আরিফুর রাজু: ১৯৭১ সালে র্দীঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র পায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের নির্যাতনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় হতে না হতে স্বাধীনতার কয়েক যুগ পরে এসে আমরা দেখতে পাই আগের সেই হিংস্র রুপ। যুদ্ধের পূর্বে যেমন বিদেশি প্রভূদের প্রত্যক্ষ শাষণে নির্যাতিত হয়েছে এদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পেক্ষাপট। ঠিক তেমনি বর্তমান সময়ে এসে পূর্ব বা পশ্চিমা কোন না কোন মোড়লদের জাঁতাকলে নিয়মিত পিষ্ঠ হচ্ছে এদেশের মানুষ।
৭১ এর মত প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ ভাবে বিদেশি একটি গোষ্ঠি এ দেশের অধিক সম্ভবণাময় ক্রিকেটকে ধ্বংসের নিমিত্রে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা চাচ্ছে উদীয়মাণ বাংলাদেশের ক্রিকেট সারা জীবন মাথা নিচু করে থাকুক এবং ক্রিকেটের মোড়লদের হাতের নাগালের মধ্যেই থাকুক।
এ দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক আগ থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হলেও তা প্রকাশ পায় ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে। মূলত ওই আসরেই ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকদের বেলকি, চিনেছে নতুন হিংস্র টাইগারদের। মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বিশ্বকাপেরর আসরটিতে আম্পায়ারদের ভুল সিদ্ধান্তের ফলে ফাইনালের খুব কাছ থেকেই ফিরে এসেছিল বাংলাদেশ। স্বপ্ন জয়ের পথে স্বপ্ন ভেঙে র্দীঘ নিশ্বাস নিয়ে টাইগাররা কষ্টের পথ মাড়ি দিয়েছে অনেক দিন। তার পরও তারা হতাশ হয়নি এগিয়ে গেছেন নতুন এক শক্তি নিয়ে। পরে সেই ক্ষিপ্ত টাইগার বাহিনীর ধারালো নখের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে ভারত- আফ্রিকাসহ ক্রিকেট পরাশক্তি সম্পন্ন অনেক দেশ।
২০১৭ সালে বিশ্ব সেরাদের সাথে চ্যাম্পিয়ানশিপে অংশ নিবে বাংলাদেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে সেখানেও বাংলার টাইগাররা নতুন শক্তি সঞ্জার করে জ্যোতি ছড়াবে গত আসরের ন্যায়। হয়তো তাদের কাছে কুপোকাত হতে পারে ক্রিকেট বিশ্বের পরাশক্তি দেশ গুলো। তাই কি মনে প্রশ্ন জাগতে পারে না এর আগেই বাংলার টাইগারদের পথ রুদ্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে অজানা এক শক্তি।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ সফরে আসার কথা থাকলেও জঙ্গিবাদের দোহাই দিয়ে তারা তাদের সফরটি অনিশ্চিত করে দেয়। অথচ গত কয়েক মাস আগের চাইতে বর্তমান সময়টায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠ অনেকটা শান্ত। তারপরও টিম অস্ট্রেলিয়া অস্বীকৃতি জানায় সফরে। এ জঙ্গি ইস্যু নিয়ে র্দীঘ দিন নিয়ে কাদঁছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান। দেশসমূহের ক্রিকেট বোর্ড র্দীঘ দিন ধরে অন্য দেশের কাছে ধরনা দিয়েও বিদেশি টিমকে তাদের দেশে আনতে পারছেনা। আর আফগানিস্তান? তাদের কথা নাই বললাম। জঙ্গি জঙ্গি বলে বাংলাদেশের নামে যে ধোঁয়া ছড়াচ্ছে বিশ্ব বাজারে তাতে কোথায় গিয়ে ঠিকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেটাই এখন দেখার বিষয়। আর এ জন্য যে কম বেশি আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা দায়ি তা অনায়াসে যে কেউ স্বীকার করে নিবে। বাংলাদেশের পঁচা রাজনীতির বিশ্রি গন্ধ আঁচ করা যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। তারা তাদের একে অপরকে ঘায়েল বিশ্ব দরবারে গিয়ে অন্য দলকে জঙ্গি বলে সাধু সাজতে চেষ্টা করে রীতিমত। আর সেটা নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে উপরে থুতু ফেলানোর মত হয়ে গেছে। বিদেশি বন্ধুরা আমাদের অতিথিয়তা গ্রহন করছেন না তাই বলে কি আমরা এর দায় ভার বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের গাঢ়ে তুলে দেব নাকি অজানা কোন শক্তিকে দায়ি করবো? প্রশ্ন থেকেই যায়।
এবার একটু পিছনে ফিরে যাই। বাংলাদেশের মাটিতে এ পর্যন্ত ৭৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অশিয়া কাপ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের আসরও অনুষ্ঠিত হয়েছে এ মাটিতে। তখন জঙ্গি হামলা তো দূরের কথা বরং দক্ষিণ আফ্রিকান গ্রেট বোলার স্টেইন দের কে বৃষ্টিতে ভিজে শহরের গলিতে সাধারণ মানুষদের সাথে খেলতে দেখেছে বিশ্ববাসী। কারো কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই এই ৭৫ টি ম্যাচের কোনটিতে বিদেশি খেলোয়াড়রা কোন প্রকার সমস্যায় পড়েছে।
বাংলাদেশি টাইগারদের চলার পথটা যে দিনে দিনে দুরুহ হয়ে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে আমাদের দেশের ইমেজটা বিশ্ব দরবারে ছোট হয়ে যাচ্ছে তা কতটুকু সরকার ও বিসিবি কর্মকর্তারা উপলব্দি করতে পারছে তাই এখন দেখার বিষয়। আজ অস্ট্রেলিয়া কাল হয়তো অন্য কোন দেশ এমন অভিযোগ এনে বাংলাদেশ সফর করবে না তখন কোথায় গিয়ে ঠিকবে আমাদের ক্রিকেট অগ্রযাত্রা? নাড়ীর সাথে মিশে যাওয়া এ দেশের ক্রিকেটের দুর্দিনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের পদক্ষেপেই কেবল এ দেশের ক্রিকেট চলে যেতে পারে অন্য এক মাত্রায়।
লেখক: সাংবাদিক
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫,এমটি নিউজ২৪/আরিফুর/রাজু