নিউজ ডেস্ক : বেহেশতের যাওয়ার শর্টকাট পথ দেখিয়ে তরুণদের জঙ্গি বানান সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া পলাতক মেজর জিয়াউল হক। তার মত আরেকজন হলেন নিউ জেএমবির নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরী।
ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান পালন না করেও সহজে কীভাবে বেহেশতে যাওয়া যায় তরুণদের সেই স্বপ্ন দেখান তারা। ধর্মের মোহনীয় দিকগুলোর খণ্ডিত অংশ তুলে ধরে এ কাজ হাসিল করেন তারা।
সাম্প্রতিককালের জঙ্গি হামলাগুলোর মাস্টার মাইন্ড হিসেবেও মেজর জিয়া ও তামিম আহমেদের নাম উল্লেখ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
জঙ্গিবাদ দমনে কাজ করছেন এমন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কম জানে এমন নিম্নবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের তরুণদের ধর্মের মোহনীয় দিকগুলো তারা তুলে ধরেন, যাতে তারা সহজেই বিভ্রান্ত হয়।
বিভ্রান্ত হয়ে তারা এ দুনিয়ায় বেশিদিন বেঁচে থাকার চেয়ে দুদিন আগে মরলে সহজেই বেহেশত পাওয়া যাবে এমন মনমানসিকতা নিয়ে হামলা চালায়।
জঙ্গি কার্যক্রম থেকে ফিরে এসেছেন এমন এক ডজনেরও বেশি তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
ফিরে আসা তরুণরা গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, ধর্ম সম্পর্কে যাদের জ্ঞান কম এবং পারিবারিক ও সামাজিকসহ নানা কারণে হতাশ এমন তরুণদেরই সবচেয়ে বেশি টার্গেট করে তারা।
জঙ্গিবাদের মূলহোতারা তরুণদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী মিশনে নামে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে যারা বাধ্যগত না হয়ে বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়া দেখায় তাদের ছেড়ে অন্য কাউকে টার্গেট করেন তারা।
ভুল পথ থেকে ফিরে আসা এসব তরুণ গোয়েন্দাদের জানায়, তাদের বলা হতো ধর্মের সব বিধান না মানলেও চলবে। ধর্মের সব বিধি-বিধান না মেনেও সহজে বেহেশতে যাওয়া যাবে। সেই কৌশল অবলম্বন করে জঙ্গিবাদে জড়ানো হয় তরুণদের।
কোরআন-হাদিসের খণ্ডিত অংশের অপব্যখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয় তাদের। ধর্ম সম্পর্কে ভালো জানেন ও যাদের বক্তব্য শুনতে ভালো লাগে এমন কিছু ধর্ম ব্যবসায়ীর বক্তব্য তাদের শোনানো হয়। ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় জিহাদ বা বিপ্লব ছাড়া বেহেশতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তরুণদের এভাবে মগজ ধোলাই করা হয়। ধর্মের অন্যান্য বিধি-বিধানের চেয়ে জিহাদের মাধ্যমেই সহজে বেহেশতে যাওয়া যায় এ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হতো।
প্রথমদিকে নামাজ, রোজা ও ইসলাম ধর্মের ভালো কাজের কথা বলে আকৃষ্ট করা হলেও পরে তারা জিহাদকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, মগজ ধোলাইয়ের এ পর্যায়ে তাদের মননে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে, রক্তের তৃষ্ণা ছাড়া তাদের মানসিকতায় আর কিছুই থাকে না।
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা ও শোলাকিয়ায় হামলা, মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষককে হত্যা চেষ্টায় জড়িত তরুণ এবং গত ২৬ জুলাই মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত ১৬ জঙ্গির দু’-একজন ছাড়া সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান।
তাদের বেশির ভাগই ইংরেজি মাধ্যম ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও মালেয়েশিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও ছিল।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিবাদে যারা রিক্রুট করে তারা তরুণদের বিভিন্ন দুর্বল দিকগুলো আগে চিহ্নিত করে। ধর্ম-কর্ম সম্পর্কে কম জানে এমন তরুণদের টার্গেট করে তারা।
তিনি জানান, ধর্মের বিভিন্ন ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাইয়ের কারণে তরুণের মধ্যে আর নিজস্ব বোধ-বুদ্ধি কাজ করে না। তখনই তাদের হিজরত ও জিহাদের নামে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা হয়।
মেজর জিয়া ও তামিম চৌধুরী ড্রিম মার্চেন্টদের অন্যতম বলে জানান তিনি।
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ও মেজর জিয়া দেশেই আছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।
তিনি বলেছেন, তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি- এ দুজন বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের হোতা ও মাস্টারমাইন্ড। তাদের সম্পর্কে আরো তথ্য বের করা হচ্ছে।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ দুজনকে ধরিয়ে দিতে গত সপ্তাহে ২০ লাখ করে মোট ৪০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ।
৬ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম