বৃহস্পতিবার, ০৪ আগস্ট, ২০১৬, ০৭:০৪:০২

হাসনাতের মোবাইলে থাকা যে অ্যাপটি গুলশানে ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা

হাসনাতের মোবাইলে থাকা যে অ্যাপটি গুলশানে ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা

ঢাকা : রাজধানীর গুলশান হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের মোবাইলে ডাউনলোড করা হয় একটি বিশেষ অ্যাপ।  অ্যাপটির নাম ‘উইকার অ্যাপ’।

বৃহস্পতিবার হাসনাত করিম ও তাহমিদের রিমান্ড আবেদনে জানানো হয়।  আবেদনে বলা হয়, হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা হয় রাত ৮ টা ৪৪ মিনিটে এবং হাসনাত করিমের মোবাইলে অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয় ৮টা ৫৭ মিনিটে।

উইকার অ্যাপটি ব্যবহার করে সাধারণত জঙ্গিরা যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে।  এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জঙ্গিরা কী ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করেছিল, কী কারণে অল্প সময়ের জন্য হাসনাত করিম অ্যাপটি ডাউনলোড করেছিলেন তা জানার জন্য তাকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।

উইকার একটি যোগাযোগ অ্যাপ।  ব্যবহারকারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এটিতে।  যে ডিভাইসে এটি ব্যবহার করা হয় সেই ডিভাইস থেকে সব ধরনের মেসেজ, ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট সহজেই মুছে ফেলা যায়।
ফলে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড টেক্সট, ভিডিও, ছবি এবং ভয়েস- প্রেরক তার মতো করে পাঠাতে পারেন।

গত ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে ইন্টারনেট ও টেলিকম নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।  

কেন্দ্রীয়ভাবে রিয়েল টাইমে টেলিকম নেটওয়ার্ক বন্ধ করার প্রযুক্তি না থাকায় এ সমস্যা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন ইন্টারনেট ও টেলিকম সেবাদাতা একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিম এবং কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা ও টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খানকে ৮ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালাত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার সিএমএম আদালতে তাদের হাজির করে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে প্রত্যেকের ১০দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির।  শুনানি শেষে প্রত্যেকের ৮ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নূরুন্নাহার ইয়াসমিন।

এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশান আড়ংয়ের সামনের রাস্তা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে হাসনাতকে এবং বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লকের একটি বাসা থেকে রাত ৯টার দিকে তাহমিদকে গ্রেফতার করে বলে দাবি পুলিশের।  তবে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানের পরিবারের দাবি- গুলশানে হামলার পর থেকেই তাদের গোয়েন্দা হেফাজতে রাখা হয়।

প্রসঙ্গত, ১ জুলাইয়ের রাতে জঙ্গিরা হামলায়  প্রাণ হারান পুলিশের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা।  পরদিন সকালে সেনা কমান্ডো অভিযানে ছয় জঙ্গি নিহত হয়।  কিন্তু রাতেই ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করে তারা।

এ ঘটনায় রাজধানীর গুলশান থানায় একটি মামলা করা হয়।  মামলা তদন্তের দায়িত্বভার দেয়া হয় পুলিশের সিটি ইউনিটের কাছে।  তবে মামলার এজাহারে হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

হাসানাত করিম লল্ডনে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশলে পড়াশোনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ করেন। দেশে ফিরে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে।

২০১২ সালে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে যে চার শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয় তাদের একজন হাসনাত করিম।  নর্থসাউথ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর একটি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের চাকরি নিয়ে ফের লন্ডন চলে যান তিনি।

বেশ কিছুদিন হাসানাত কাতারেও ছিলেন।  দেশে ফিরেছেন দেড় বছর আগে।  হাসানাত করিম তার মেয়ে সাফা করিমের জন্মদিন পালন করতে স্ত্রী শারমিন পারভীন ও ছেলে রায়ান করিমকে নিয়ে সেদিন হলি আর্টিজানে যান।

কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা ও টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান দেশে অবস্থানকালে পড়াশোনা করেছেন রাজধানীর নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল স্কলাশটিকায়।

আফতাব বহুমুখী ফার্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ারের ছেলে তাহমিদ। গুলশানে হামলার আগের দিন দেশে ফেরেন তিনি।  

১ জুলাই সন্ধ্যার পর দুই বান্ধবীর সঙ্গে হলি আর্টিজানে ডিনার করতে যান। পরদিন সকালে কমান্ডো অভিযানের পর অন্য জিম্মিদের সঙ্গে তাকেও উদ্ধার করা হয়।  এরপর তাকে গোয়েন্দা হেফাজতে নেয়া হয়।
৪ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে