স্পোর্টস ডেস্ক : কর্মকর্তা হিসেবে জীবনে প্রথম ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভায় যোগ দিলেন ভারতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। এদিকে ক্যাঁচরম্যাচর, হাঙ্গামা, কথায় কথায় মামলা আর রক্তলোলুপ সব কাজকারবার আধুনিক বিসিসিআইয়ে। অথচ শশাঙ্ক মনোহরকে চার বছর পর তা ফের বোর্ড প্রেসিডেন্টের গদিতে বসিয়ে দিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সরকারি ঘোষণার জন্য রোববার দুপুর দুটোর বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভা পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া আইনি উপায় নেই। কিন্তু বকলমে শশাঙ্ক প্রেসিডেন্ট হয়েই গেলেন শ্রীনি-যুগের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটিয়ে!
সাড়ে ছয় মাস আগে জগমোহন ডালমিয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময়ই বলা হচ্ছিল শ্রীনি-জমানার শেষ। কিন্তু তার পরেও দেখা যায় কিছু রক্তবীজ রয়ে গিয়েছে। বোর্ড সচিব পদ ছাড়া বাকিগুলোয় শ্রীনি মনোনীত প্রার্থীই চেন্নাই নির্বাচন জিতেছিলেন। মুম্বাইয়ে হঠাৎ করে ডাকা বেসরকারি নির্বাচনে অবশ্য সাবেক বোর্ড প্রেসিডেন্টের দল সমূলে উৎখাত। শশাঙ্ককে প্রার্থী দাঁড় করানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছেন তিরিশ জন সদস্যের বাইশ জন। মানে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতারও বেশি!
শোনা গেছিল ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে শশাঙ্কের নাম প্রস্তাব করবেন সৌরভ। সেই নমিনেশনে দুপুরের মধ্যে সই করা নিয়ে তিনি এত উদগ্রীব ছিলেন যে, নীতা অম্বানীর ব্যক্তিগত বিমান তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও আটলেটিকো ম্যাচের জন্য চেন্নাই যেতে পারেননি। এটাও শোনা গেছিল সৌরভ যদি প্রস্তাবক না হন, তা হলে হবেন অভিষেক ডালমিয়া। সেন্টিমেন্টাল কারণও থাকবে তার পেছনে। বাবার শূন্যস্থানে বসতে যাওয়া প্রার্থীর নাম তিনিই সুপারিশ করবেন এনসিসি থেকে। কার্যত দু’জনের কাউকেই আলাদা করে করতে হল না। পূর্বাঞ্চলের ছ’টা রাজ্যই একযোগে নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্টের নাম সুপারিশ করল।
একেই বলে ভোটের হাওয়া ঘোরা! মাত্র ক’মাস আগেও এই পূর্বাঞ্চল থেকে ত্রিপুরা, এনসিসি আর সিএবি ছাড়া শ্রীনি-বিরোধীর খোঁজ তন্নতন্ন করেও পাওয়া যেত না। আজ সেখানেই কে বা প্রাণ আগে শশাঙ্কের লগে করিবেক দান তারই লগে কাড়াকাড়ি!
শ্রীনি যতই সংখ্যালঘিষ্ঠ হন, শেষ মুহূর্তেও নির্বাচন স্থগিত রাখার একটা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন এমন একটা ধারণা হবু প্রেসিডেন্টের শিবিরে ছিল। দুপুরে শারদ পাওয়ার সমেত তাদের টিম যখন গাড়ওয়াড়ে প্যাভিলিয়নের নতুন লাঞ্চরুমে বসে খাচ্ছে তখন খবর আসে, চেন্নাই আদালতে একটা কিছু ঘটেছে। সুব্রহ্মণম স্বামী কোনও পিটিশন করেছেন। দ্রুত হালকা উদ্বেগ তৈরি হয়। কিছু পরে জানা যায় যে আবেদনে বলা হয়েছে, শশাঙ্ককে প্রেসিডেন্ট বানানোটা স্বার্থের সংঘাত হবে কারণ তাঁকে ইন্টারপোল খুঁজছে। তিনি যে বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ললিত মোদীর নানান চুক্তিতে সই করেছিলেন।
শুনে হতবাক শশাঙ্ক বলতে থাকেন, ‘‘আমি সই করেছি ললিত মোদীর বিলে? আমাকে ইন্টারপোল খুঁজছে? কী সব মিথ্যে কথা! একটা ডকুমেন্টেও আমার কোনও সই নেই। সব সই বরং শ্রীনির। ও তখন বোর্ড সেক্রেটারি ছিল।’’
অজয় শিরকে, পাওয়ার এবং মনোহর বেরিয়ে এসে নিজেদের মধ্যে একান্ত আলোচনা সেরে নেন। এই তিন মারাঠাই বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের ত্রিভুজ। অরুণ জেটলির হাতে ভোটের রিমোট কন্ট্রোল আছে জেনেও বলা যায়, এই মারাঠা ব্রিগেডের সঙ্গে চট করে তিনি কোনও সংঘাতে যাবেন না। তার স্নেহধন্য বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরকেও যেতে দেবেন না।
শ্রীনি-সাম্রাজ্য অনেক দিন ধরেই বিক্ষত হচ্ছিল। কিন্তু আচমকা এমন কম্পমান হয়ে আত্মসমর্পণ করে ফেলল কেন?
শনিবারের ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক অলিন্দে যা ব্যাখ্যা শোনা গেল তা হল, শ্রীনি ডুবলেন ভুল স্ট্র্যাটেজিতে। ডালমিয়ার মৃত্যুর পর তিনি ঠিক করেছিলেন বিরোধী গোষ্ঠী ভেঙে দেবেন। পাওয়ারকে প্রেসিডেন্ট পদের লোভ দেখিয়ে টেনে আনবেন নিজের দিকে। সেই মতো ঢাকঢোল পিটিয়ে তিনি নাগপুরে পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাকে প্রেসিডেন্টের পদ অফারও করেন। উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী গ্রুপ ভেঙে নিজে ক্ষমতা ধরে রাখা।
কিন্তু এতে ভয়ঙ্কর খেপে যান তার এত দিনের রক্ষাকর্তা ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলি। জেটলি একটা জিনিসই চান না। তা হল, পাওয়ারের ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে গুরুত্ব বৃদ্ধি। তিনি নাগপুর বৈঠকের সঙ্গে সঙ্গে শশাঙ্ককে প্রস্তাব দেন, তুমি হও। আমি সাপোর্ট করব।
শশাঙ্ক-শিবির শনিবার একাধিক বার হেসে বলছিল, এই জেটলি দু’বছর আগে শশাঙ্ককে ফিরিয়ে শ্রীনিকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। অতি লোভে শ্রীনি সেই জায়গাটা হারাল।
একেই হয়তো বলে পতনকালে বুদ্ধিনাশ! শশাঙ্ক-গোষ্ঠীর ভাষায় অবশ্য শ্রীনির ঐতিহাসিক ভুল!
৪ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি