শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬, ০৩:৪১:১০

নেইমারদের লক্ষ্য এক ঢিলে তিন পাখি

নেইমারদের লক্ষ্য এক ঢিলে তিন পাখি

স্পোর্টস ডেস্ক : এক ম্যাচে দুটিকেই কবর দেওয়ার সুযোগ নেইমারদের সামনে। যে ম্যাচ আসলে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ নয়, ‘তিন পাখি’ মারার সুযোগ। মারাকানাজো আর মিনেইেরাজো যদি ব্রাজিলের দুঃখ হয়, অলিম্পিক ফুটবল চির আক্ষেপের এক নাম। সব জেতা হয়েছে, শুধু এই একটা শিরোপাই হয়ে আছে মরীচিকা। তিন-তিনবার যা ধরা দিতে দিতেও হাত ফসকে গেছে। আজ ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের মোক্ষধাম মারাকানায় কি ঘুচতে যাচ্ছে সেই আক্ষেপ?

১৯৫০ বিশ্বকাপের ওই ম্যাচ ফাইনাল না হয়েও ছিল ফাইনালের মতোই। উরুগুয়ের সঙ্গে ড্র করলেই প্রথম বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। সেই ম্যাচ হেরে গিয়ে ‘মারাকানোজো’র জন্ম। ৬৬ বছর আগের কথা বলেই কিনা আজ সেই মারাকানাতেই আরেকটি ফাইনালের আগে ‘মারাকানাজো’ খুব একটা আসছে না। প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে হলে হয়তো আসত।

আসছে ‘মিনেইেরাজো’। দুই বছর আগে বিশ্বকাপের সেই ভয়াল সেমিফাইনাল। বেলো হরিজেন্তের এস্তাদিও মিনেইরোয় জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলের বুক ভেঙে দেওয়া সেই পরাজয়। সেই ম্যাচের পর আজই দুই দলের প্রথম দেখা। পুরো জাতীয় দল নয়, তাতে কী! ঘুরেফিরে ওই ম্যাচের কথাই তো আসছে বারবার। এল দুই কোচের ফাইনাল-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও।

এমনিতেই চাপের শেষ নেই। ব্রাজিলের কোচ রোজেরিও মিকালে তা আরও বাড়াতে যাবেন কোন দুঃখে! তিনি তাই দুটির পার্থক্য বোঝাতে চাইলেন, ‘ওটা ছিল বিশ্বকাপ। আর এটা অলিম্পিক। আর নেইমার তো ওই ম্যাচে খেলেইনি। কাজেই প্রতিশোধ-ট্রতিশোধ মনে হওয়ার কোনো কারণই নেই। ভিন্ন দল, ভিন্ন বয়সের সব খেলোয়াড়, সময়টাও ভিন্ন।’
যেন এসব কেউ জানেন না! ব্রাজিলিয়ানদের এসব তত্ত্বকথায় কান দিতে বয়েই গেছে। তাদের একটাই চাওয়া—প্রতিশোধ! সেটি নিতে পারলে বাকি সব চাওয়া তো এমনিতেই পূরণ হয়ে যায়।

জার্মানির কোচ হোর্স্ট রুবেশকেও করা হয়েছিল প্রশ্নটা। তিনি বিরক্তিভরে বলেছেন, ‘এই প্রশ্নটা শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। এটা অলিম্পিক ফাইনাল-এ ছাড়া এই ম্যাচের অন্য কোনো অর্থ নেই।’

ব্রাজিলের আমজনতার কাছে অবশ্যই আছে। নেইমারের কাছেও কি নেই! ‘মিনেইরোজো’র লজ্জা মাঠে থেকে পেতে হয়নি। কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জঘন্য এক ফাউলে শিরদাঁড়ার হাড় ভেঙে যাওয়ায় নেইমার ছিলেন সে ম্যাচের দর্শক। কিন্তু সেই বিপর্যয়ে তাঁর হৃদয়েও কি রক্তক্ষরণ হয়নি! জার্মানিকে আবার সামনে পেয়ে প্রতিটি রক্তকণিকায় কি টগবগিয়ে উঠছে না প্রতিশোধের নেশা! ব্রাজিলের মূল দলেরই প্রাণভোমরা তিনি, তরুণ এই দলে তো আরও বেশি।

অলিম্পিকে অধরা সোনা এনে দেবেন বলেই কোপা আমেরিকায় খেলেননি। প্রথম দুই ম্যাচে বাজে পারফরম্যান্সের পর সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত নেইমারই ঘুরে দাঁড়ানোর মন্ত্র জপেছেন সতীর্থদের কানে। পরের তিন ম্যাচে ব্রাজিল শুধু জেতেইনি, যে ঝলকের আশায় ব্রাজিলের দিকে তাকিয়ে থাকে ফুটবল-বিশ্ব, দেখা গেছে সেটিও।

আজকের ফাইনালে কোনো একজনের যদি দুই দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য থাকে, তাঁর নামও নেইমার। জার্মান কোচেরও তা না জানার কথা নয়। মুখে যদিও উল্টো হুংকার, ‘আমরা ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলব, নেইমারের বিপক্ষে নয়। আমাদের ফরোয়ার্ডরা ২১ গোল করেছে, ব্রাজিল কীভাবে আমাদের ঠেকাবে, সেটা বরং ভাবুক।’

গোলশূন্য প্রথম দুই ম্যাচের পর পরের তিন ম্যাচে ব্রাজিলও করেছে ১২ গোল। টুর্নামেন্টে এখনো একবারও বল ঢুকতে দেয়নি নিজেদের জালে। ফাইনাল জিততে না পারলে সবকিছুই যে অর্থহীন হয়ে যাবে, এটা নেইমারের চেয়ে ভালো আর কে জানে! ইরাকের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর ‘নেইমারের চেয়ে মার্তা ভালো’ এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাঁকে। ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ফুটবল হলো ধর্ম এবং সেই ‘ধর্মে’ দ্বিতীয় হওয়ার কোনো ক্ষমা নেই।

এই বিষম বোঝা নিয়েই ব্রাজিলের প্রতিটি ম্যাচে মাঠে নামতে হয় নেইমারকে। আজ সেটি বেড়ে আরও বহুগুণ। নেইমার কি পারবেন তা জয় করতে?

পারার পুরস্কারটা অনেক বড়। গলায় ঝোলানো সোনার পদক তো দৃশ্যমানই থাকবে, অদৃশ্য হয়ে থাকবে আরও দুটি বড় পাওয়া।
‘মারাকানাজো’ ও ‘মিনেইেরাজো’কে কবর দিতে পারা!-প্রথম আলো
২০ আগস্ট ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে