শুক্রবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০৭:২৬

মেসির বুটে একটা চুমু দিতে পায়ে লুটে পড়লো ভক্ত

মেসির বুটে একটা চুমু দিতে পায়ে লুটে পড়লো ভক্ত

স্পোর্টস ডেস্ক: যোগ করা সময়ের খেলা চলছে। প্রতিটা সেকেন্ড এখানে মহামূল্যবান। অথচ সেই সময় বন্ধ হয়ে গেল খেলা। এই ম্যাচের নিরাপত্তায় দাঙ্গা পুলিশ পর্যন্ত রেখেছিল আর্জেন্টিনা। কী করে সেই বিশাল ব্যাটালিয়নের ফাঁক গলে, লাঠি-গুঁতো কিংবা জেলের ভয় অগ্রাহ্য করে একটা মানুষ ঢুকে গেল মাঠে!

খুবই সাধারণ একজন মানুষ। পরনের জামায় নিজের প্রতিদিনের লড়াই-ক্লিষ্ট জীবনের ছাপ। নুন আনতে হয়তো পান্তা ফুরোয়। সেই মানুষটা একেবারে লিওনেল মেসির সামনে গিয়ে মাটিতে মাথা ছোঁয়ালেন। মেসির বুটে একটা চুমু দিতে চাওয়ার সে কী ব্যাকুলতা তাঁর। যেন তিনি মেসিকে বার্তা দিতে চাইলেন, ‘লিও, ফুটবল খেলাটা মাত্র ৯০ মিনিটের। কিন্তু জীবন অনেক বড়। তোমাকে আমরা শুধু এই ৯০ মিনিটের জন্য ভালোবাসি না। তোমাকে আমার ভালোবাসি জীবনের জন্য। তোমাকে ভালোবাসি জীবন দিয়ে! অভিমান করে আমাদের ছেড়ে যেয়ো না, লিও।’

অন্য সময় হলে উরুগুয়ে এভাবে সময় নষ্ট হওয়ায় খেপে যেত। তাদের জন্য তখন প্রতিটা মুহূর্তই হিরের চেয়েও দামি। আশ্চর্যের বিষয় হলো এই, উরুগুয়ের সব খেলোয়াড়ও যেন এই মুহূর্তটা উপভোগ করছেন! তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন, একটা মানুষ কার্যত তাঁর দেশকে কিছু না দিয়েও কত ভালোবাসা পেতে পারেন! আর সেই মানুষটাও, সেই শৈশবে মায়ার টান ছিন্ন করে ভিন দেশে চলে গিয়েও কী করে এখনো দেশটা এত গভীরভাবে ভালোবাসেন!

মেসি আর্জেন্টিনার জার্সিতে অনেক কেঁদেছেন। লাজুক বলে, অন্তর্মুখী স্বভাবের বলে আগে লুকিয়েই কাঁদতেন। এখন তো ড্রেসিংরুম পর্যন্ত গিয়ে আড়াল পাওয়ার সৌভাগ্য হয় না। মাঠেই কাঁদেন। আজও যেন একটু হলেই কেঁদে দিতেন। পাঁচটা ব্যালন ডি’অর দিয়ে কী করবেন তিনি! এই যে মানুষটা, মেসির পায়ে যিনি নিজের সবটুকু তুলে দিয়ে চান, মেসির বুটে যিনি চুমু এঁকে দেন নিজের প্রিয়তম সন্তানের কপালে যেভাবে চুমু এঁকে দেয় বাবা; এই ভালোবাসার কাছে বাকি সবই যে তুচ্ছ!

আজকের পুরো ম্যাচে এই অদ্ভুত এক ভালোবাসার গল্প রচিত হলো প্রতিটা মুহূর্তে। মেসিকে নাকি আর্জেন্টিনার মানুষ তেমন ভালোবাসে না। আর্জেন্টিনার মানুষদের ভালোবাসা জিততে হলে হয় বিশ্বকাপ জেতাতে হবে, নিদেন খেলতে হবে বোকা জুনিয়র্স বা রিভার প্লেটের হয়ে। মেসি তো এর কিছুই করেননি। মেসির নাকি দেশপ্রেম নেই। জাতীয় সংগীতটা পর্যন্ত নাকি জানেন না। এত এত সব বিভিন্ন তত্ত্ব আর তথ্য এখনো গুগল করলেই পেয়ে যাবেন। এই সব নিরেট-নির্বোধ বোদ্ধাদের কাছে আজকের ছবিটা ঠিকমতো পৌঁছাল কি? নাকি পৌঁছাবে না কখনোই। যাদের বুকে হৃদয়ের বদলে বসানো থাকে লাভ-ক্ষতির হিসেব কষা ক্যালকুলেটর!

মেসিকে বরণ করে নিতে আজ প্রস্তুত ছিল আর্জেন্টিনা। যতবারই মেসির পায়ে বল গেছে, ততবারই যেন গ্যালারির গর্জন দ্বিগুণ হয়েছে। আর প্রতি মুহূর্তে মে-এএএ-সি, মে-এএএ-সি স্লোগান তো ছিলই। অনেকেরই হাতে ধরা ছিল পোস্টার, ব্যানার। ধন্যবাদ মেসি, আমাদের সঙ্গে থেকে যাওয়ার জন্য। মেসি চলে যেতে পারে না। মেসি থাকবেই...আলাদা করে নজর কাড়ল এই ব্যানারটাই: লিও আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমাকে এত কম ভালোবাসার জন্য!

মেসি ব্যানারগুলো নিশ্চয়ই পড়েছেন। আর অবাক হয়ে ভেবেছেন, কী আশ্চর্য, আমারই তো ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমিই তো তোমাদের কিছুই দিতে পারলাম না। তোমরা যে অপার ভালোবাসা আমাকে দিয়েছ, এর বিনিময়ে কী-ই-বা দিলাম!

আজকের ম্যাচে দর্শকদের আবেগের বাড়াবাড়ি হতে পারে বুঝেই যেন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। ঢাউস জ্যাকেট আর হাতে ভয়ালদর্শন অস্ত্র নিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ছিল বিশেষ পুলিশ। তবে তারা কি জানত না, ভালোবাসা সেই অবাধ্য মিসাইল, যাকে আটকায় কারও সাধ্য নেই!-প্রথম আলো
২ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে