বুধবার, ০৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:১৫:০৭

হিমালয় প্রান্তেই শেষ হচ্ছে ধোনি রাজত্ব!

হিমালয় প্রান্তেই শেষ হচ্ছে ধোনি রাজত্ব!

স্পোর্টস ডেস্ক: টি-২০তে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাহিন্দ্র সিং ধোনির ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্যর গল্প গাঁথাই বেশি। তারপরও তিনি বিভিন্ন সময়ে পড়েছেন নানা সমালোচনায়। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি, ওয়ানডে বিশ্বকাপ ট্রফি তার হাত ধরেই ভারতের ঘরে এসেছে। আর সেকারণেই মুলত ভারতীয় ক্রিকেটে তিনি এতোদিন রাজত্ব করে আসছেন। তবে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ও নিজের ফর্ম নিয়ে তিনি সম্প্রতি আবারো প্রশ্নের মুখে পড়েছেন।

টেস্ট ছাড়লেও ধরে রেখেছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটের নেতৃত্ব। সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারে ভারতের একের পর এক ব্যর্থতায় নানা সমালোচনা ধোনির নেতৃত্ব নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে ভারত অধিনায়কের পারফরম্যান্স নিয়েও। বিশ্বের অন্যতম সেরা ‘ফিনিশার’ তকমা যাঁর গায়ে, সেই ধোনি নিজেই যেন ‘ফিনিশে’র পথে! ধোনি উইকেটে থাকছেন অথচ দল জিততে পারছে না। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আগের সেই বীরত্বগাথা। লড়বেন কি, আগেই পিছিয়ে পড়ছেন। গত বেশ কিছু ম্যাচে এমন ছবিই ফুটে উঠছে।

বিষয়টি অস্বীকার করছেন না ভারতীয় অধিনায়ক। তবে তাঁর যুক্তি, যখন ব্যাট করতে নামেন, চাপ থাকে ভীষণ। হাতে বল থাকে না। বল থাকলেও কখনো আবার উইকেট থাকে না। ধোনি বললেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে কিছুটা কঠিন। কারণ, এটা ছোট দৈর্ঘ্যের ম্যাচ। মনে হয়, এ সংস্করণে ভীষণ মাথা খাটাই। নিজেকে চাপমুক্ত রেখে স্ট্রোক খেলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় যখন ব্যাট করতে নামি, ১৬ বা ১৭তম ওভার চলে। কিংবা চুতর্থ ও পঞ্চম ওভারে নামি, যখন বেশ কয়েকটি উইকেট পড়ে যায়। ভাবনায় থাকে, ১৩০ কিংবা এমন স্কোর গড়তে হবে। তখন কিছুটা ধীর গতিতে খেলি।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৯৯ রান করেও জিততে পারেনি ভারত। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণের পর সমালোচনার তির ছুটছে ধোনির দিকে। কেন ছন্দে থাকা অজিঙ্কা রাহানে ও অমিত মিশ্র দলের বাইরে? কেনই বা দলে অক্ষর প্যাটেল?
কেবল প্রোটিয়াদের বিপক্ষেই নয়, ধোনির নেতৃত্বে গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল থেকে সর্বশেষ কটক পর্যন্ত চার ম্যাচের প্রতিটি হেরেছে ভারত। ৪৯টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্বে দিয়ে ধোনি জিতেছেন ২৭টিতে, হেরেছেন ২০টি। টাই একটিতে। অসাধারণ ‘ফিনিশার’ হলেও তাঁর ফিনিশিংয়ের অভাবেই টি-টোয়েন্টিতে হারার জ্বলজ্বলে উদাহরণ রয়েছে ভারতের।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৮ রানের তাড়া করতে নেমেছিল ভারত। ৪১ বলে ৭০ করে জয়ের কাজ বেশ এগিয়ে দিয়ে এসেছিলেন বিরাট কোহলি। তবে ম্যাচটা কঠিন করে ফেললেন ধোনি। দরকার ছিল ৪২ বলে ৪৯। উইকেটে যুবরাজ সিং ও ধোনি। যখন রান তোলার ভীষণ তাড়া, ধোনি খেললেন ২৩ বলের ২২ রানের ইনিংস। ছক্কা নেই একটিও। চার মাত্র দুটি। ভারত হারল ১ রানে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে বার্মিংহামে ইংলিশদের বিপক্ষে ১৮১ রানের লক্ষ্য ছিল ভারতের। কোহলির ব্যাট থেকে এল ৪১ বলে ৬৬। একপর্যায়ে ভারতের দরকার ছিল ৩৫ বলে ৫০। রায়না-ধোনি উইকেটে। রায়না ফিরে গেলে ছন্দে থাকা আম্বাতি রাইডুকে অপেক্ষায় রেখে রবীন্দ্র জাদেজাকে নামালেন। জাদেজা ফেরার পর শেষ সাত বলে তিনটি সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি। হয়তো নিজের কাছেই স্ট্রাইক রাখতে চেয়েছিলেন। শেষ ২ বলে দরকার ছিল ৫ রান। ভারতীয়রা বড় আশা নিয়ে যখন ‘মাস্টার ফিনিশার’ ধোনির দিকে তাকিয়ে, নিতে পারলেন ১ রান। ভারত হারল ৩ রানে।

এ ম্যাচগুলোয় একটি চিত্র স্পষ্ট। কোহলি যেখানে খেলছেন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে, ধোনি তখন ব্যাকফুটে! টেস্টে কাঁধে দায়িত্ব ওঠার পরই স্পষ্ট, সীমিত ওভারেও ভারতের ভবিষ্যৎ নেতা কোহলিই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নতুন নেতৃত্ব, বাজে ফর্ম ও প্রশ্নবিদ্ধ নেতৃত্ব, সব মিলিয়ে ধোনি কি তবে ‘ফিনিশিং লাইনে’র দিকেই এগোচ্ছেন? তা-ই যদি হয়, ধোনির মেয়াদ তবে কত দিন? কারও কারও মতে, আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই হতে পারে মাহির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের যতি পড়ার যথার্থ সময়। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
৭ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে