স্পোর্টস ডেস্ক : না, কোনওটাই নয়। অন্তত দেখে মনে হওয়ার উপায় নেই। যেন কিছুই হয়নি। তবে তিনি একা। দলছুট। তা বললে তাই। দেখে তো সেটাই মনে হতে বাধ্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ০–২–এ সিরিজ হেরে মঙ্গল–দুপুরে কলকাতায় পৌঁছাল ভারতীয় দল। দক্ষিণ কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে দুটো বাস পরপর এসে দাঁড়াল। দেখে প্রতীকী মনে হবে। কিন্তু সিরিজের ফলাফল তো বলে দেয় দক্ষিণ অাফ্রিকা এগিয়ে, ভারত পিছিয়ে। বাস থেকে এবি–রা নামলেনও আগে, ধোনিরা পরে।
তিনি? সবার পেছনে। দেখা হতে মুখে হাসি। নিজের চুল নিয়ে খানিকটা মজা করা। তারপর? লিফটের সামনে ভিড়। হঠাৎ তিনি পেছনের লিফট দিয়ে নিজের ফ্লোরে উঠে পড়লেন। অনেকের অলক্ষে্যই। হ্যাঁ, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে তারা দেখলে বুঝতেই পারতেন শ্রীনি যুগের অবসানে শশাঙ্ক–যুগে তিনি বোধহয় ‘একা’ হয়ে পড়েেছন। বিশ্ব ক্রিকেটের ‘এমএস’ দলের ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইছেন? নইলে কোনও দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের ঘরে সিঁধিয়ে গেলেন ওইভাবে!
অন্য ছবিটার দিকে তাকালে আবার অন্য বার্তা পাওয়া যাবে। তাজ বেঙ্গলের কফি শপ। বিরাট কোহলি সোজা সেখানে। কান থেকে হেডফোন খুলে কোথায় কী খাবার পাওয়া যাচ্ছে তার দিকেই মন বেশি। হাতে প্লেট নিয়ে ঘুরে ঘুরে খাবারের কাউন্টারে ব্যস্ত টেস্ট–নেতা। ঠোঁটে সামান্য হাসি ঝুলিয়ে বিরাট, ‘খুব খিদে পেয়েছে। রাতে খাওয়া হয়নি। মেজাজ ঠিক নেই।’ সত্যি, জানা নেই কটকে সিরিজ হেরে ভারতীয় দল রাতে খাবার খেয়েছিল কি না। কলকাতায় পৌঁছে দলের বেশিরভাগ সদস্য যেভাবে হামলে পড়লেন কফি শপে তা দেখে মনে হবে, সোম–রাতে সিরিজ হেরে মনখারাপে খাবার খায়নি ভারতীয় দল!
খাবার টেবিলে যেন টিম–বিরাট। হরভজন, স্টুয়ার্ট বিনি, শেখর ধাওয়ান। ঠিক পাশের টেবিলে রবি শাস্ত্রী, অশ্বিন, ভরত অরুণ। খেতে খেতে নিজেদের মধ্যে কথা। রবি খেতে খেতেই অশ্বিনকে স্পিনিং ফিঙ্গার নিয়ে খানিক টিপস দিলেন। মনোযোগী ছাত্র তখন ভারতীয় স্পিনের অন্যতম ভরসা। কলকাতা ম্যাচের পর পাঁচটি একদিনের আন্তর্জাতিকেও ভারতীয় বোলিংয়ের দায়িত্ব তো অশ্বিনকেই নিতে হবে। টেস্ট সিরিজের কথা ছেড়েই দেওয়া গেল। ভারতীয় দলের ডিরেক্টর সেরা অস্ত্রকে শান দিয়ে চলেছেন। সেরা অস্ত্রের কাছ থেকে নির্ভরতা পেলেন বলেই বোধহয় কলকাতায় এসে মিষ্টি দইয়ে সিরিজ হারার যন্ত্রণা মেটালেন ভারতীয় দলের ডিরেক্টর!
কটকের বারাবাটিতে ব্যাটিং–কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছিল। কী বলছেন ভারতের ব্যাটিং–কোচ? কলকাতার তাজ বেঙ্গলে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় বাঙ্গার উত্তর দিয়ে গেলেন, ‘আমরা ধরমশালায় সত্যি ভাল ব্যাট করেছিলাম। কটকে এত খারাপ ব্যাটিং হওয়ার কথা ছিল না, হয়ে গেছে, এটাই ক্রিকেট। তবে পিচও ভাল ছিল না। অসমান বাউন্সে ভর্তি ছিল। যা টি–২০–র জন্য আদর্শ পিচ নয়।’ বোঝা গেল, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পিচের দোহাই দেওয়া সবচেয়ে সহজ পন্থা।
ভারতের মাটিতে পা দিয়েই সিরিজ জিতে বিপক্ষ শিবির হালকাভাবে কোনও কিছুই নিচ্ছে না। কলকাতায় পা দিয়েই প্রোটিয়াবাহিনী নেমে পড়ল সুইমিং পুলে। শরীরটা ঠিক রাখতে হবে তো। জেতার ছন্দটা ধরে রাখতে হবে তো। কানপুরে একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজ শুরু হওয়ার আগে কলকাতায় কুড়ি–বিশের সিরিজটা যদি ৩–০ করে নেওয়া যায়, তার চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না।
এ বি ডি’ভিলিয়ার্সদের ব্যাটিং কোচ মাইক হাসি সাঁতার কেটে ঘরে যাওয়ার আগে লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন, ‘মোমেন্টাম ধরে রাখতে চায় গোটা দল। রিদম নষ্ট করা চলবে না। ছেলেরা ওইভাবে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে চায়।’ কলকাতাতেই ডু’প্লেসিসদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কটকে ভারতীয় ব্যাটিং শক্তিকে উড়িয়ে দেওয়া অ্যালবি মর্কেলের ভাই মরনি মর্কেল। মঙ্গলবার সকালেই হোটেলে ঢুকে পড়েছেন মরনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দুবাই হয়ে। একদিনের সিরিজ শুরু হওয়ার আগে কলকাতা থেকেই মরনির প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে। ভুলে যাবেন না, নাইট রাইডার্সের সুবাদে কলকাতা যে মরনির দ্বিতীয় বাড়ি।
৭ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি