বৃহস্পতিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৬, ০৩:১৮:৫০

তামিম, এবার কি নতুন কিছু?

তামিম, এবার কি নতুন কিছু?

রানা আব্বাস: মাস দুয়েক আগের কথা। আম্পায়ারদের মাঠে ঢোকার পথটায় দাঁড়িয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সবুজ মাঠটার দিকে দৃষ্টি দুজনের। কদিনের বিরতি থাকায় মাঠ ঢেকে আছে ঘাসে। কোথাও উইকেটের চিহ্ন নেই। তবু তামিম দিব্যি দেখতে পারছেন ২২ গজটা। যেখানে অল্পের জন্য ফসকে গিয়েছিল সেঞ্চুরিটা।

তামিমের স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে ছয় বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট। স্টুয়ার্ট ব্রডের করা ইনিংসের প্রথম বলেই থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেছিলেন। শুরু থেকেই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছিল অসম্ভব কোনো লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেছেন তিনি। টেস্ট নয়, রুদ্ধশ্বাস কোনো টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে ম্যাচের ঝলক তাঁর ব্যাটিংয়ে! ব্যা​ট হাতে তামিমের প্রলয় নাচনে ইংলিশ অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের ফিল্ডিং সাজানো দেখেও বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল, এটা টেস্ট ম্যাচ কি না। টেস্টের প্রথম দিন ​লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি আছে মাত্র পাঁচজন ব্যাটসম্যানের। ​ওই সংক্ষিপ্ত তালিকায় তামিমের নাম উঠে যাওয়াটা মনে ​হচ্ছিল শুধুই সময়ের ব্যাপার। কিন্তু অভি​ষিক্ত অফ স্পিনার জেমস ট্রেডওয়েলকে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে গেল। ক্যাচ নিলেন উইকেটকিপার ম্যাট প্রায়র। তামিমকে ফিরতে হলো ৮৫ রান করে। মাত্র ৭১ বলে ওই ইনিংস। তামিমের দুঃখ বাড়ানো আসল তথ্যটা হলো, লাঞ্চ হতে তখনো বাকি ছিল প্রায় আধঘণ্টা।

সেই হতাশা তামিমকে হয়তো এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। নইলে মাশরাফির সঙ্গে কেন পুরোনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াবেন? ‘ইংল্যান্ড’ নামটাই অবশ্য রক্তে নাচন তোলে বাঁহাতি ওপেনারের। ইংল্যান্ড সিরিজ নিয়ে তাই নিজের পরিকল্পনা সাজানো আগ থেকেই। যদিও ইংল্যান্ড বাংলাদেশ সফর আসবে কি না, তখনো এ নিয়ে নানা সংশয়। অবশেষে ইংল্যান্ড এসেছে। তৈরি তামিমও। আফগানিস্তান সিরিজকে ধরতে পারেন সেই প্রস্তুতির প্রমাণ। ৩ ম্যাচে ৭২.৬৬ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ১ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ২১৮ রান। হয়েছেন সিরিজ–সেরা।

আফগানিস্তানের সঙ্গে হাত মকশো তামিমের ভালোই হয়েছে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁকে সব সময়ই উজ্জীবিত করবে উজ্জ্বল পরিসংখ্যানই। টেস্টে তাঁর ব্যাটিং গড় যেখানে ৩৯.৪৬, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তা ৬৩.১২। ৪ টেস্টে ২ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটিতে করেছেন ৫০৫ রান। ৮ ইনিংসের মাত্র দুটিতেই পাননি ফিফটির দেখা।

২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিং জায়গা পেয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটীয় রূপকথায়। লর্ডসে সেঞ্চুরিতেই লেখা হয়েছিল নতুন ইতিহাস—ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। প্রথমটির মতো দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটিও তামিমের। সেটি ওল্ড ট্রাফোর্ডে পরের টেস্টেই। ইংল্যান্ডে ওই দুই সেঞ্চুরিই তামিম ইকবালকে এনে দেয় আরেকটি ‘প্রথম’-এর গৌরব। উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালম্যানাকের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের তালিকায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জায়গা মেলে তাঁর।

টেস্টে ইংল্যান্ডের​ বিপক্ষে এমনই পারফরম্যান্স যে, ইংল্যান্ডকে তামিমের ‘প্রিয়’ প্রতিপক্ষ বলাই যায়। তবে ওয়ানডেতে তা বলার উপায় নেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯টি ওয়ানডেতে ২৯.৪৪ গড়ে করেছেন ২৬৫ রান। সেঞ্চুরি ১টি। ওয়ানডেতে তামিম তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন, অথচ বাংলাদেশ হেরেছে, এমন ‘বিরল’ উদাহরণও ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতে তামিমের ১২৫ রানের ইনিংসের পরও হেরেছিল বাংলাদেশ।

এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গত দুই বছর ওয়ানডেতে দেশের মাঠে দুর্দান্ত খেলছে বাংলাদেশ। আর সেই সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন তামিম। গত বছর ১৮ ওয়ানডেতে ৪৬.৩৭ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে করেছেন ৭৪২ রান। এবারও আফগানিস্তান সিরিজ দিয়ে দারুণ শুরু করে ইংল্যান্ডকে সতর্কবাণী পাঠিয়ে রেখেছেন! যদিও প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড নিয়ে কিছুই বলতে চান না তিনি, ‘ইংল্যান্ডের সঙ্গে কী করেছি, সেটা পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই তো পেয়ে যাবেন।’ তা না হয় পাওয়া গেল, কিন্তু তাঁর মুখ থেকে শুনলে তা কি একটা আলাদা মাত্রা পায় না! তামিম কিছু বলতে চান না। এটা নিয়ে বলতে বলতে তিনি নাকি ক্লান্ত, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমার পারফরম্যান্স নিয়ে এতবার বলেছি, নতুন করে আর বলার কিছু নেই।’

পুরোনো পারফরম্যান্স নিয়ে আর কতই বা বলবেন! তামিম না হয় এবার নতুন কিছু করে দেখাবেন, নতুন করে লিখবেন ইতিহাস।-প্রথম আলো
৬ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে