মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১০:১৩:৫৪

বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন মার্গারিতা

বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন মার্গারিতা

শফিক কলিম: ১৯৮৪ সাল থেকে অলিম্পিকে অংশ নিলেও পদকশূন্য বাংলাদেশ। পদক বাংলাদেশের দিবাস্বপ্ন, বাঙালিরও। তবে এক বাঙালি অন্য দেশের হয়ে অলিম্পিক মঞ্চ থেকে জিতলেন স্বর্ণপদক; একটি জাতিকে দিয়ে গেলেন অন্য মন্ত্র। তিনি যে এখন বাঙালির ধ্রুবতারা। রিতায় গর্বিত বাংলাদেশ, বাঙালিও।

রিও-তে অল অ্যারাউন্ড হুপ, বল, ক্লাব ও রিবনে তিনবার বিশ্বসেরা স্বদেশি ইয়ানা কুদ্রিয়াভৎসেভাকে টপকে(৭৬.৪৮৩) রাশিয়াকে স্বর্ণপদক দিয়েছেন রিতা; হিটেও প্রথম (৭৪.৩৮৩)। পদকের ঘরে শূন্য হলেও বাংলাদেশকে তুলে ধরেন ‘বাংলার বাঘিনী’; রিতাও গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুই দেশের জয়’।

রিও অলিম্পিকে রিদমিক জিমন্যাস্টিক্সের স্বর্ণপদক জয়ের মঞ্চে ‘রাশিয়ান’ মার্গারিতা মামুনকে দেখে বাঙালিরা বলতে পারেন, ‘এটা হতে পারত অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রথম পদক’। তিনি বাঙালি, লাল-সবুজ পাসপোর্ট! কেন রাশিয়ার হলো? বাংলাদেশই তাকে রাখে নি! চার বছর আগে বাবার সঙ্গে বাংলাদেশে এসে সুযোগ চাইলেও দেয় নি ফেডারেশন, কেউ সহযোগিতা পর্যন্ত করে নি।

বাংলাদেশের হয়ে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলানোর সুযোগ দিতে ২০০৯ সালে(পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের তথ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়) মেয়েকে নিয়ে আসেন প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন। জিমন্যাস্টিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে(বিওএ) যোগাযোগ করলেও সহযোগিতা পান নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ প্রতিবেদককে রিতা জানান, ‘বাবার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের হয়ে খেলি। ২০০৯ সালে এজন্য ঢাকায় গিয়েছিলাম। ৪ দিন ছিলাম। ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের কারও কাছ থেকে ভালো কিছু পাই নি। কেউ সহযোগিতা পর্যন্ত করেন নি।’

বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন থেকে দিতে হবে। এছাড়া উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তবে এখন না, ২০১৮ সালের দিকে।’

জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদুর রহমান জানান, ‘রিতাকে কখনও দেখি নি। ৬ থেকে ৭ বছর আগে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে এসেছিলেন। কিন্তু অনুশীলনের ভালো সুযোগ-সুবিধা, উন্নতমানের কোচ দিতে পারতাম না।’ আসলে কিশোরী রিতাকে নিয়ে আশাবাদী ছিলেন না জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন কর্তারা।

অথচ ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে অংশ নেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জিমন্যান্স শাইক সিজার, বিওএ সহ-সভাপতি বশির আহমেদ মামুনের আত্মীয়। গেমস শুরুর আগে শাইকের ৩ মাস প্রস্তুতির খরচ দেয় বিওএ।

জার্মানিতে জুনিয়র টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধি ছিলেন ২০০৫ সালে জিমন্যাস্টিক্স চর্চা শুরু করা রিতা, অবহেলায় পরে আর এমুখো হন নি।

বাংলাদেশে আসতে পারেন ১৯৯৫ সালের ১ নভেম্বর জন্ম নেয়া রিতা! উদ্যোক্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম; ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘গত বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ২ দিন পর তাদের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলাম মস্কোর অদূরে। মামুন ভাই কথা দিয়েছেন, অলিম্পিকের পর মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। তখন ‘বাংলার বাঘিনী’র জন্য ফুলের তোড়া নিশ্চয় আরও অনেক বড় হবে।’

২০১৩ সালে কিয়েভে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ, কাজানে গ্রীষ্মকালীন ইউনিভার্সিয়াদে অল-অ্যারাউন্ডে প্রথম হয়ে সবার নজর কাড়েন রিতা। রাশিয়ায় শুরু হয় হইচই। ম্যাগাজিন ইউরো স্পোর্ত প্রচ্ছদে আনে। গণমাধ্যম নাম দেয় ‘বাংলার বাঘিনী’।

রিও’তে স্বর্ণ জয়ের পর টিভি কমেন্টেটররাও বলছিলেন ‘বেঙ্গল টাইগার’। তাকে নিয়ে বাংলাদেশ যে উচ্ছ্বসিত জানেন রিতা, বলেনও। ফেসবুকে চলছে অভিনন্দন জানানো। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে অধ্যয়ন করতে গিয়ে সাবেক রিদমিক জিমন্যান্স আনাকে বিয়ে করে স্থায়ী হন রিতার বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন।-আলোকিত বাংলাদেশ
২৩ আগস্ট ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমকেএইচ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে