সোমবার, ০৮ আগস্ট, ২০১৬, ০৬:৪১:৩১

ভারতে চলে যাওয়া সেই বিলুপ্ত ছিটবাসীরা আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান

ভারতে চলে যাওয়া সেই বিলুপ্ত ছিটবাসীরা আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান

নিউজ ডেস্ক: ভারতে যাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দারা বাংলাদেশে ফিরতে চান। কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের এক বছরের মাথায় তাদের অনেকের মধ্যেই এখন এমন মনোভাব দেখা দিয়েছে।
 
স্বরাষ্ট্রবিষয়ক ভারতীয় পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য এ কথা স্বীকার করেছেন। পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে দ্য ইকোনমিক টাইমস। গত বছর ১ আগস্ট বিলুপ্ত ছিটমহলের আগ্রহী বাসিন্দারা ভারতে চলে যান।  

প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব ছিটমহলবাসী ভারতে এসেছেন এবং বসতি স্থাপন করেছেন তাদের বিষয়ে আমি প্রতিবেদন পেয়েছি। ভারতে কর্মসংস্থান এবং মৌলিক আরও কিছু সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে বলে তারা এখন বাংলাদেশে ফিরতে চান। এটা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। আমি এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তদন্ত করে দেখব।
 
১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। এর মধ্য দিয়ে সীমান্তসংক্রান্ত জটিল সমস্যাটির সমাধান হয়। ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সঙ্গে। এর আয়তন ১৭১৬০ একর।
 
অন্যদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (আয়তন ৭১১০ একর) যুক্ত হয় ভারতীয় ভূখণ্ডে। ভারতীয় ছিটমহলগুলোর সবই পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। ৫১টি সাবেক ছিটমহল ছড়িয়ে আসে দিনহাটা, মেকলিগঞ্জ, সিতাই, শীতলকুচি ও তুফানগঞ্জ সংসদীয় আসনে। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারতের ভেতরে থাকা বাংলাদেশী ৫১টি ছিটমহলের ১৪ হাজার ৮৬৪ অধিবাসী ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের ৯২১ অধিবাসী ভারতের অংশে চলে আসেন।
 
এসব মানুষের অধিকার ও তাদের জীবন ধারণ নিয়ে কাজ করছেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি ও সিটিজেনস রাইটস কোঅর্ডিনেশন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত।
 
তিনি বলেছেন, যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন তারা এখনও ভালো কাজ পাননি। তাই তারা ফিরে যেতে চান বাংলাদেশে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এসব মানুষ বাংলাদেশে ফিরে যাওয়াকেই সর্র্বোত্তম বলে মনে করছেন। দীপ্তিমান স্বীকার করেন, বিলুপ্ত ছিটমহলের ভারতীয় এসব বাসিন্দার যেসব চাহিদা রয়েছে তার বেশিরভাগই পূরণ হয়নি।
 
তিনি বলেন, ভারতীয় অংশ ও বাংলাদেশ থেকে আসা এসব মানুষের বড় চাওয়া দুটি। একটি হল তাদের জন্য সংরক্ষিত কর্মসংস্থান ও ভূমি রেকর্ড এবং সেটেলমেন্টবিষয়ক আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি। কিন্তু এ দুটি দাবির কোনোটিই এখনও পূরণ হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দীর্ঘ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
 
সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা ওসমান গণি বলেছেন, আমরা এখনও উপযুক্ত কোনো কাজ পাইনি। ভারতের চেয়ে আমরা বাংলাদেশেই বেশি ভালো ছিলাম। যদি ভারতে আমাদের অবস্থার উন্নতি না ঘটে তাহলে আমরা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই।
 
কুচবিহার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দাবি করেন, সাবেক এসব ছিটমহলবাসীকে ‘জব কার্ড’ দেয়া হয়েছে। সুযোগ-সুবিধার অভাবে কেউ বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাচ্ছেন এমন কোনো প্রতিবেদন পাইনি।
 
ছিটমহলবাসীর সমস্যা পর্যবেক্ষণকারী স্থানীয় বিধায়ক ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা উদয়ন গুহ বলেছেন, প্রথম দু’মাসে সরকার তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করেছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে, তারা ঘরে বসে থাকতে চান। বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে এসেছেন তাদের অল্পসংখ্যককে কলকারখানায় চাকরি দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সে কাজ করতে রাজি হননি।

তিনি দাবি করেন, কিছু মহল তাদের উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে। শিগগিরই তাদের মধ্যে ভূমি হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান উদয়ন গুহ।-যুগান্তর
০৮ আগস্ট,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে