বুধবার, ০৩ আগস্ট, ২০১৬, ০৮:৪১:১৬

দুই বাংলার পোস্টারে দেয়ালে ‘সুন্দরবন বাঁচাও’

দুই বাংলার পোস্টারে দেয়ালে ‘সুন্দরবন বাঁচাও’

নিউজ ডেস্ক : সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে ধ্বংস হবে সুন্দরবন। আমাদের সুন্দরবন একটিই, দু’টি নয়—এ যুক্তি নিয়ে এপার বাংলা-ওপার বাংলার আন্দোলনকারীদের পোস্টার ব্যানার ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-টুইটারে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এবার তারা সুন্দরবন বাঁচাতে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলছেন। দেশে ও দেশের বাইরে তারা প্রচার চালাতে অনলাইনকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য একটাই—দূষণ থেকে ও উজার হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে।

গত ১২ জুলাই বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্রজেক্ট বাস্তবায়নে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি সই হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যাপারে সরকার দৃঢ়তা দেখালেও এর পক্ষে যৌক্তিকতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারছে না বলে দাবি করেছে তেলগ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর-খনিজসম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটি। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন যে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, সে বিষয়ে একদল বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী ও সামাজিক আন্দোলনকারী যেমন নিশ্চিত তেমনি সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ক্ষতি না হওয়ার কথাও বারবার বলা হচ্ছে।

সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই না পেজে মঙ্গলবার সাড়ে তিনটায় লেখা হয়েছে, একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন বোধহয় একেই বলে। সুন্দরবন নিয়ে গত সাত দিনে এত অল্প সময়ের মধ্যে যে পরিমাণ আলোচনা শুরু হয়েছে, যুক্তি-তর্ক-বিশ্লেষণ চলছে তা গত সাত বছরেও হয়নি। আর এর প্রায় পুরোটাই করছেন তরুণেরা। তারা রাজপথে লড়ছেন, গান লিখছেন-গাইছেন, বিশ্লেষণ করছেন, আবৃত্তি করছেন, ছবি আঁকছেন, স্যাটায়ার লিখছেন, তৈরি করছেন অ্যানিমেশন। এমনকী কলকাতার পরিবেশবাদীদের সঙ্গেও  যোগাযোগ করেছেন এবং সেখানেও আন্দোলন চলছে বলে জানান তারা।

অ্যাক্টিভিস্ট মাহা মির্জা তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রামপালের আন্দোলন গুটিকয়েক পরিবেশবাদীর রোমান্টিক আন্দোলন নয়। এটা একটা পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক আন্দোলন। এটা একটা বিজ্ঞানমনস্ক আন্দোলনও। এটুকু বিশ্বাস করি, এমন একটা আন্দোলনের স্পিরিট এবং এনার্জি যত ছড়াবে, এই দেশে তরুণদের জঙ্গি হওয়ার সম্ভাবনা ততই মলিন হবে।’

কলকাতার গর্গ চট্টোপাধ্যায় ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, বাংলাদেশে রামপালের প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতিবাদে গর্জে উঠুক দুই বাংলা।

কেন সাংস্কৃতিক আন্দোলন সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, রামপালের আন্দোলন কী একটা পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক আন্দোলন নয়? এই আন্দোলনে গান আছে, নাটক আছে, ফটোগ্রাফি আছে, ফিল্ম আছে, এনিমেশন আছে, কার্টুন আছে, স্যাটায়ার আছে, পড়াশুনা আছে, একটা বিকল্প উন্নয়নের দর্শন আছে, যুক্তির চর্চা আছে, বিজ্ঞানকে জানার-বোঝার চেষ্টা আছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে বিস্তর পড়াশুনা আছে। এখানে মিছিল আছে, আবার মিছিলের পথে পথে গান, নাটক, কবিতা আছে। এখানে গ্রাম বাংলার পালস আছে, বাঘ-পাখি-হরিণ আছে, সুন্দরী, কেওড়া, গজারি আছে, সুন্দরবনের গভীর ইকোলজিকে বোঝার চেষ্টা আছে, পশুর নদীকে সালফারের বিষ থেকে বাঁচানোর আকুতি আছে, চার লাখ প্রান্তিক মানুষের জীবন জীবিকার চিন্তা আছে। তরুণদের অংশগ্রহণ আছে। ক্ষমতাকে এবং গণবিরোধী প্রযুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার মতো তথ্য আছে, সাহসও আছে।

প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে যেমন ১৪ কিমি দূরত্বের কথা বলে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চলছে, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফায়েত্তি কাউন্টিতে ১৯৭৯-৮০ সালে ১২৩০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সময়ও স্থানীয় মানুষকে এভাবে আশ্বস্ত করা হয়েছিলো। পরবর্তীকালে ১৯৮০ থেকে ২০১০ সালের হিসেবে ফায়েত্তি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নি:সৃত বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বিশেষত সালফার ডাই অক্সাইডের বিষ ক্রিয়ায় পেকান, এলম, ওকসহ বিভিন্ন জাতের গাছ আক্রান্ত হয়েছে, বহু পেকান বাগান ধ্বংস হয়েছে, অন্তত ১৫ হাজার বিশালাকৃতির পেকান বৃক্ষ মরে গেছে। -বাংলা ট্রিবিউন
০৩ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে