বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৩৩:৪৪

এজেন্সি প্রতারণায় ৫ হাজার হাজি মক্কায় বিপাকে

এজেন্সি প্রতারণায় ৫ হাজার হাজি মক্কায় বিপাকে

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ক্ষুদ্র কৃষক চান মোহাম্মদ হজ পালনের উদ্দেশ্যে ঢাকার ইকো এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের স্থানীয় প্রতিনিধি আবদুল আজিজের হাতে দুই লাখ ৫৫ হাজার টাকা দেন। গত ফেব্রুয়ারিতে টাকা দিলেও এজেন্সিতে টাকা জমা না দেয়ায় অনলাইনে আবেদন হয়নি চান মোহাম্মদের। শেষ পর্যন্ত সরকারের বিশেষ বিবেচনায় বাদপড়া মুসলি্লদের বাড়তি কোটায় হজে নিয়ে আসা হয় তাকে।

তড়িঘড়ি করে মক্কায় আনার পর চান মোহাম্মদকে রাখা হয় হারাম শরিফ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এক টিলার ওপর ভাড়া বাড়িতে। ১৯ সেপ্টেম্বর মক্কায় পৌঁছার পর থেকে এজেন্সির লোকজন তাকে মাত্র চারবেলা খেতে দিয়েছে। মঙ্গলবারও তিনি কোনো খাবার পাননি বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। এই বাড়ির অন্তত দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো রেস্তোরাঁ নেই, নেই পানীয়জলের কোনো ব্যবস্থা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চান মোহাম্মদ।

বাংলাদেশ থেকে সঙ্গে নিয়ে আসা শুকনো খাবার এরই মধ্যে শেষ! এজেন্সির দেয়া গাড়িতে করে মিনা থেকে আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফা হয়ে মিনায় গেলেও পরে হেঁটে মিনা থেকে মক্কার আবাসিক হোটেলে আসতে হয়েছে চান মোহাম্মদের কাফেলাকে। দীর্ঘ পথ সফর এবং প্রয়োজনীয় খাবার ও পানি না পাওয়ায় বিছানায় পড়ে যান তিনি। প্রতারণার অভিযোগ এনে তিনি দায়ী হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মক্কায় অবস্থানরত ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ থেকে সরকারের বাড়তি কোটায় সৌদি আরবে হজ করতে এসে চরম বিপাকে পড়েছেন এ রকম প্রায় পাঁচ হাজার হাজি। তাদের অনেককে রাখা হয়েছে হারাম শরিফ থেকে দূরে বিভিন্ন বাড়িতে।

ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান প্রতিবেদককে জানান, সরকার হজ এজেন্সির গাফিলতি ও প্রতারণার প্রমাণ পেলে কোনো ছাড় দেবে না। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে। এসব বিষয় তদারকিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত কমিটি কাজ করছে।

হারাম শরিফ থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে তাকওয়া এলাকার টিলায় একই বাড়িতে থাকছেন রাজশাহীর বোয়ালিয়া উপজেলার রহিমা খাতুন, নাটোরের সিংড়া উপজেলার গোলাম রসুল ও গুরুদাসপুরের আবু জাহিদসহ অন্তত ১৭ হাজি। তাদের মধ্যে আটজন নারী। হজে আসার আগে এজেন্সি থেকে তাদের বলা হয়, হারাম শরিফ থেকে ৮০০ মিটারের মধ্যে সমতল জায়গার বাসায় রাখা হবে, দেয়া হবে তিনবেলা খাবার।

বোয়ালিয়া উপজেলার রহিমা একই এলাকার হান্নানকে টাকা দিয়েছিলেন। হান্নানও কোনো খোঁজ নেয়নি রহিমার। সঙ্গে সৌদি আরবের সিমকার্ড না থাকায় আট দিন তিনি পরিবারের সদস্য ও হজ এজেন্সির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশি এক হাজির সহায়তায় সিমকার্ড পেয়ে পরিবার-স্বজন ও হজ এজেন্সির সঙ্গে যোগাযাগ করতে সক্ষম হন। এর পর রহিমার জায়গা হয় পাহাড়ি টিলার ওপর বাড়িতে। সেখানে ছোট্ট কক্ষে গাদাগাদি অবস্থায় রাখা হয়েছে হাজিদের।

বিষয়টি জানার পর ধর্মমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবার বাংলাদেশ হজ মিশন থেকে এসব বাড়ি ঘুরে দেখেছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শহীদুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। শহীদুজ্জামান জানান, বেশ দূরের ও টিলার ওপর এমন বাসাবাড়ি থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন ও হারাম শরিফে জামাতে নামাজ আদায় করা কষ্টকর। এটি ধর্মপ্রাণ মুসলি্লদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। এজেন্সিগুলোর এমন অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) কয়েকজন নেতাও।

তবে এই হাজিদের দুর্ভোগের বিষয় জানাজানি হওয়ার পর সরকারপক্ষ থেকে তাদের তিনবেলা খাবার ও পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। গত রোববার মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে জরুরি সভা ডেকে ধর্মমন্ত্রী হাব নেতাদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত সচিব শহীদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন।

হাবের সাবেক সহসভাপতি আফতাব উদ্দিন চৌধুরী সোমবার মক্কায় হজ মিশনে ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী হজ এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। হাবের সাবেক ও বর্তমান প্রভাবশালী কয়েকজন সদস্য সরকারের বাড়তি কোটায় আনা হাজিদের নিয়ে বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে আসা সুমন অভিযোগ করেছেন, তাদের নিম্নমানের ও দূরের বাসায় রাখা হয়েছে। বাসায় হজ এজেন্সির পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও তা করা হয়নি।-সমকাল
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে