাত্রশিবিরে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা জায়গা পেতে পারেন।-কালের কন্ঠ

৩০জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে