মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট, ২০১৬, ০৯:৪২:১১

সিটিসেলের হাল ধরতে আসছে মার্কিন শীর্ষ কোম্পানি

সিটিসেলের হাল ধরতে আসছে মার্কিন শীর্ষ কোম্পানি

কাজী সোহাগ : দেশের প্রথম বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের হাল ধরতে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এক কোম্পানি। এরইমধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে। চলতি মাস থেকেই ওই কোম্পানি সিটিসেলে বিনিয়োগ শুরু করবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)’র পাওনা সব টাকা পরিশোধ করে নতুনভাবে গ্রাহক সেবা দেবে পুরাতন এই অপারেটরটি।

সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহবুব চৌধুরী সোমবার একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, সিটিসেল বন্ধ হচ্ছে না। তাছাড়া, বিটিআরসি সিটিসেল বন্ধ করে দেয়ার কোনো নোটিশ দেয়নি। তারা কেবল পাওনা টাকা চেয়ে নোটিশ দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতির শিকার। আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে যখন সবকিছু প্রায় চূড়ান্ত তখন জুলহাস হত্যা হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের দেশে আসা পিছিয়ে যায়। এরপর আবার যখন একই উদ্যোগ নেয়া হয় তখন গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, যখনই আমরা সবকিছু গুছিয়ে আনছি তখনই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে। এ জন্য বলছি আমরা আসলে পরিস্থিতির শিকার। বিটিআরসি’র বক্তব্য ও নোটিশের পর আমাদের অনেক গ্রাহক চলে যাবেন। এতে ব্যবসার আরো ক্ষতি হবে বলে মনে করছি।

মেহবুব চৌধুরী আরো বলেন, এরইমধ্যে বিটিআরসির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। তাদের সবকিছু বলেছি। আশা করি চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে নতুনভাবে গ্রাহকদের সঙ্গে থাকতে পারবো।

বিটিআরসি’র হিসাবে সিটিসেলের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৭ লাখ ২ হাজার। রাজস্ব বকেয়া এবং পরিশোধে গড়িমসি করার অভিযোগ এনে রোববার বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে নোটিশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে সিটিসেল গ্রাহকদের আগামী ১৬ই আগস্টের মধ্যে বিকল্প সেবা বা ব্যবস্থা নিতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হবে বলে জানানো হয়। সিটিসেলের কাছে বিটিআরসি’র বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে টুজি লাইসেন্সের তরঙ্গ বরাদ্দ ও নবায়ন ফি বাবদ পাওনার পরিমাণ ২২৯ কোটি টাকা। এছাড়া রাজস্ব ভাগাভাগির ২৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বার্ষিক তরঙ্গ ফি ২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা, সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা, বার্ষিক লাইসেন্স ফি বাবদ ১০ কোটি টাকা, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাবদ ৩৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা ও বিলম্ব ফি বাবদ ১৩৫ কোটি ৭ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। সিটিসেল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত আছেন ৬৫০ জন কর্মী।

গতকাল সরজমিন মহাখালীর সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ের কাস্টমার কেয়ার সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় তিনজন গ্রাহককে। আর সার্ভিস সেন্টারে কর্মরত দেখা যায় প্রায় ১০ জনকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিসেলের এক কর্মকর্তা বলেন, পত্রিকায় সিটিসেল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এ ধরনের সংবাদ দেখে অনেক গ্রাহক ফোন করেছেন। তাদের হাজারো প্রশ্ন।

হঠাৎ কেন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, নাম্বারগুলোর কি হবে, এটা অন্যায় ইত্যাদি। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিটিআরসি’র এ ধরনের ভূমিকায় গ্রাহকদের মধ্যে নানা আশংকা দেখা দিয়েছে। এমনিতেই আমাদের ব্যবসা খারাপ। তার ওপর এ ধরনের ঘটনা সিটিসেলের অবস্থানকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। ১৯৮৯ সালে দেশের প্রথম মুঠোফোন অপারেটর হিসেবে টেলিযোগাযোগ সেবা দেয়ার লাইসেন্স পায় সিটিসেল। যাত্রার সময় এটি ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মুঠোফোন অপারেটর। প্রথম থেকে সিটিসেল বাংলাদেশের একমাত্র সিডিএমএ (কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেস) মোবাইল অপারেটর হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। শুরুর দিকে সংযোগসহ সিটিসেলের একটি ফোনের দাম রাখা হতো লাখ টাকার বেশি।

সিডিএমএ প্রযুক্তির অপারেটর হিসেবে সিটিসেল ৯০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ ব্যবহার করে। সারা দেশে এই ব্যান্ডের ১০ মেগাহার্টজ ও ঢাকায় ৮ দশমিক ৮২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ সিটিসেলের কাছে এখন আছে। কাগজে-কলমে সিটিসেলের টাওয়ারের সংখ্যা ৮৫০-এর বেশি বলা হলেও বর্তমানে চালু থাকা টাওয়ারের সংখ্যা ২০০-এর কম বলে জানা গেছে।

সিটিসেলে বর্তমানে ৫৫ ভাগ শেয়ারের মালিক দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী প্যাসিফিক মোটরস ও ফার-ইস্ট টেলিকম। এর মধ্যে প্যাসিফিক মোটরসের শেয়ারের পরিমাণ ৩৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ আর ফার-ইস্ট টেলিকমের ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাকি ৪৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সিংটেল। প্যাসিফিক মোটরস ও ফার-ইস্ট টেলিকমের কর্ণধার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির নেতা মোর্শেদ খান। -এমজমিন
০২ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে