সোমবার, ০৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৪৩:০৪

কমিটি নিয়ে বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কমিটি নিয়ে বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

কাফি কামাল: বিরাট প্রত্যাশা। দীর্ঘ অপেক্ষা। মেগা কমিটি। নানা আলোচনা। বিএনপিতে কেউ আনন্দিত। কেউ ক্ষুব্ধ। চাপা ক্ষোভ হতাশা। কমিটি ঘোষণার পর তিনটি বিষয় সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে- ১. সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া বড় কোনো নেতাই বাদ পড়েননি। কোনো না কোনো ভাবে কমিটিতে প্রায় সব পরিচিত মুখকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তরুণকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২. সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিষয়টি। নেতাদের একটি বড় অংশের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি। ৩. এই কমিটি গঠনে কার কি ভূমিকা ছিল তা নিয়েও আলোচনা চলছে। সিনিয়র নেতারা কমিটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। একটি সূত্রের দাবি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না।

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক অবস্থানকারী দুই ব্যক্তি কমিটি গঠনে কলকাঠি নেড়েছেন বলে দলের ভেতরেই আলোচনা রয়েছে। নতুন কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা। কর্মীদের হতাশা পছন্দের নেতারা কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায়। আর নেতাদের ক্ষোভের প্রধান কারণ জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন। আবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় ভূমিকার মূল্যায়ন করা হয়নি।

 কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় নেতারাই পেছনে ফেলেছেন সক্রিয়দের। স্থায়ী কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতাদের পাশাপাশি হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থায়ী কমিটির প্রবীণ নেতারাও। কারণ দলীয় রাজনীতিতে আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, মেজর (অব.) হাফিজদের অনেক জুনিয়ররাই ইতিমধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন নীতিনির্ধারণী ফোরামে।

এ নিয়ে তারা আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। আর নতুন তালিকা দেখে তারা হতাশ হয়েছেন। দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা বলেন, কয়েক দিন তারা অপেক্ষা করবেন। নিজ নিজ বলয়ে আলোচনা করবেন। তারপর হয় পদত্যাগ নয় ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবেন। রাজনীতির শেষ জীবনে এসে তারা এ বঞ্চনা মেনে নিতে পারছেন না।

তারা বলছেন, যারা জায়গা পেয়েছেন তারা নিঃসন্দেহে যোগ্য। তবে আরো কয়েকজনকে সে সম্মান দেয়া যেতো। আবদুল্লাহ আল নোমানের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, নোমান যখন শ্রমিক দলের সভাপতি ছিলেন তখন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নজরুল ইসলাম খান। নজরুল ইসলাম খান ৭ বছর ধরে স্থায়ী কমিটির সদস্য। অথচ নোমান এখনও ভাইস চেয়ারম্যান। ঢাকা মহানগরের রাজনীতিতে সাদেক হোসেন খোকার গুরুত্ব ও প্রভাব অনস্বীকার্য। কিন্তু এবার তার পদোন্নতি হয়নি।

অন্যদিকে দলীয় সূত্র জানায়, মূলত সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই স্থায়ী কমিটির দুই শূন্য পদ পূরণ করতে পারেননি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কমিটিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হয়েছে প্রতিটি পর্যায়ে। স্থায়ী কমিটিতে পদক্রমাবনতি হয়েছে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ড. আবদুল মঈন খানের। একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদক্রমাবনতি হয়েছে মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমানসহ কয়েকজনের।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা থেকে ভাইস চেয়ারম্যানে পদোন্নতি পাওয়া নেতাদের মধ্যে ঘটেছে সিরিয়াল বিপর্যয়। স্থায়ী কমিটিতে সম্ভাব্যদের মধ্যে আলোচনার অগ্রভাগে ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আবদুল আউয়াল মিন্টুর নাম। তারা চারজন ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন।

মাহবুব ও মিন্টু নতুন ভাইস চেয়ারম্যান হলেও নোমান ও খোকা এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সাত বছর। কাঙ্ক্ষিত মূল্যায়ন পাননি দীর্ঘ সময় কারাভোগকারী সাংবাদিক শওকত মাহমুদও। ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে মাহবুব ২৩, মিন্টু ৩০ ও শওকত ৩৭ নম্বরে রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন ড. ওসমান ফারুক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদুর মতো অনেকেই।

দলের নির্বাচন পরিচালনা ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আলোচনায় ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় বুলুর পেছনে পড়েছেন। ছাত্রদলের প্রথমদিকের একজন সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপন। বিগত কমিটিতে আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিশেষ সম্পাদক পদে পদায়ন পেলেও সে পদের ক্রম নামিয়ে দেয়া হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদকের পরে।

সেই সঙ্গে একই পদে অন্য যে নেতার পদায়ন হয়েছে তার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডই নেই। শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ছাত্রদলের যে কমিটিতে সভাপতি ছিলেন সে কমিটির সম্পাদক ছিলেন হাবিব-উন নবী খান সোহেল। সোহেল যুগ্ম মহাসচিব হলেও এ্যানীর পদায়ন হয়েছে তিন ধাপ পরের প্রচারে।

 এবার নির্বাহী কমিটিতে ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক অনেক নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সদস্যদের ক্রমবিন্যাসে মানা হয়নি জ্যেষ্ঠতা। কমিটি ঘোষণার পরপরই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তাদের কেউ কেউ। কমিটিতে নতুন মুখের ছড়াছড়ি থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।

কিন্তু এবারের কমিটিতে গুরুত্ব হারিয়েছেন গত কমিটির প্রভাবশালী অনেক নেতা। তুলনামূলক নিষ্ক্রিয় পদ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বানানো হয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গত কমিটির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, গোলাম আকবর খোন্দকার, ফজলুল হক মিলন, মশিউর রহমান, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, জয়নুল আবদিন ফারুক ও আবদুস সালামকে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, তাদের প্রত্যেকেই নতুন পদায়নে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তাদের কারও কারও নিষ্ক্রিয় ভূমিকা থাকলেও তাদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে পারেনি শীর্ষ নেতৃত্ব। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেত্রী শিরিন সুলতানাকে স্বনির্ভর সম্পাদক করা হয়েছে।

রাজশাহীতে প্রবীণ নেতা কবির হোসেনকে উপদেষ্টা ও ব্যারিস্টার আমিনুল হককে ভাইস চেয়ারম্যান করা হলেও রাজশাহী অঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা। বিশেষ সম্পাদক পদ থেকে নাদিম মোস্তফাকে সদস্য করা হয়েছে তাও তার এককালের কর্মী ওবায়দুর রহমান চন্দনের পরে।

বিএনপির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, রাজশাহীর রাজনীতিতে মিনু-নাদিম একটা ফ্যাক্টর। স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন নীতিনির্ধারক ফোরামের এক সদস্যের ভাগনে। যিনি বিএনপির রাজনীতিতেই নতুন মুখ। সহ আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদকের তিনজন পরিচিত নয় দলীয় মহলেই।

 দেশের রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই চলছে পরিবারতন্ত্রের সমালোচনা। বিএনপি নেতাদের পরিবারের একাধিক সদস্য এবার কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।-এমজমিন

৮ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে