সোমবার, ০৮ আগস্ট, ২০১৬, ০১:৫৮:১৩

‘আন্দোলনের জন্য মা সংসার খরচের টাকা বাবাকে দিতেন’

‘আন্দোলনের জন্য মা সংসার খরচের টাকা বাবাকে দিতেন’

নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার মা সংসারের খরচের টাকা জমিয়ে রাখতেন। পরে সেসব টাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিতেন। জাতির জনক রাজনৈতিক কার্যক্রম, আন্দোলন-সংগ্রাম আর মানুষের কল্যাণে সেসব অর্থ কাজে লাগিয়েছেন।

সোমবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

পরিবারের সদস্যদের স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আগস্ট মাস, এ মাসেই আমার ছোট ভাই শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেছিল। আবার এই মাসেই আমার পরিবারের সদস্যদের ঘাতকরা গুলি করে হত্যা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মা অভাব-অনটন বুঝতে দিতেন না। যেদিন ঘরে অন্য খাবার থাকতো না, সেদিন সামান্য চাল-ডালের খিচুড়ি রেধে আচাড় দিয়ে খেতে দিতেন আমাদের। মা বলতেন, আসো আজকে আমরা গরিব খিচুড়ি খাবো, খুব মজা।

তিনি বলেন, ঘরে খাবার না থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অকাতরে সাহার্য করতেন বাবা। দলের কাজকর্ম, আন্দোলন-সংগ্রামে তার প্রয়োজনে নিজের সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতেন মা। মা-বাবা কখনো আমাদেরকে অভাব বুঝতে দেননি। কৌশলে সেসব অভাব মেটাতেন আর আমাদেরকে ভিন্নভাবে বোঝাতেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নিজের জন্য কখনো কিছু চাননি মা। অথচ সারাজীবন এই দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। এ দেশকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। আব্বার সঙ্গে থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন, এদেশের মানুষ ভালো থাকবে, সুখে-শান্তিতে বাস করবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাবার পাশে থেকে সে স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করেছেন। মায়ের আত্মত্যাগ বাবাকে এগিয়ে নিয়েছে বলেই স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছেন তিনি।

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা কখনও বাবাকে পেছনে টেনে ধরেননি। সব সময় তিনি বাবাকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি সব সময় দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেছেন। ১৫ আগস্ট ঘাতকরা যখন বাবাকে মেরে ফেললো, মা বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি ঘাতকদের বলেন, স্বামীকে যখন মেরে ফেলেছো আমাকেও মেরে ফেলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার সব সময় আত্মবিশ্বাস  ও সাহস ছিল যে এ দেশ স্বাধীন হবেই। কখনও মাকে ভেঙে পড়তে দেখিনি। আমার বাবা এমএলএ ও মন্ত্রী ছিলেন। বিভিন্ন সময় তাকে করাচিতে যেতে হতো। কিন্তু আমার মা একদিনের জন্যও করাচিতে যাননি। বাবার সঙ্গে যেতেও চাননি। তিনি বলতেন, ওদের সঙ্গে থাকবো না, ওদের চেহারাও দেখবো না। একটার পর একটা ঘাত-প্রতিঘাত এসেছে, তখনও মাকে ভেঙে পড়তে দেখিনি। বাবাকে তিনি কখনও বরাজনীতি ছেড়ে দিতে বলেননি ।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি প্রতিটি পদে পদে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার বিষয়ে অন্তরালে থেকে কাজ করে গেছেন। কখনও তিনি সামনে আসেননি। আমার মা, আমার দাদা-দাদিসহ পরিবারের সবাই জাতির পিতাকে সহযোগিতা করেছেন। ফজিলাতুন্নেসা তার স্বামীকে খুব কম সময় কাছে পেতেন। কখনও তিনি একটানা দুই বছর স্বামীকে কাছে পাননি। আমরাও একটানা দুইবছর বাবাকে কাছে পাইনি। কিন্তু কখনও অনুযোগ অভিযোগ করেননি তিনি ।

ছয় দফা জনপ্রিয় করতে বঙ্গবন্ধুর প্রচারণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা ঠিক থাকে। নেতারা সব সময় বেতাল হয়ে যান। ছোটবেলা থেকে এটা দেখে আসছি। ওই সময় ভাল ভাল নেতারা বলতেন ছয় দফা না আট দফা। কিন্তু মা বলতেন, ছয় দফাই বাঙালির মুক্তির সনদ। এখানেও বঙ্গমাতার দৃঢ় দেখেছি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, জাতীয় মহিলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম, সংসদ সদস্য রেবেকা মোমেন, সচিব নাসিমা বেগম প্রমুখ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাত্রিতে স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ ও আত্মীয়-স্বজনসহ দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে তিনি শাহাদতবরণ করেন।

বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কমসূচি পালন করছে। তার ম্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে বেগম মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে আজ সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে ‘শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণীয় : বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পাদনায় ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর বইটি প্রকাশ করেছে।
০৮ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে