রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৬, ০৩:০৬:৩১

জামায়াত ইস্যুতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি

জামায়াত ইস্যুতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি

হাবিবুর রহমান খান: জঙ্গি ও সন্ত্রাস ইস্যুতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে আলোচনায় সেই জামায়াতই। ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে জামায়াতকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আস্থায় আনতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। 

সম্প্রতি দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যোগাযোগ করেন। স্বাধীনতাবিরোধী দলটি নিয়ে বিএনপির অবস্থান আরও স্পষ্ট করার দাবি তাদের। কেউ কেউ ঐক্যের আগেই জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার ঘোষণার কথাও বলেছেন।

এ ব্যাপারে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পর চার দিন চলে গেলেও কার্যত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে বিলম্ব হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসনের ‘চা চক্রের’ আমন্ত্রণও।

তবে দলটির একটি সূত্র জানায়, বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা এ ইস্যুতে দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। তাদের আস্থায় আনতে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এ সপ্তাহেই খালেদা জিয়া চা চক্র করতে পারেন বলে আশাবাদী দলটির নীতিনির্ধারকরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে জামায়াতকে দূরে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। হাইকমান্ডের এমন বার্তা নিয়ে দুই জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করা হয়।

জামায়াতসহ কিছু ইস্যুর নিষ্পত্তি না করে দলগুলোকে সরাসরি টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানাতে চাচ্ছেন না খালেদা জিয়া। কারণ এতে সাড়া না পেলে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা রয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ সিনিয়র কয়েক নেতা পৃথকভাবে দলগুলোর সঙ্গে রুদ্ধধার বৈঠক করছেন। এছাড়া বিএনপিপন্থী দুই বুদ্ধিজীবী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ ও গণস্বাস্থের ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও তাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

জানা গেছে, জোটের বাইরে থাকা দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর সর্বশেষ অগ্রগতি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবহিত করা হয়েছে। তার দেয়া পরামর্শের ভিত্তিতে আবারও চূড়ান্তভাবে দলগুলোর সঙ্গে কথা বলবেন মির্জা ফখরুল। দলগুলো থেকে গ্রিন সিগনাল পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফোন করবেন খালেদা জিয়া।

জানতে চাইলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা আমাদের দলের মতামত তাদের জানিয়েছি। তিনি বলেন, দেশের অবস্থা খুব খারাপ। এখন জাতিকে এক হয়ে চলা দরকার। সেক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা যতটুকু হউক রাখতে চাই। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রধান দায়িত্ব সরকারের।

এরপর প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির। বিএনপি জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা শুভ পদক্ষেপ। আমরা বিএনপি বা আওয়ামী লীগের ঐক্যে নেই। বিএনপি যদি জাতীয় ঐক্য গড়তে পারে তবে আমাদের পাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দলের অবস্থান হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে আমরা কখনও রাজনীতি করব না। এটা বিএনপিও জানে।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বেশকিছু প্রস্তাব দেন। তারা বলেন, চা চক্র মানেই ঐক্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত রূপ নেয়া নয়। এরপর আরও অনেক ধাপ রয়েছে। জামায়াত ইস্যুতে কারও কোনো পরামর্শ থাকলে তা চা চক্রে চেয়ারপারসনের কাছে জানাতে অনুরোধ জানানো হয়।

জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। চেয়ারপারসন যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, সেই বার্তা নিয়ে ইতিমধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে তারা আলোচনা করেছেন। তারা সবাই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জামায়াত প্রসঙ্গে আমাদের অবস্থান দলগুলোর কাছে স্পষ্ট করেছি। আমরা বলেছি, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে জামায়াতকে দূরে রাখা হবে। জামায়াত নিয়ে আরও কোনো পরামর্শ থাকলে তা চা চক্রে চেয়ারপারসনকে অবহিত করতেও আহ্বান জানিয়েছি। বিএনপির এমন সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আবদুল্লাহ আল নোমান।

বৈঠকে উভয় নেতাই জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির বক্তব্যে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেননি। এ ইস্যুতে দলটির অবস্থান আরও স্পষ্ট হওয়া উচিত বলে মত দেন তারা।

এছাড়া গত সপ্তাহে সিপিবির সঙ্গে বৈঠকেও জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানায় সিপিবি। ফখরুল ছাড়া এমাজউদ্দীন আহমদ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ জানান, ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। তবে অনেকে জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান আরও স্পষ্ট করার মত দিয়েছেন। সার্বিক বিষয়গুলো দলের চেয়ারপারসনকে অবহিত করা হয়েছে। এ সপ্তাহেই তিনি চা চক্রের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

আরেক বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির প্রতিনিধিদের পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন দলের সঙ্গে ঐক্যের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছে। জামায়াত নিয়ে বিএনপির অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি। একমাত্র সিপিবি ছাড়া সবাই ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।

তিনি বলেন, অনেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, বললেই তো হল না, এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

জাফরুল্লাহ বলেন, ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরী দেশের বাইরে আছেন। তারপরও আশা করি, বৃহত্তর ঐক্যের প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে এ সপ্তাহেই তাদের নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন চা চক্রে বসবেন।-যুগান্তর

৩১ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে